আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, দ্রব্যমূল্য ওঠানামার পেছনে একটা সিন্ডিকেট সব সময়ই কাজ করে। শুক্রবার রাজধানীর ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক মতবিনিময় সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি। আওয়ামী লীগ টানা তিন মেয়াদে সরকারে আছে। তারপরও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সিন্ডিকেটের কাছে হেরে যাচ্ছে কি না, এমন এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘দ্রব্যমূল্য ওঠানামার পেছনে একটা সিন্ডিকেট সব সময় কাজ করে। তবে সরকার সিন্ডিকেটের কাছে হেরে যাচ্ছে, এ কথাটি ঠিক নয়। আপনি প্রতিবেশী সব দেশের দিকে তাকান, এই করোনা পরিস্থিতিতে বাজারমূল্য, কোথাও আমদানি-রপ্তানিতে আগের পর্যায়ে কেউ নেই এবং এখানে উৎপাদনেরও একটা ব্যাপার আছে।’
দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে জীবনযাত্রার সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড় এবং বাস্তব। একজন মানুষ তার পরিবার নিয়ে কিভাবে দৈনন্দিন জীবনকে নির্বাহ করবেন তা নির্ভর করে মানুষটির আয়, চাহিদা এবং দ্রব্যমূল্যের ওপর। প্রয়োজনীয় প্রতিটি পণ্যের মূল্য যখন সহনীয় পর্যায়ে এবং সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকে তখন সবার জীবন কাটে স্বস্তিতে। অন্যদিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য যখন সাধারণ মানুষের আর্থিক সঙ্গতির সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ হয়ে যায় তখন দরিদ্র এবং অতিদরিদ্র পরিবারে চলে অর্ধাহার, অনাহার এবং পারিবারিক অশান্তি। তাই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে একদিকে জনজীবনে নেমে আসে কষ্টের কালো ছায়া। অন্যদিকে মুনাফাখোরী, কালোবাজারীদের কারণে দেশে বিরাজ করে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি। বলা যায়, স্বাধীন দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের বলগাছাড়া অবস্থা দরিদ্র ব্যক্তিদের পক্ষে বজ্রাঘাততুল্য।
বর্তমানে দেশের অন্যতম আলোচ্য বিষয় নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি। মুনাফাখোর ও মজুতদারের কারণে খাদ্যদ্রব্য, চাল, ডাল, তেল, মরিচ, চিনি, দুধ থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় ও অপরিহার্য দ্রব্যগুলোর মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে প্রতিদিন এবং ক্রমে এসব পণ্য সংগ্রহ কঠিনতর হচ্ছে দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত মানুষগুলোর জন্য। সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার সীমাকে অতিক্রম করে অশ্বের ন্যায় দ্রুতগতিতে বেড়ে চলেছে প্রতিটি পণ্যের মূল্য।
আমরা জানি, নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখার লক্ষ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে দ্রব্যমূল্য পর্যালোচনা ও পূর্বাভাস সেল গঠিত হয়েছে অনেক আগে। এই সেল নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের উৎপাদন, চাহিদা, আমদানির পরিমাণ, মজুদ ও সংগ্রহ পরিস্থিতি এবং বিতরণ ব্যবস্থাসহ বিবিধ তথ্যের পর্যালোচনা এবং আভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাজার দরের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করে থাকে। এই কাজের অংশ হিসেবে এই সেল বিভিন্ন সংস্থা থেকে পণ্যের উৎপাদন, মজুদ, সংগ্রহ পরিস্থিতি ও বিতরণ ব্যবস্থা, পণ্যের স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারদর, বন্দরে পণ্য খালাশের পরিমাণ, পণ্যের এলসি খোলা ও নিষ্পত্তির তথ্য সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ পূর্বক নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে সরকারের করণীয় নির্ধারণে সহায়ক হিসেবে কাজ করে। তবু বিভিন্ন শ্রেণীর ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি করছেন নানা সময়ে। তাই সরকারকে কঠোর হাতে অতিলোভী অসাধু এসব ব্যবসায়ীকে দমন করতে হবে।
সরকার নির্ধারিত মূল্যে পণ্য বিক্রি হচ্ছে কিনা দেখতে হবে। কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আবদুর রাজ্জাক বলেছেন, সরকারের নির্ধারিত দামেই ব্যবসায়ীদের আলু-পেঁয়াজ বিক্রি করা উচিত। তিনি বলেন, আমরা আলুর দাম কমিয়ে একটা যৌক্তিক মূল্য ঠিক করে দিয়েছি। কোল্ড স্টোরেজ মালিকরা ১৬-১৭ টাকা কেজিতে আলু কিনেছেন, এখন ২৭ টাকা কেজিতে বেচবেন। এ দামটি আমরা অযৌক্তিকভাবে ঠিক করিনি, এটি অবশ্যই যৌক্তিক। এই যৌক্তিক দামের মধ্যেই তাদের আলু বিক্রি করা উচিত। আমরা বাধ্য হয়ে এই যৌক্তিক দাম নির্ধারণ করেছি, এটিকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করব। কিন্তু বাজার কি আসলে নিয়ন্ত্রণে আছে?
বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্যতালিকা টাঙানো এবং নির্ধারিত মূল্যে পণ্য বিক্রয় করা হচ্ছে কি না, সেটি পর্যবেক্ষণের জন্য সব বাজারে দ্রব্যমূল্য মনিটরিং-এর ব্যবস্থা করতে হবে। সরকার ও ব্যবসায়ীদের সদিচ্ছাই নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ করে দেশের সাধারণ মানুষের আরও একটু সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা প্রদানে যথেষ্ট ভূমিকা রাখতে সক্ষম। এ ছাড়া দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি রোধের জন্য সামাজিকভাবে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। দ্রব্যমূল্য ওঠানামার পেছনে যে সিন্ডিকেট কাজ করে, তা ভেঙে দিতে হবে।