দৈনিক আজাদীতে এক অবিশ্বাস্য খবরের শিরোনাম দেখে সাধারণ মানুষ বেশ আশ্বস্ত ও আনন্দিত হয়েছেন। শিরোনামটি হলো : ‘কমছে নিত্যপণ্যের দাম’। গত ৭এপ্রিল প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, চাক্তাই খাতুনগঞ্জে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে পইকারি পর্যায়ে প্রায় সব ভোগ্যপণ্যের বাজার নিম্নমুখী। রমজানের আবশ্যিক পণ্য অস্ট্রেলিয়ান ছোলা কেজিতে ৩ টাকা কমে এখন বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকায়। এছাড়া মিয়ানমারের ছোলা কেজিতে ৭ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ৬৮ টাকায়। মশুর ডাল ২ টাকা কমে গিয়ে বিক্রি হচ্ছে ৬৩ টাকা এবং মটর ডাল কেজিতে ৩ টাকা কমে গিয়ে বিক্রি হচ্ছে ৩৭ টাকায়। অন্যদিকে চিড়ার মণ ১৫০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৩৫০ টাকা এবং সেমাই প্রতি মণ ৫০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৪৫০ টাকায়। সাদা মটরের কেজি ২ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকা, চিনি (৫০ কেজি) ৫০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ১১০ টাকা, পেঁয়াজ কেজিতে ৫ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ২৫ টাকা এবং আদা ১০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকায়। অপরদিকে ভোজ্যতেলের মধ্যে বেড়েছে পাম তেলের দাম। এছাড়া অপরিবর্তিত রয়েছে সয়াবিনের দাম। বর্তমানে পাম তেলে দাম মণপ্রতি ১৫০ টাকা বেড়ে গিয়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৯০০ টাকায়। এছাড়া সয়াবিন তেল প্রতিমণ বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ২০০ টাকায়। ব্যবসায়ীরা বলেন, পাইকারিতে প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম কমেছে। বাজারে লকডাউনের এখন তেমন কোনো প্রভাব নেই। তবে ব্যাংকিং লেনদেনের সময়সীমা কম হওয়ায় অনেক পার্টির থেকে টাকা পেতে সমস্যা হচ্ছে। মাত্র আড়াই ঘণ্টা লেনদেনের সময় আসলে কিছুই না। এভাবে চলতে থাকলে ব্যবসা বাণিজ্যে বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
আমরা দেখে আসছি, রমজান মাস আসার আগেই পণ্যমূল্য বাড়তে থাকে। এসময় অসাধু ব্যবসায়ীরা তাদের কারসাজির পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। অবৈধভাবে বাড়ায় মজুদ। সৃষ্টি করে কৃত্রিম সঙ্কট। বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রতি বছর রমজান এলেই জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যায়। এমনকি কিছু পণ্যের দাম ক্রেতার নাগালের বাইরে চলে যায়। অসাধু ব্যবসায়ীরা যেন ওঁৎপেতে থাকেন এ মাসের জন্য। এসব অসাধু ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে একাধিক বৈঠক করে সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরগুলো। কঠোর হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়, নেওয়া হয় নানা উদ্যোগও। কিন্তু অসাধু ব্যবসায়ীরা খুবই শক্তিমান, তারা সব সময়ই থাকেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। সরকারের পক্ষ থেকে রোজায় বাজার নিয়ন্ত্রণের হাঁকডাক দেওয়া হলেও বাজার অনিয়ন্ত্রিতই থাকে প্রতিবার। বাজার নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপ-প্রতিশ্রুতিগুলো কাগজে-কলমেই থেকে যায়। এমন পরিস্থিতিতে খবরের কাগজে দাম কমার শিরোনাম দেখে সাধারণ মানুষ যুগপৎ আনন্দিত ও বিস্মিত। এরকম দাম কমানোর রেওয়াজের জন্য ব্যবসায়ী সমাজ অভিনন্দন পাওয়ার যোগ্য। আমরা জানি, বাজার সিন্ডিকেট দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। যেসব পণ্যের দাম বাড়ার কথা নয় সেইসব পণ্যেরও দাম বাড়তে থাকে। যুক্তিসঙ্গত কোনো কারণ ছাড়াই বাড়তে থাকে দাম। ক্রেতাসাধারণের নাভিশ্বাস ওঠে। বাজারে গিয়ে পছন্দের পণ্যই চাহিদামতো কিনতে পারেন না অনেকেই। আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সঙ্গতি রাখতে গিয়ে জরুরি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র না কিনেই ঘরে ফেরেন। এতে সরকারের যেন কিছুই করার থাকে না। সরকার যেন একেবারেই অসহায়। সবকিছুর চাবিকাঠি যেন বাজার সিন্ডিকেটের হাতেই। এ অবস্থা যখন বিরাজ করছে চারদিকে, তখন নিত্যপণ্যের মূল্য কমতে থাকা অবিশ্বাস্য ব্যাপার।
অভিযোগ আছে,এই বাজার সিন্ডিকেটের সঙ্গে সরকারের নীতিনির্ধারকদের নিবিড় ও নিগূঢ় সম্পর্ক বিদ্যমান। সরকার যদি
সত্যি সত্যি বাজার সিন্ডিকেট ভাঙতে চায়, কিংবা বাজারে সিন্ডিকেটের রাজত্ব কায়েম করতে দেবে না, তাহলে বাজার সত্যিকারে স্থিতিশীল থাকতে বাধ্য। এজন্য লোকদেখানো অভিযান চালালে হবে না। সার্বক্ষণিক বাজার মনিটরিংয়ে থাকতে হবে। পণ্যের দাম বাড়ার পর দৌড়ঝাঁপ না করে যাতে দাম না বাড়ে, সে জন্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। সরবরাহের চেয়ে চাহিদা বেশি না হলে দাম কোনো অবস্থাতেই বাড়বে না।