ইস্টার্ন রিফাইনারিতে বিটুমিন উৎপাদন কমে গেছে। এতে করে দেশের শত শত কোটি টাকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে বিটুমিনের সংকট তৈরি হয়েছে। দেশীয় বিটুমিনের সংকটকে পুঁজি করে তুলনামূলকভাবে নিম্নমানের বিটুমিন বাজার দখল করছে। আর এসব বিটুমিন দিয়ে পরিচালিত উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের স্থায়িত্ব নিয়ে সংশয় ব্যক্ত করা হয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, দেশে বছরে গড়ে ৮ লাখ টনের মতো বিটুমিনের চাহিদা রয়েছে। উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে বিটুমিনের চাহিদাও বাড়ে। এর মধ্যে দেশের জ্বালানি তেল পরিশোধনের একমাত্র রাষ্ট্রয়ত্ত্ব প্রতিষ্ঠান ইস্টার্ন রিফাইনারিতে (ইআরএল) বাই প্রোডাক্ট হিসেবে বিটুমিন উৎপাদিত হয়। বিদেশ থেকে আমদানিকৃত ক্রুড অয়েল পরিশোধন করে জ্বালানি তেল উৎপাদনের একেবারে শেষ পর্যায়ে বিটুমিন পাওয়া যায়। ইস্টার্ন রিফাইনারিতে বছরে ১২/১৩ লাখ টন ক্রুড অয়েল পরিশোধন করে। এই পরিশোধন প্রক্রিয়া থেকে বছরে গড়ে ৬০ হাজার টনের মতো বিটুমিন উৎপাদিত হয়। এর বাইরে দেশের চাহিদার পুরো বিটুমিনই বেসরকারিখাতে যোগান দেয়া হয়। দুবাইসহ মধ্যপ্রাচ্যের তেল সমৃদ্ধ দেশগুলো থেকে বেসরকারিভাবে বিটুমিন আমদানি করা হয়। এসব বিটুমিন ইস্টার্ন রিফাইনারির বিটুমিনের নিম্নমানের বলেও সূত্র জানিয়েছে।
ইস্টার্ন রিফাইনারিতে ৬০–৭০ ও ৮০–১০০ দুই গ্রেডের বিটুমিন উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে ৬০–৭০ গ্রেড বিশ্বের সেরা বিটুমিনের একটি। এখানে উৎপাদিত ৮০–১০০ বিটুমিনের মানও অনেক উন্নত। বিটুমিন ড্রামে এবং খোলা অবস্থায় বিক্রি করে বিপিসি। এর মধ্যে ৬০–৭০ গ্রেডের প্রতি ড্রামের মূল্য ১২ হাজার ৮০০ এবং বাল্কে প্রতি টনের দাম ৭৯ হাজার ৩০০ টাকা। ৮০–১০০ প্রতি ড্রামের মূল্য ১২ হাজার ৩০০ টাকা, বাল্কে প্রতি টনের মূল্য ৭৬ হাজার টাকা।
বিভিন্ন প্রকল্পে ইস্টার্ন রিফাইনারির বিটুমিনের প্রচুর চাহিদা। ঠিকাদারকে সরকার নির্ধারিত দরের বাইরেও মোটা অংকের অর্থ খরচ করে এই বিটুমিন যোগাড় করতে হয়। টাকা দিয়েও ইস্টার্ন রিফাইনারির বিটুমিন না পাওয়ার নজির অনেক। সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের জন্যও ইস্টার্ন রিফাইনারির বিটুমিন জুটে না। আর এই সুযোগে বেসরকারিভাবে আমদানিকৃত বিটুমিনের দখলে চলে গেছে পুরো বাজার।
বিদ্যমান পরিস্থিতির মাঝে নতুন দুঃসংবাদ হচ্ছে ইস্টার্ন রিফাইনারির বিটুমিন উৎপাদন কমে গেছে। বর্তমানে পরিশোধিত তেল বেশি আমদানি করা হচ্ছে। ক্রুড অয়েল আমদানির পরিমান কমেছে। ফলে আগের তুলনায় ইস্টার্ন রিফাইনারিতে বিটুমিনের উৎপাদন কমে গেছে। ফলে বাজারে বিটুমিনের সংকট প্রকট হয়ে উঠছে। বিটুমিনের অভাবে প্রায় প্রতিটি প্রকল্পেই সংকট দেখা দিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারেরা জানিয়েছেন। তারা বলেন, উন্নত মানের বিটুমিন না পাওয়ায় আমরা বাধ্য হয়ে বেসরকারিখাতে আমদানিকৃত বিটুমিন ব্যবহার করছি। ইস্টার্ন রিফাইনারির বিটুমিন উৎপাদন কমে যাওয়ায় বেসরকারি খাতের বিটুমিনের বাজার সম্প্রসারিত হচ্ছে বলেও তারা মন্তব্য করেন।
ইস্টার্ন রিফাইনারির দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা বিটুমিন উৎপাদন কমে যাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেছেন, এটি একটি সাময়িক সমস্যা। অচিরেই আমাদের বিটুমিন উৎপাদন স্বাভাবিক পর্যায়ে উন্নীত হবে। তবে আমরা দেশের চাহিদার মাত্র ১০ শতাংশ বিটুমিন উৎপাদন করি।