বিদেশি মুদ্রার বিপরীতে স্থানীয় মুদ্রা টাকার বিনিময় হার নির্ধারণে বাজারভিত্তিক পদ্ধতি অনুসরণ করতে বাংলাদেশকে ফের তাগাদা দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল–আইএমএফ। অর্থনীতির আঞ্চলিক পূর্বাভাস দিয়ে গতকাল মঙ্গলবার অনলাইনে এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থার এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের পরিচালক কৃষ্ণা শ্রীনিবাসন বলেন, মুদ্রা বিনিময় হার নমনীয় করার পদক্ষেপ নিলে বাংলাদেশ আর্থিক হিসাবে ইতিবাচক ফল পাবে। ভার্চুয়াল এ সংবাদ সম্মেলনে আইএমএফ এর ‘রিজিয়নাল ইকোনোমিক আউটলুক’ প্রকাশ করা হয়। খবর বিডিনিউজের।
২০২২ সালের প্রথম দিকে বাংলাদেশ ঋণের আবেদন করার পর থেকেই আর্থিক খাতের বিভিন্ন নীতি সংস্কারের পরামর্শ দিয়ে আসছে আইএমএফ। পারস্পরিক আলোচনার ভিত্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংক বেশ কিছু পদক্ষেপও নিয়েছে। বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াতে গত দেড় বছরের বেশি সময় ধরে নানামুখী উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ। আমদানি নিয়ন্ত্রণ করার পরও রিজার্ভ বাড়ছে না।
আইএমএফ এর সঙ্গে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ চুক্তিতে গিয়ে প্রথম ও দ্বিতীয় কিস্তি হাতে পেয়েছে বাংলাদেশ। তৃতীয় কিস্তি ছাড়ার আগে সংস্থার একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করছে। তার মধ্যেই বিনিময় হার নিয়ে নিজেদের প্রত্যাশা আবারও জানিয়ে দিল আন্তর্জাতিক ঋণদাতা সংস্থাটি। আর্থিক খাতে সংস্কারের অংশ হিসেবে মুদ্রা বিনিময় হার বাজারমুখী করার ওই পরামর্শ আইএমএফর সঙ্গে চুক্তির শর্তেও আছে।
গত ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর থেকে বিনিময় হার নির্ধারণ করে আসছে ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ (এবিবি) ও বাংলাদেশ ফরেন এঙচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা)। বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করেই তারা কাজটি করছে।
গত জানুয়ারিতে নতুন মুদ্রানীতির ঘোষণায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছিল, বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে এবিবি ও বাফেদার উপর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। গভর্নর বলেছিলেন, আগামী জুনের মধ্যে বিনিময় হার পুরোপুরো বাজারমুখী হবে। কিন্তু সেই ঘোষণা বাস্তবায়নের কোনো উদ্যোগ এখনো দেখা যাচ্ছে না।
বাংলাদেশের আর্থিক হিসাবে (ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট) এখনো ঘাটতিতে আছে জানিয়ে কৃষ্ণা শ্রীনিবাসন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এ ঘাটতি মেটাতে বাংলাদেশের উচিত হবে নমনীয় বা বাজারভিত্তিক বিনিময় হার চালু করা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের আট মাসে আর্থিক হিসাবে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৮৩৬ কোটি ডলার। এ ঘাটতি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় চার গুণ বেশি। অন্যদিকে চলতি হিসাবে ঘাটতি পূরণ করে ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে বাংলাদেশ। গত ফেব্রুয়ারি শেষে উদ্বৃত্ত আছে ৪৭৬ কোটি ডলার। এশিয়ার দেশগুলোতে মূল্যস্ফীতি কমতে শুরু করেছে জানিয়ে আইএমএফ বলছে, নিউ ইয়র্ক ফেডের সুদহার বৃদ্ধির বিষয়ে দক্ষিণ এশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর সতর্ক থাকতে হবে। স্থানীয় পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে তদারকি করতে হবে।
কোভিড–১৯ মহামারী এবং ইউক্রেইন–রাশিয়া যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এর প্রভাব এ অঞ্চলের অর্থনীতিতেও পড়েছে। সেদিকে ঈঙ্গিত দিয়ে কৃষ্ণা শ্রীনিবাসন বলেন, এই ধাক্কা থেকে অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার করতে হবে। টেকসই পুনরুদ্ধারের জন্য রাজস্বনীতির সংস্কার যেমন দরকার, তেমনই দরকার মুদ্রা বিনিময় হারকেও নমনীয় করা।
আইএমএফ পূর্বাভাস দিয়ে বলেছে, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ। গত ২০২২–২৩ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে সরকার ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে। অন্যদিকে আগামী ২০২৪–২৫ অর্থবছরের জন্য আইএমএফ বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন করেছে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ। আর এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর প্রবৃদ্ধি চলতি অর্থবছরে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ হতে পারে বলে মনে করছে সংস্থাটি।