বাঙালির প্রধান ও প্রাচীনতম উৎসবগুলোর অন্যতম নবান্ন

হাবিবুল হক বিপ্লব | শনিবার , ১৯ অক্টোবর, ২০২৪ at ১০:৩৬ পূর্বাহ্ণ

বিন্দু বিন্দু মুক্তোর মতো শিশির জমতে শুরু করেছে ঘাসের ডগায়, ধানের শীষের পরে। আদিগন্ত মাঠ জুড়ে এখন ধানের প্রাচুর্য। হলুদেসবুজে একাকার অপরূপ প্রকৃতি। চারদিকে ধূসর আবহ ঘিরে রাখছে। শেষ বিকালে কুয়াশার আবছা চাদর প্রকৃতিকে ঢেকে শিশিরের শব্দের মতো নামছে সন্ধ্যা। ‘সবুজ পাতার খামের ভেতর/ হলুদ গাঁদা চিঠি লেখে/কোন পাথারের ওপার থেকে/ আনল ডেকে হেমন্তকেআজ পয়লা কার্তিক। আবহমান বাংলায় ষড় ঋতুর পরিক্রমায় এলো হেমন্ত।

শরৎকালের পর কার্তিকঅগ্রহায়ণ মিলে হেমন্ত। নতুন ঋতুর আগমনে রূপ বদলায় প্রকৃতি। হেমন্তকে বলা হয় শীতের বাহন। প্রকৃতিতে অনুভূত হচ্ছে শীতের আমেজ। গ্রামীণ জনপদে এখন হালকা শীতের আমেজ। আকাশ থেকে খণ্ড খণ্ড মেঘ সরে গিয়ে উদোম হয়েছে বিশাল নীল আকাশ।

গতকাল সন্ধ্যায় অস্ত যাওয়া আশ্বিনের শেষ সূর্যটার সাথে নগরের তপ্ত শ্বাসও অস্ত যাওয়ার কথা, কিন্তু জলবায়ুর যে নিত্য বদল, তাতে এ গরম আরো কিছু দিন থাকবে। অগ্রহায়ণে ধান কাট ার সাথে সাথে জেকে বসতে শুরু করবে শীত। হেমন্তকে সবচেয়ে চেনা যায় ভোরের শিশিরে। খুব ভোরে একটি শীতল বাতাসে। সবুজ পাতার গায়ে জমে থাকা শিশির বিন্দু অপার্থিব দৃশ্যমালা রচনা করে।

হেমন্ত জীবন ও প্রকৃতিতে এক আশ্চর্য সময় হয়ে ওঠে। বর্ষার পরে এই সময়ে বৃক্ষ রাজি থাকে সবুজে ভরা। ভরা থাকে খালবিল নদীনালা। বিল জুড়ে সাদালাল শাপলা আর পদ্ম ফুলের সমারোহ। এই হেমন্তের দুই রূপ প্রতিভাত হয়। প্রথম মাসটির এক রূপ। পরেরটির অন্য। এক সময় হেমন্তের প্রথম মাসটি ছিল অনটনের। ফসল হতো না। বিভিন্ন অঞ্চলে খাদ্যাভাব দেখা দিত। সারা বছরের জন্য জমিয়ে রাখা চাল ফুরিয়ে যেত এ সময়ে এসে। ধানের গোলা শূন্য হয়ে যেত। কার্তিকের দুর্নাম করে তাই বলা হতো ‘মরা কার্তিক’। কবি গুরুর কবিতায়ও আভাস পাওয়া যায় মন্দ্রাক্রান্ত কার্তিকের। কবিগুরু লিখেছেন– ‘শূন্য এখন ফুলের বাগান, দোয়েল কোকিল গাহে না গান,/কাশ ঝরে যায় নদীর তীরে।’

অগ্রহায়ণে আবার উল্টো চিত্র। নবান্নের এই মাস সমৃদ্ধির। এ সময় মাঠের সোনালি ফসল কাটা শুরু হয়। দেখতে দেখতে গোলা ভরে ওঠে কৃষকের। হেমন্তের বাতাসে ভেসে বেড়ায় পাকা ধানের মিষ্টি ঘ্রাণ। বাড়ির আঙিনা নতুন ধানে ভরে ওঠে। কৃষক বধূ ধান শুকোতে ব্যস্ত। প্রতি ঘর থেকে আসে ঢেঁকিতে ধান ভানার শব্দ। দিনে দিনে বদলাচ্ছে সেই হিসাবনিকাশ। এখন আগের সে অভাব নেই। শস্যের বহুমুখীকরণের ফলে মোটামুটি সারা বছরই ব্যস্ত কৃষক। বিভিন্ন ফসল ফলান তারা। আয় রোজগারও বেশ। পাশাপাশি এখন কার্তিক মাসেই হৃষ্টপুষ্ট হয়ে ওঠে আগাম আমন ধানের শীষ। পাকা ধান কাটা শুরু হয়ে যায়। অগ্রহায়ণ পুরোটাজুড়ে সারা বাংলায় চলবে নবান্ন উৎসব। বাঙালির প্রধান ও প্রাচীনতম উৎসবগুলোর অন্যতম নবান্ন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনবান্ন উৎসব
পরবর্তী নিবন্ধজননেতা চৌধুরী হারুন : আদর্শিক রাজনীতির প্রতিভূ