বাঙালি জাতির মুক্তির স্বীকৃতি বিজয় দিবস

মহিউদ্দিন ইমন | সোমবার , ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ at ৬:০০ পূর্বাহ্ণ

১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় দিন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের মধ্যরাত থেকে শুরু হয়ে দীর্ঘ নয় মাস ধরে চলে এ দেশের মুক্তিযুদ্ধ। অবশেষে এই দিনে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি হানাদার মুক্ত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের বিজয় অর্জিত হয় এই দিনে। বাঙালি জাতি প্রথমবারের মত পেয়েছিল মুক্তির স্বাদ। এটা আমাদের নিকট অনেক বড় প্রাপ্তি।

১৯৭১ সালের রক্তঝরা সংগ্রামের পর ১৬ই ডিসেম্বরে মহান বিজয় সাধিত হয়েছে। কিন্তু এই স্বাধীনতা মূলত এই নয় মাসের ফসল নয়, এটা শুরু হয়েছে অনেক আগে। ১৯৪৭ সালের আগ পর্যন্ত আমাদের দেশ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল। প্রায় দু’শ বছর শাসনের পর ব্রিটিশরা ভারতবর্ষের স্বাধীনতা দিলে বাংলাদেশ হয় পাকিস্তান রাষ্ট্রের অংশ।

পাকিস্তান রাষ্ট্রটি ছিল দুটি আলাদা ভূখণ্ডে বিভক্ত। পূর্ববাংলা পরিচিত ছিল পূর্ব পাকিস্তান নামে। অন্যটি ছিল পশ্চিম পাকিস্তান। প্রথম থেকেই পাকিস্তানের শাসন ক্ষমতা ছিল পশ্চিম পাকিস্তানিদের হাতে। তারা পূর্ব পাকিস্তানিদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করত। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন এবং মাতৃভাষা প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে এদেশের মানুষ প্রথম তাদের স্বাধিকার প্রতিষ্ঠায় উদ্বুদ্ধ হয়। পশ্চিম পাকিস্তানিদের অত্যাচার, দুঃশাসন পূর্বপাকিস্তানের মানুষ মুখ বুজে সহ্য করেনি। ৬২, ‘৬৬এর ছাত্র আন্দোলন এবং ৬৯এর গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে তারা বুঝিয়ে দেয় বাঙালি কারো হাতে বন্দি থাকতে রাজি নয়। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভ করে পাকিস্তান রাষ্ট্র। বর্তমান বাংলাদেশ পূর্ব পাকিস্তান নামে তখন উক্ত রাষ্ট্রের একটি প্রদেশ ছিল পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের নেতৃবৃন্দ। তাদের দুঃশাসন ও অর্থনৈতিক শোষণে এদেশের মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। দীর্ঘ নয় মাস মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ১৬ ই ডিসেম্বর এদেশের চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়। বাঙালির চিরদিনের গৌরব, অসমসাহস, বীরত্ব ও আত্মদানে মহিমান্বিত অর্জন মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের দিন। ১৯৭১ সালের এই দিন দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী মরণপণ যুদ্ধের শেষে বিজয় ছিনিয়ে এনেছিল বীর বাঙালি। পাকিস্তানি হানাদার বর্বর ঘাতক সেনাবাহিনী অবনত মস্তকে অস্ত্র নামিয়ে রেখে গ্লানিময় আত্মসমর্পণে বাধ্য হয়েছিল। বিশ্ব মানচিত্রে লালসবুজের পতাকার স্থান পাওয়ার দিন আজ। যেসব বীর সন্তানের প্রাণের বিনিময়ে এই পতাকা ও মানচিত্র এসেছে, তাঁদের শ্রদ্ধা জানানোর মধ্য দিয়েই এই দিবসের মহিমা প্রকাশ পাবে।

প্রতি বছর ১৬ ডিসেম্বর আমাদের জীবনে নিয়ে আসে সংগ্রামী বিজয়ের স্মৃতি। জীবনকে গৌরবান্বিত তোলার শপথ এ পবিত্র দিনটি থেকেই আমাদেরকে গ্রহণ করতে হবে। বিজয় অর্জন বড় কথা নয়, তার সুফলকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়াই বড় কথা। ‘স্বাধীনতা অর্জন করার চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন’এ আপ্তবাক্যটিকে আমাদের ভুলে গেলে বিজয় দিবসের তাৎপর্য অর্থহীন হয়ে পড়ে। ত্রিশ লক্ষ মানুষকে যদি একের উপর এক শোয়ানো হয় তবে তার উচ্চতা হবে ৭২০ কিলোমিটার, যা মাউন্ট এভারেস্টের উচ্চতার ৮০ গুণ! ত্রিশ লক্ষ মানুষ যদি হাতে হাত ধরে দাঁড়ায় তবে তার দৈর্ঘ্য হবে ১১০০ কিলোমিটার, যা টেকনাফ হতে তেঁতুলিয়ার দূরত্বের চেয়েও বেশি!

ত্রিশ লক্ষ মানুষের শরীরে মোট রক্তের পরিমাণ ১.৫ কোটিলিটার, যা শুকনো মৌসুমে পদ্মা নদীতে প্রতি সেকেণ্ডে প্রবাহিত পানির সমান! তারপরও হয়তো আমরা কখনই বুঝবোনা যে কতটা মূল্য দিয়ে আমাদের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে! সবুজ আয়তক্ষেত্রের মাঝে লাল বৃত্তের জন্য আমাদের ভালোবাসা ঠিক যেন, নিজের মায়ের প্রতি ভালোবাসার মত হয় সেই কামনাই করি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিজয় দিবস : বাঙালির আত্মমর্যাদা প্রতিষ্ঠার দিন
পরবর্তী নিবন্ধপরাজয়ের ইতিহাস