বাজার ব্যবস্থাপনায় গতি আনতে হবে

| সোমবার , ২৭ ডিসেম্বর, ২০২১ at ৬:২৮ পূর্বাহ্ণ

সাম্প্রতিক সময়ে দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। সবচেয়ে কৌতূহলোদ্দীপক ও রহস্যময় হলো চালের দাম বাড়ার ঘটনা। কেন বাড়ছে চালের দাম তা নিয়ে এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত কোনো পক্ষই জুতসই ও কার্যকর কোনো কারণ হাজির করতে পারেনি এবং বছরের ঠিক এই সময়ে আমাদের দেশে চালের দাম বাড়ার ঘটনা নিকট-অতীতে ঘটার কোনো নজির নেই। এমনকি আন্তর্জাতিক বাজারেও চালের দাম আমাদের দেশের তুলনায় কম। চারটা দেশ ভারত, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনামের কথা তো আঙুলের কড়ে গুনেই হাজির করা যায়। দেশে এ মুহূর্তে ধান-চালের কোনো সংকট নেই। বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে এ বছর।
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ছে যেভাবে বাড়ছে, তা উদ্বেগজনক বলছেন বিশেষজ্ঞরা। এতে চাপ বাড়ছে মানুষের ওপর। বাজার ব্যবস্থাপনায় সুশাসনের অভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না বলে মনে করে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।
সংস্থাটি বলেছে, করোনা পরিস্থিতি থেকে এখনো পরিত্রাণ মেলেনি। তাই দারিদ্র্যসীমার নিচে অবস্থান করা মানুষদের জন্য নতুন করে আরেকটি প্রণোদনা প্যাকেজ জরুরি। চার সদস্যের একটি পরিবারে চাল, ডাল, আলু, তেল, মাছসহ মাসে মোট ৭ হাজার ২৯৭ টাকা প্রয়োজন। গরিব মানুষদের জন্য আরও বেশি সময় ধরে টাকার পরিমাণ বাড়িয়ে আড়াই হাজার টাকার পরিবর্তে ৮ হাজার টাকা প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণার প্রস্তাব দিয়েছে সিপিডি।
চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসের অর্থনৈতিক অগ্রগতি পর্যালোচনা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সিপিডি আরও বলেছে, সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনার উৎসগুলো সংকুচিত হয়ে আসছে। প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতাও সংকুচিত হয়ে আসছে। কঠিন হয়ে উঠছে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য অর্জন। বিদেশ থেকে যা ঋণ মিলছে, তা চলে যাচ্ছে প্রকল্পের পেছনে। বাজেট সহায়তার জন্য টাকা মিলছে না।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরের অক্টোবর পর্যন্ত রাজস্ব আদায়ের হার ভালো। তবে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে অন্তত ৩০ শতাংশ হারে আদায় করতে হবে এনবিআরকে, যা আদায় করা কঠিন। ব্যক্তিগত ঋণপ্রবাহের কিছুটা উন্নতি হলেও লক্ষ্যমাত্রা অনেক ওপরে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে সরকারি টাকা খরচ হলেও বিদেশিদের ঋণ কাঙ্ক্ষিত হারে খরচ হচ্ছে না। সবচেয়ে দুঃখজনক হলো, চার মাসে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এডিপি বাস্তবায়নের হার মাত্র ৬ শতাংশ।
ড. কাজল রশীদ শাহীন তাঁর এক লেখায় লিখেছেন, করোনাকালে পৃথিবীর কোথাও এভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের গণহারে দাম বেড়ে যাওয়ার নজির সম্ভবত নেই। ইন্টারনেটের বদৌলতে সারা পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তের খবর হামেশাই সংগ্রহ করা কোনো ব্যাপারই নয়। কোন দেশে কী ঘটছে আর কী হচ্ছে তা কারোরই অজানা বা অজ্ঞাত নয়। বিভিন্ন দেশ যখন করোনা কোভিড অতিমারী মোকাবিলায় তার নাগরিকদের জন্য নানাবিধ সুযোগ-সুবিধা প্রদানে সদাতৎপর। তখন আমাদের দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়ার ঘটনা বেদনাদায়ক বৈকি।
এ সময় অর্থনীতির বৃহত্তর স্বার্থে যদি কোনো জিনিসের দাম বাড়াতেই হয়, তা হলে সেসব জিনিসের দাম বাড়ানো উচিত যেগুলোর সঙ্গে সমাজের উপরতলার মানুষের সরাসরি যুক্ততা রয়েছে। যেসব জিনিসের সঙ্গে সাধারণ মানুষের বেঁচে থাকার সম্পর্ক সেসবের দাম বাড়ানোর অর্থ হলো প্রকারান্তরে তাদের আরও বেশি দুঃখ-কষ্ট, বেদনা ও উপোসের দিকে ঠেলে দেওয়া। এতে তাদের ভাতের হাঁড়িতে টান পড়ে, আলুভর্তায় একটু তেল দিয়ে সাতবার ভাবতে হয়। এরা সংগঠিত নয় বলে, প্রভাব বিস্তারে অপারগ হওয়ার কারণেই কি সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল শুধু কথার ফুলঝুরি ছুটোয়, বিপরীতে চালের দাম বাড়ার রহস্য কূলকিনারহীন অবস্থাতেই থেকে যায়! সরকারের কাজ কিন্তু অন্নহীনে অন্ন দেওয়া, বিপদাপন্নকে বিপদমুক্ত করা, তেলা মাথায় তেল দেওয়া নয়।
চালের চাহিদা ও সরবরাহ নিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলেন, কতিপয় গোষ্ঠী চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। কিন্তু বাজার নিয়ন্ত্রণে নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাগুলোর কার্যক্রম দেখা যাচ্ছে না। করোনা-পরবর্তী সময়ে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার টেকসই হচ্ছে না। টেকসই না হওয়ার কারণ হলো, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার অস্থির। বিশেষ করে খাদ্যপণ্যের। তাই বাজার ব্যবস্থাপনায় গতি আনতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে ভাঙা রাস্তা সংস্কারে আধুনিক প্রযুক্তি উদ্বোধন
পরবর্তী নিবন্ধসীতাকুণ্ড ও রামুতে দুস্থদের মাঝে সেনাবাহিনী প্রধানের কম্বল বিতরণ