বাজারে কারসাজি হলে ব্যবস্থা নিতে র‌্যাবকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ

জাল নোটের বিস্তার রোধে নজরদারি বাড়ানোর আহ্বান

| বৃহস্পতিবার , ৭ মার্চ, ২০২৪ at ৭:৫৮ পূর্বাহ্ণ

রোজার মাসে যারা কারসাজির মাধ্যমে নিত্যপণ্যের বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ানর‌্যাবের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, রমজান হচ্ছে সংযমের মাস। সংযমকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমরা দেখি কিছু অসাধু ব্যবসায়ী আছে, যারা সংযমের পরিবর্তে আরো লোভী হয়ে পড়ে। যে পণ্যগুলো আমাদের প্রয়োজন সেগুলো মজুদ করে রাখে, সেগুলো দাম বৃদ্ধি করে, নানারকম কারসাজি করে থাকে। এই অসাধু ব্যবসায়ী এবং পাশাপাশি যারা চোরাকারবারি তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের ২০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল বুধবার কুর্মিটোলায় র‌্যাব সদরদপ্তরে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিচ্ছিলেন শেখ হাসিনা। খবর বিডিনিউজের।

ঈদ সামনে রেখে জাল নোটের বিস্তার রোধে নজরদারি বাড়ানো এবং অভিযান অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ঈদ এলেই জাল মুদ্রার সরবরাহটা বেড়ে যায়। সেসব বিষয়ে নজরদারি আরো বাড়াতে হবে। যদিও এর ওপর অভিযান চলছে, এই অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে।

জঙ্গিবাদসন্ত্রাস দমনে র‌্যাবের ভূমিকার প্রশংসা করে শেখ হাসিনা বলেন, ঘোষণা দিয়েছিলাম, জঙ্গিবাদ সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নেব। আমি ধন্যবাদ জানাই, র‌্যাবের সকল সদস্যকে, তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিভিন্নক্ষেত্রে সাহসী ভূমিকা রেখেছেন। জঙ্গিবাদ দমনে তারা বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন, এজন্য র‌্যাবের সকল সদস্যকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। দেশে জঙ্গিবাদের একটি ঘটনার সাথে সাথে তা আমরা মোকাবিলা করেছিলাম। সেটি হলি আর্টিজানের ঘটনা। এরপর থেকে আমাদের দেশে কিন্তু আর কোনো বড় ধরনের ঘটনা ঘটতে পারেনি। কারণ আইনশৃঙ্ক্ষলা বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা, বিশেষ করে র‌্যাবের জঙ্গিবিরোধী ভূমিকার জন্য আমি প্রশংসা করি।

জঙ্গিবাদের পাশাপাশি সন্ত্রাস, অবৈধ অস্ত্র, মাদক, চরমপন্থা, জলদস্যু, বনদস্যুদের মত সমস্যা মোকাবেলার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একে একে প্রতিটি ক্ষেত্রে কিছু জায়গায় অ্যাকশন নিয়ে, কিছু জায়গায় বুঝিয়ে, প্রতিটি ক্ষেত্রেই কিন্তু সাফল্য অর্জন করেছি। আজকে সুন্দরবন বনদস্যু মুক্ত হয়েছে। যারা আত্মসমর্পণ করেছে, তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি। এক সময় দেশের দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলে চরমপন্থিদের দৌরাত্ম্যের কথা মনে করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ’৯৬ সালে সরকারে এসে অনেককে আত্মসমর্পণ করিয়েছিলাম। এখন সবাইকে আত্মসমর্পণ করিয়ে আমরা জীবন জীবিকার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। সেই ক্ষেত্রে আমাদের আইনশৃক্সখলা বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা এবং র‌্যাবের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। আজকে আমরা দেশের যে অর্থনৈতিক উন্নতি করতে পেরেছি, এই উন্নতিটা কিন্তু হয়েছে এই সব কর্মকাণ্ড যথাযথভাবে নিষ্ক্রিয় করতে পেরেছি বলেই। জঙ্গি নেতাদের গ্রেপ্তার করা, তাদের বিভিন্ন আস্তানা ধ্বংস করা বা এই ধরনের ঘটনা ঘটার পর র‌্যাব অভিযান যেভাবে চালিয়েছে; আজকে আমাদের দেশে একটা শান্তি, স্বস্তি ফিরে এসেছে। বিশেষ করে পাহাড়ি অঞ্চলে যে অবস্থাটা সৃষ্টি হয়েছিলো, বিচ্ছিন্নতাবাদী ও জঙ্গি সংগঠনের চেষ্টা করা হয়েছিল। সেখানেও আমরা ব্যবস্থা নিতে পেরেছি।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের নিজের দেশের মধ্যে নিজেরা কেন আত্মঘাতী সংঘাতে লিপ্ত হব? এই আত্মঘাতী সংঘাত থেকে মানুষকে মুক্ত করা, সেটাই আমাদের লক্ষ্য । সেটি নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এক্ষেত্রে র‌্যাবের ভূমিকা রয়েছে। পাহাড়ি অঞ্চলে অভিযান পরিচালনা করা এবং জঙ্গিদের নেটওয়ার্ক ধ্বংস করা, এই কাজটা অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে র‌্যাব করতে পরেছে। আমাদের দেশে কিছু প্রাকৃতিক দুর্যোগ আছে, মনুষ্য সৃষ্ট দুর্যোগ আছে। তবে দুঃখের বিষয়, আমাদের বিরোধী দল নামে সংগঠন, তারাও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড লিপ্ত হয়। ২০১৩ সালে তাদের যে ভূমিকাৃ কীভাবে অগ্নিসন্ত্রাস করে মানুষকে হত্যা করেছে। ট্রাকে বাবার সামনে ছেলে পুড়িয়ে দিয়েছে। চলন্ত ট্রেনে মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে। পুলিশ পিটিয়ে মেরেছে। পুলিশ হাসপাতালে আগুন দেয়া, বিচারপতির বাড়িতে আগুনএই ধরনের বীভৎস ঘটনা আমরা ঘটাতে দেখেছি। এই ধরনের ঘটনাগুলো মোকাবিলা করা এবং সেগুলোর আসামিদের গ্রেপ্তার করার ক্ষেত্রে ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করাতে র‌্যাবসহ আইনশৃক্সখলা বাহিনী সক্রিয় ছিল।

র‌্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্র যে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে, তার সমালোচনাও করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, একটি বড় দেশ হঠাৎ করে র‌্যাবের ওপর স্যাংশন (নিষেধাজ্ঞা) দিল। বিশেষ করে র‌্যাবের ডিজিসহ কর্মরত অনেকের ওপর। সেখানে আমার প্রশ্ন ছিল, যারা জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, জলদস্যু, বনদস্যুএদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করা বা মানুষের অধিকার রক্ষায় যারা কাজ করেছে, তাদের ওপর কীভাবে স্যাংশন আসে? তাদের অপরাধ কী? কেউ যদি অপরাধ করে, কেউ তো আইনের ঊর্ধ্বে নয়। সে যে কোনো সংস্থার লোক হোক, তাকে আমরা আইনের আওতায় আনি এবং আমরা তার বিচারও করি, ভবিষ্যতেও হবে। দেখতে হবে তারা যথাযথ দায়িত্ব পালন করছে কি না। তারা দেশের মানুষের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য যখন কোনো অপরাধী শনাক্ত করবে, ধরবে আর তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে আর সেজন্য আরেকটা দেশ এসে স্যাংশন দেবে এটা আমাদের কাছে কখনও গ্রহণযোগ্য নয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবহদ্দারহাটে ‘বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ’ স্মৃতি স্মারক নির্মাণ
পরবর্তী নিবন্ধকাপ্তাই রাস্তার মাথায় কেন বারবার সংঘর্ষ