বাজারে প্রচুর গরু, দামও কমতির দিকে

মোরশেদ তালুকদার | রবিবার , ১৬ জুন, ২০২৪ at ৯:২২ পূর্বাহ্ণ

আপনারা জিতেছেন। গতকাল এর চেয়ে বেশি দামে কেনার ক্রেতা ছিল’। গরু বিক্রির টাকা গুনতে গুনতে ক্রেতাকে কথাগুলো বলছেন সৈয়দ বেপারি। গতকাল দুপুরে নগরের কর্ণফুলী পশুর হাটে এ দৃশ্য দেখা গেছে। সৈয়দ বেপারি আজাদীকে বলেন, গরুটি এক লাখ ৩৮ হাজার টাকায় বিক্রি করলাম। অথচ এতদিন দেড় লাখ টাকার ক্রেতা থাকলেও বিক্রি করিনি।

তাহলে আজ কম দামে কেন বিক্রি করলেন?’ এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ২১টি গরু এনেছি। এ পর্যন্ত মাত্র তিনটি বিক্রি হয়েছে। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে দাম ধরে রাখলে বাকিগুলো বেচতেই পারব না। তাই লস না করে কম লাভে বিক্রি করলাম। তাছাড়া শুরুতে দেড় লাখ টাকা দরদাম করলেও আজ (গতকাল) বেশিরভাগ ক্রেতা এক লাখ ৩০৩৫ হাজার টাকার বেশি বলেননি। এ সময় গরুটির ক্রেতা ইমরান বলেন, গত কয়েকদিন বাজারের যে অবস্থা তার সঙ্গে তুলনা করলে মনে হচ্ছে জিতেছি।

কর্ণফুলী পশুর বাজারের এ দৃশ্য থেকে স্পষ্ট গতকাল নগরে গরুর দাম ছিল সহনীয়। তুলনামূলকভাবে আগের কয়েকদিনের চেয়ে দাম কিছুটা কম ছিল। এতে সন্তুষ্ট কোরবানিদাতারা। লাভ কম হওয়ায় কিছুটা অসন্তুষ্টি থাকলেও গরু বিক্রি করে খুশি বেপারিরা। কর্ণফুলী পশুর হাটের পাশাপাশি বিবিরহাট বাজারেও সরেজমিনে গিয়ে একই চিত্র দেখা গেছে। এছাড়া আরো কয়েকটি বাজারের ইজারাদাররা বলছেন, দাম সহনীয় পর্যায়ে আছে। কিন্ত ক্রেতা কম, গরু বেশি। গরুর তুলনায় ক্রেতা কম থাকায় অল্প লাভে ছেড়ে দিচ্ছেন গরু বিক্রি করে দিচ্ছেন বেপারিরা। ইজারাদারদের দাবি, অনুমোদন ছাড়া শহরের অলিগলিতে অনেকগুলো হাট বসেছে। যেখান থেকে গরু কিনতে হাসিল দিতে হয় না, যা বৈধ বাজারে দিতে হয়। আবার বাজার থেকে গরু পরিবহনেরও একটা খরচ থাকে। তাই বেশিরভাগ কোরবানিদাতা বাসার আশেপাশে বসা ‘অবৈধ’ হাটগুলো থেকে গরু কিনে ফেলছেন। একইভাবে অনেকগুলো এগ্রো ফার্ম বা গরুর খামার গড়ে উঠেছে নগরে। সেখান থেকে গরু কিনলেও হাসিল দিতে হয় না। আবার কিছু কিছু এগ্রো ফার্ম থেকে গরু কিনলে ফ্রি হোম ডেলিভারি দেওয়া হচ্ছে। তাই ঝামেলা এড়াতে এগ্রো ফার্মমুখী হয়েছেন কোরবানিদাতাদের একটি বড় অংশ। যারা প্রভাব পড়েছে অনুমোদিত বাজারে।

গতকাল বাজার ঘুরে কয়েকজন ক্রেতার সঙ্গে আলাপকালে তারা জানিয়েছেন, আগামীকাল পবিত্র ঈদুল আজহা। আজ রোববার কোরবানি পশুর হাটের শেষ দিন। অতীতে কোরবানির আগের দিন বাজারে পশুর দাম বেশি কমে যায়, নয়তো অতিরিক্ত বেড়ে যায়। তাই বেশিরভাগ কোরবানিদাতা শেষ দিনের ঝুঁকি নিতে চান না। একদিন হাতে রেখেই কিনে ফেলেন কোরবানিযোগ্য গরু, মহিষ, ছাগল বা অন্য পশু। নগরে এবার সিটি কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনায় স্থায়ীঅস্থায়ী ১২টি পশুর হাট বসেছে। এর মধ্যে স্থায়ী তিনটি স্থায়ী হাট হচ্ছে সাগরিকা পশুর বাজার, বিবিরহাট গরুর হাট ও পোস্তারপাড় ছাগলের বাজার। অস্থায়ী হাটগুলো হচ্ছে মধ্যম হালিশহর মুনির নগর আনন্দ বাজার সংলগ্ন রিং রোডের পাশে খালি জায়গা, মোহরা ওয়ার্ডের জানালী রেলস্টেশন সংলগ্ন রেলওয়ের পরিত্যক্ত খালি জায়গা, কর্ণফুলী পশুর বাজার (নূর নগর হাউজিং এস্টেট অথবা বহদ্দারহাট এক কিলোমিটার হতে শাহ আমানত ব্রিজের উত্তর পাশ পর্যন্ত), ৪১ নং ওয়ার্ডের বাটারফ্লাই পার্কের দক্ষিণে টিকে গ্রুপের খালি মাঠ, ৪০ নং উত্তর পতেঙ্গা ওয়ার্ডের পূর্ব হোসেন আহম্মদ পাড়া সাইলো রোডের পাশে টিএসপি মাঠ ও একই ওয়ার্ডের মুসলিমাবাদ রোডের সিআইপি জসিমের খালি মাঠ, ২৬ নং ওয়ার্ডের বড়পোল সংলগ্ন গোডাউনের পরিত্যক্ত মাঠ, ৩ নং পাঁচলাইশ ওয়ার্ডের ওয়াজেদিয়া মোড় এবং ৩৯ নং দক্ষিণ হালিশহর ওয়ার্ডের আউটার রিং রোডস্থ সিডিএ বালুর মাঠ।

এবার নগরের হাটগুলোতে কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, মাগুর, সাতক্ষীরা, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, কুমিল্লা, নাটোরসহ অন্যান্য এলাকা থেকে গরু এনেছেন বেপারিরা। আছে চট্টগ্রামের হাটহাজারী, পটিয়া, আনোয়ারা ও বাঁশখালী থেকে নিয়ে আসা গরুও। স্থানীয় বিভিন্ন খামারে হৃষ্টপুষ্টকৃত প্রচুর গরুও আনা হয়েছে বিক্রির জন্য।

ইজারাদার নিয়োগ দিতে না পারায় বিবিরহাট পশুর হাট থেকে এবার খাস কালেকশনের মাধ্যমে রাজস্ব আদায় করছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক), যা মনিটরিং করছেন স্থানীয় কাউন্সিলর মোবারক আলী। আজাদীকে তিনি বলেন, আজ (গতকাল) ভালো বেচাকেনা হচ্ছে। দুপুর থেকে বিকিকিনি বেড়েছে। বাজারে প্রচুর গরু আছে। দামও গত দুদিনের চেয়ে সহনীয় মনে হচ্ছে। এতদিন বেপারিরা বেশি লাভের আশায় হয়তো গরু ছাড়েননি। আবার সময় থাকায় এবং বাসাবাড়িতে গরুর রাখার সমস্যা থেকে হয়তো ক্রেতারা এতদিন কিনেননি। এখন কোরবানের সময় আর বেশি নেই। তাই অপেক্ষা না করে কোরবানিদাতারা কিনে ফেলছেন।

কর্ণফুলী পশুর বাজারের ইজারাদারের প্রতিনিধি মো. আরমান হোসেন বলেন, আজও প্রচুর গরু ঢুকেছে বাজারে। বেচাকেনাও ভালো হচ্ছে। আজকেও (গতকাল) চার হাজারের বেশি গরু বিক্রি হয়েছে। কোরবানির দিন সকাল পর্যন্ত বেচাকেনা চলবে বলে জানান তিনি।

উত্তর পতেঙ্গা ওয়ার্ডের পূর্ব হোসেন আহম্মদ পাড়া সাইলো রোডের পাশে টিএসপি মাঠ বাজারের ইজারাদার মো. সাইফুদ্দিন লিজয় আজাদীকে বলেন, বাজারে প্রচুর গরু, সে তুলনায় ক্রেতা কম। ক্রেতা কম থাকায় বেপারিরা গরু ছেড়ে দিয়েছেন। মাঝখানে দামও একটু পড়তির দিকে ছিল। এবার কী ধরনের গরু বেশি বিক্রি হয়েছে জানতে চাইলে বলেন, ছোট এবং মাঝারি ধরনের গরু বেশি বিক্রি হয়েছে। ৮০ হাজার টাকা থেকে দেড়দুই লাখ টাকা দামের গরু বেশি বিক্রি হয়েছে। বাজারটিতে সর্বোচ্চ ৭ লাখ টাকা দামের একটি গরু বিক্রি হয় বলে জানান তিনি।

সাগরিকা পশুর হাটের ইজারাদারের প্রতিনিধি আরিফুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, বাজারের অবস্থা এবার খুব খারাপ। বিক্রি অনেক কম হচ্ছে। গরুর তুলনায় ক্রেতা কম। গত নয় বছর ধরে কোরবানি পশুর হাটের ইজারার সাথে সম্পৃক্ত আছি। এবারের মতো অবস্থা কোনোদিন দেখিনি। অন্যান্য বছর শেষের দিকে এসে বিক্রি বেড়ে যায়। এবার হচ্ছে না। শুক্রবার যেভাবে বিক্রির আশা করেছিলাম সেভাবে হয়নি। আজও (শনিবার) প্রত্যাশিত বেচাকেনা হচ্ছে না। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে ইজারার টাকাও উঠবে না।

বাজারে ক্রেতা কম হওয়ার কী কারণ হতে পারে? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, যেখানে সেখানে প্রচুর অবৈধ বাজার বসেছে। অনেকে ১০/১৫টি গরু এনে অলিগলিতে বিক্রি করছেন। লোকজন বাসার কাছে গরু পেয়ে সেখান থেকেই কিনে নিচ্ছেন। কারণ বাজারে আসলে তো তাদের হাসিল দিতে হবে। এছাড়া খামারিদের কারণেও লোকজন বাজারমুখী কম হচ্ছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধহজের খুতবায় ফিলিস্তিনিদের রক্ষার ফরিয়াদ
পরবর্তী নিবন্ধভোট চুরি করে কেউ ক্ষমতায় টিকতে পারে না : প্রধানমন্ত্রী