বাজারে দেশি-বিদেশি টুপি আতর, চাহিদাও বেশ

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ৩০ এপ্রিল, ২০২২ at ৭:৫৮ পূর্বাহ্ণ

আমি এটাই নিব।’ সবুজ রঙের একটি টুপি হাতে নিয়ে বাবার কাছে বায়না ধরেছে পাঁচ বছর বয়সী জুনায়েদ। কিন্তু ছেলের পছন্দ করা টুপিটা সাইজে একটু বড়। তাই বাবা আকরাম হোসেন চাচ্ছেন অন্য একটি কিনে দিতে। শেষে অবশ্য অনেক বুঝিয়ে জুনায়েদকে অন্য টুপি কিনতে রাজি করানো গেল।

গতকাল শুক্রবার দুপুর আড়াইটার দিকে এ দৃশ্য দেখা গেছে নগরের আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ মার্কেটের একটি টুপির দোকানে। বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে দেখা গেছে, ছেলের পাশাপাশি নিজের জন্যও একটি টুপি কিনলেন আকরাম। টুপি কেনা শেষে একই দোকান থেকে নিলেন আতরও। দৈনিক আজাদীকে তিনি বলেন, ঈদের আনন্দের প্রধান আকর্ষণ ঈদের নামাজ। নামাজ পড়ার জন্য টুপি অপরিহার্য। এক্ষেত্রে নতুন টুপি না হলে অতৃপ্তি লাগে। তাই নিজের ও সন্তানের জন্য টুপি কিনলাম। সাথে আতরও।

আকরামসহ আতরটুপি কিনতে আসা একাধিক ক্রেতার সঙ্গে আলাপকালে তারা বলেছেন, ঈদ উদযাপনের অন্যতম অনুষঙ্গ নতুন টুপি ও আতর। ঈদের দিন জামাকাপড়, এমনকি জুতোও হবে নতুন। সেখানে নতুন টুপি না হলে তো চলবে না। তাই টুপি কিনতে আসা। এছাড়া নিত্যসময়ে বিভিন্ন পারফিউম ব্যবহার করলেও ঈদের দিনের সুগন্ধি হিসেবে আতরই সবচেয়ে জনপ্রিয়। তাই সবাই এখন ছুটছেন টুপি ও আতর কিনতে। ফলে দিন দিন ক্রেতাদের ভিড় বাড়ছে টুপি ও আতরের দোকানে। নির্দিষ্ট দোকানগুলোর বাইরে ফুটপাত থেকেও আতরটুপি কিনছেন অনেকে।

আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ মার্কেট আতরটুপি বিকিকিনির জন্য অধিক পরিচিত। এখানে ৬০ থেকে ৩ হাজার টাকা দামের টুপি বিক্রি হচ্ছে। একই দামের টুপি বিক্রি হচ্ছে রেয়াজুদ্দিন বাজারেও। আন্দরকিল্লার বিভিন্ন দোকানে ওমানি হ্যান্ডমেইড টুপি বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায়। মূলত এসব টুপি ওমানি টুপির আদলে বাংলাদেশে তৈরি করা, যা স্থানীয় বাজারের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি ওমানসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। কঙবাজারের টেকনাফ ও চকরিয়ায় হ্যান্ডমেইড তৈরি টুপিরও কদর আছে ক্রেতাদের কাছে। জালি টুপি হিসেবে পরিচিত এসব দেশি টুপি বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকায়। বাংলাদেশি বাগিস নামেও এক ধরনের টুপি আছে, যা আব্বাসী, ফিরোজি ও নুরানী নামে পরিচিত। এসব টুপি বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ২০০ টাকায়।

এছাড়া আন্দরকিল্লায় পাকিস্তানি হাতের বানানো টুপি ৬০০ টাকা, পাকিস্তানি নরমাল টুপি ২০০ টাকা, ইন্ডিয়ান মুম্বাই টুপি ৩০০ টাকা, ইন্দোনেশিয়ান টুপি ৫০০ টাকা, তুর্কি টুপি তিন হাজার টাকা, রুমি ক্যাপ ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

দেশিবিদেশি টুপি বিক্রির জন্য ক্রেতাদের মনে জায়গা করে নিয়েছে আয়াত স্টোর। নগরের চকবাজার গুলজার টাওয়ারে অবস্থিত দোকানটিতে গতকাল দেখা গেছে, ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। সবাই বাছাই করছেন পছন্দের টুপি। এখানে বিক্রি হচ্ছে পৃথক তিনটি রঙের অটোম্যান টুপি (রেপ্লিকা)। বিভিন্ন রঙের হ্যান্ডমেইড কাশ্মিরী ডিজাইনের পাকিস্তানি টুপি, গর্জিয়াস পাকিস্তানি হ্যান্ডমেইড টুপি।

আয়াত স্টোরে গুজরাতি টুপি বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা থেকে ২৫০ টাকায়। বিভিন্ন ধরনের পাকিস্তানি টুপি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকা থেকে ৯৫০ টাকায়। এছাড়া বাগিস ১২০ টাকা থেকে ৪৫০ টাকা, তুর্কি ৬০ থেকে ৯০০ টাকা, ক্যালিগ্রাফি ৬০ টাকা থেকে ৯০০ টাকা, মালয়েশিয়ান ৪৫০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা, কাশ্মিরী হ্যান্ডমেইড ১ হাজার টাকা থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এখানে চট্টগ্রামের হাটহাজারী ও কঙবাজারের চকরিয়ায় হাতে বোনা টুপিও বিক্রি হচ্ছে, যার দাম ১২০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা।

আয়াত স্টোরে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের আতর। এর মধ্যে আল রিহাবের নরমাল আতরের দাম ১২০ টাকা। তবে শোপিস ৫ হাজার টাকা এবং এর বেশি দামেরও আছে। এছাড়া আল নাইম ১০০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা, নাফিম ৪০০ টাকা থেকে ২ হাজার টাকা।

বিশ্বে দামি ব্র্র্যান্ডের আতরের একটি আবদুস সামাদ কোরাইশী। এ ব্র্যান্ডের প্রতি তিন এমএল আতরের দাম ১ হাজার ৫০০ টাকা থেকে শুরু হয়ে লাখ টাকার উপর আছে। সিলেট থেকে আসা অর্গানিক অয়েল বা আতরের দামও চড়া। এসব অয়েলের প্রতি তিন এমএলের দাম ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা। এটাতে কেমিক্যাল দেয়া হয় না বলে দাম বেশি। ভারতের আজমল ব্র্যান্ডের আতরেরও আধিক্য দেখা যাচ্ছে এবার। ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ১০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে এটি। আল হারমাইন ৩৪০ টাকা থেকে শুরু করে ১৫ হাজার টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে।

আতরের বাইরে সফট পাউডারি ঘ্রাণ আর মন মাতানো উচ্ছ্বাস এনে দিতে জুড়ি নেই বাখুরের। বাখুর জ্বালানো আরব্য সংস্কৃতি, যা জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।

আয়াত স্টোরের প্রশাসনিক কর্মকর্তা লোকমান হোসেন আজাদীকে বলেন, আতরটুপির পাশাপাশি এরাবিয়ান কালচার বাখুর ব্যবহারের প্রচলন বাড়ছে। এটা ইদানীং জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বাখুর বার্নার ও কাঠ ১ হাজার টাকা থেকে ৩ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

আন্দরকিল্লা মসজিদ মার্কেটের তাওহিদ পারফিউমের স্বত্বাধিকারী মো. ফয়সাল বিন তাওহীদ আজাদীকে বলেন, টুপির পাশাপাশি আতরও ভালো বিক্রি হচ্ছে। তিনি জানান, আহসান আল উদ ১০০ এমএল বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার টাকায়। এছাড়া আল হারামাইনের তিন এমএল ১৫০ টাকা, সুরাতি ১৫০ টাকা, সেঞ্চুরিয়ান ১৫০ টাকা, আমীর আল ঈদ ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তিনি বলেন, আতর সারা বছরই বিক্রি হয়। বাংলাদেশে আতর ব্যবহারকারীর সংখ্যা আগের চেয়ে বেড়েছে। বাংলাদেশে যেসব টুপি উৎপাদন হয়ে বিদেশে রপ্তানি করা হচ্ছে সেখানে সরকারি সুযোগসুবিধা বৃদ্ধি পেলে খাতটির মাধ্যমে দেশের রাজস্ব বাড়বে বলে জানান তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধইসলামের মৌলিকত্বকে ধারণ ও চর্চা করতে হবে : মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধসাংবাদিকদের শ্রমিক বানিয়েছিল বিএনপি : তথ্যমন্ত্রী