আইন থাকলেও প্রয়োগ না থাকায় নিত্যপণ্যের বাজার ‘জোটবদ্ধ ব্যক্তি-গোষ্ঠীর’ নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে বলে মন্তব্য এসেছে উচ্চ আদালত থেকে। আর সেটাই জিনিসপত্রের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে দেখছে হাই কোর্ট। বাজারে কোনো ‘সিন্ডিকেট নেই’ বলে মন্ত্রীদের দাবি করে আসার মধ্যে গতকাল সোমবার এক রিট আবেদনের শুনানিতে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি মো. মনিরুজ্জামানের হাই কোর্ট বেঞ্চ থেকে এই মন্তব্য আসে। খবর বিডিনিউজের। সয়াবিন তেলের দাম বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে করা এই রিট আবেদনে আদালত কোনো আদেশ না দিলেও বলেছে, প্রতিযোগিতামূলক বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার আইন করলেও এখন পর্যন্ত বিধি না করায় আইনের প্রয়োগ বা বাস্তবায়ন সম্ভবপর হচ্ছে না। আর এর সুযোগ নিচ্ছে জোটবদ্ধ ব্যক্তি-গোষ্ঠী।
সয়াবিন তেলের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে মনিটরিং সেল গঠন এবং নীতিমালা তৈরি করার আদেশ চেয়ে গত ৬ মার্চ রিট আবেদনটি করেন সুপ্রিম কোর্টের তিন আইনজীবী সৈয়দ মহিদুল কবির, মনির হোসেন ও মোহাম্মদ উল্লাহ। সোমবার আদেশ দেওয়ার কথা থাকলেও রাষ্ট্রপক্ষের শুনানি শেষে আদালত আবেদনটি সংশোধন করে আনতে বলে আজ মঙ্গলবার পর্যন্ত শুনানি মুলতবি রেখেছে। গত রোববার রিট আবেদনকারী মহিদুল কবির শুনানি করেছিলেন। সোমবার আবেদনের বিরোধিতা করে বক্তব্য রাখেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল প্রতিকার চাকমা।
তিনি বলেন, বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে, ইতোমধ্যে সয়াবিন তেলসহ অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার দর নিয়ন্ত্রণে এসেছে। সরকার বাজার তদারকিতে টাস্কফোর্স গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফলে এ রিটে রুল জারি করা ঠিক হবে না।
তখন বেঞ্চের এক বিচারক বলেন, প্রতিযোগিতাবিরোধী জোট কীভাবে নিরূপণ করছেন? ২০১২ সালে প্রতিযোগিতা আইন হয়েছে। এখন পর্যন্ত এর বাস্তবায়ন নেই। প্রতিযোগিতাবিরোধী চুক্তি, কর্তৃত্ব বন্ধ করতে এখন পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। তখন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
বিচারক প্রতিযোগিতা আইনের তৃতীয় অধ্যায়ের ১৫ ধারা উল্লেখ করে বলে, এ আইনে মনোপলি (একচেটিয়া) ব্যবসা বন্ধের কথা বলা আছে। সরকার বিধি-নীতিমালা করছে না। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এ কারণে আইনের প্রয়োগ নাই। এরকমটা সব সময় হয়ে আসছে। আপনারা যদি কঠোর হতেন, তবে বাজার লাগাম ছাড়া হত না। আগে থেকে সচেষ্ট থাকলে জনসাধারণের ভোগান্তি হত না।
বিচারক বলেন, একচেটিয়া ব্যবসা একটা গ্রুপের কাছে চলে যাওয়ায় এমনটা হচ্ছে। অথচ এটি বন্ধ করতে রেগুলেটরি বডি (নিয়ন্ত্রক সংস্থা) গঠনের কথা আইনে বলা আছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা থাকলে আমাদের কাছে (আদালতে) আসতে হত না। আমরা চাচ্ছি, এগুলো হোক। আমাদের সামনে আইন বাস্তবায়নের দৃশ্যমান কোনো উদাহরণ নাই। প্রতিকার চাকমা তখন আবার বলেন, সরকার পদক্ষেপ নিচ্ছে, সক্রিয় আছে। বাজার এরই মধ্যে নিয়ন্ত্রণে এসেছে।
এদিকে রিট আবেদনকারী আইনজীবীকে উদ্দেশ করে বিচারক বলেন, যে কোনো সময় যে কোনো খাদ্যপণ্যের দাম বাড়তে পারে। কিন্তু আপনাকে নিত্য প্রয়োজনীয় সব পণ্যের বিষয়ে আসা উচিৎ। আপনার রিট আবেদনের আরজি যথাযথ হয়নি। এরপর আদালত রিট আবেদনটি সংশোধন করে নিয়ে আসতে বলে শুনানি পরবর্তী দিন (আজ) পর্যন্ত মুলতবি রাখে।