প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত শুক্রবার গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, আসন্ন পবিত্র রমজান মাসে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের কোনো সংকট হবে না। তিনি দেশবাসীকে আশ্বস্ত করে বলেন, রমজানে কোনো কিছুর (অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের) অভাব হবে না। ইতোমধ্যেই সব ব্যবস্থা করা হয়েছে। কোনো সমস্যা হবে না। তবে নিত্যপণ্য মজুদ করে কৃত্রিমভাবে দাম বাড়ানোর সঙ্গে সরকার উৎখাতের আন্দোলনে জড়িতদের যোগসূত্র দেখছেন বলে উল্লেখ করেন তিনি। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এগুলো যে হঠাৎ করে করা তা তো না, এটা পরিকল্পিতভাবে।
রোজার সময় বাজার নিয়ন্ত্রণের যে চ্যালেঞ্জ, সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রমজানে কিন্তু কোনো জিনিসের যাতে অভাব না হয়, ইতোমধ্যে সমস্ত কিছুর ব্যবস্থা করা আছে। এটা নিয়ে অনেকে কথা বলবে, কিন্তু কোনো অসুবিধা হবে না। রমজান তো কৃচ্ছ্রতা সাধনের জন্য, রমজানে একটু কম খায়। আমাদের দেশে রমজানে খাবার দাবারের চাহিদা একটু বেড়ে যায়। সাধারণত রমজানে যে বিষয়গুলো, যেমন ছোলা, খেজুর, চিনি, এগুলো নিয়ে বেশি চিন্তা। এগুলো পর্যাপ্ত আনার ব্যবস্থা আছে, এগুলো নিয়ে সমস্যা হবে না। সেই ব্যবস্থা অনেক আগেই করে রেখেছি। সংরক্ষণের ব্যবস্থা অনেক সময় ‘শাখের করাতের মত’ পরিস্থিতি তৈরি করে বলেও সংবাদ সম্মেলনে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, আমি একটা এলাকার কথা বলি, যেমন পাবনায় পেঁয়াজ উৎপাদন হয়, মাচা করে করে বাতাস দিয়ে রাখা হয়। আপনি জানেন, কৃষকরা কত চালাক, তারা কিন্তু ওই বাজারের দাম দেখে তারপরে ছাড়ে। মোবাইল ফোন সবার হাতে আছে, দামটা তারা ঠিকই খবর পেয়ে যায়, কোথায় কি দাম। দাম যদি না পায়, বাজারে ছাড়ে না। এটা অনেকটা শাখের করাতের মতো। আপনি উৎপাদন করবেন, কৃষক উৎপাদন করবে, উৎপাদিত পণ্যটা সে বাজারজাত করবে, আপনি যদি এখন বেশি দাম কমাতে যান, কৃষক তার মূল্য পাবে না। আবার দাম বাড়লে যারা নির্দিষ্ট আয়ে চলতে হয়, তাদের জন্য কষ্ট। প্রত্যেক বিভাগে আলাদা আলাদা পণ্য সংরক্ষণের জন্য ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানান সরকারপ্রধান।
আসলে রমজানে যেসব পণ্যের চাহিদা বেড়ে যায়– সেগুলোর পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা করতে হবে।
আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে যেসব অঙ্গীকার করা হয়েছে– সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে সেসব বাস্তবায়নে কর্মপরিকল্পনা নিতে এবং বাস্তবায়ন ও মনিটরিং করারও নির্দেশনা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সেই নির্দেশনা মানা হলে বাজার পরিস্থিতির একটা ফলপ্রসূ চিত্র পাবো আশা করি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সাধারণভাবে দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি বা হ্রাস পাওয়ার বিষয়টি নির্ভর করে বাজারে পণ্যের চাহিদা ও সরবরাহের ওপর। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকলে পণ্যের দাম বাড়তেই পারে। কিন্তু আমাদের দেশে এ নিয়ম খাটছে না। দেখা যায়, পণ্যের পর্যাপ্ত আমদানি ও সরবরাহ থাকলেও তা বেশি দামে বিক্রি হয়। দ্রব্যমূল্যের এই অযৌক্তিক বৃদ্ধির পেছনে কাজ করে বাজার সিন্ডিকেট বা চক্র। তারা যোগসাজশের মাধ্যমে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। কখনো কখনো তারা পণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে। নানা অজুহাত তুলেও বাড়ানো হয় পণ্যের দাম। এ অবস্থায় বেশি দামে পণ্য ক্রয় করা ছাড়া ভোক্তাদের কোনো উপায় থাকে না।
এভাবে দ্রব্যমূল্য, বিশেষত নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি করা অপরাধ বটে। এজন্য সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের শাস্তি হওয়া উচিত; কিন্তু আমাদের দেশে এ ধরনের ঘটনা বিরল। ফলে কারসাজি করে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বিষয়টি যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। অসাধু ব্যবসায়ীদের এ প্রবণতা প্রতিরোধ করার দায়িত্ব সরকারের।
প্রধানমন্ত্রী যেভাবে অসাধু ব্যবসায়ীদের সতর্ক করে দিয়েছেন এবং প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সেভাবে অগ্রসর হলে বাজার পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে থাকবে বলে অভিজ্ঞমহল মনে করেন। অসাধু ব্যবসায়ীরা কায়েমি স্বার্থে ইচ্ছেমতো নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা চালালে সরকার যেন হাত গুটিয়ে বসে না থাকে, সেই প্রত্যাশা সাধারণ মানুষের। আমরাও চাই, বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা গ্রহণ করুক।