পহেলা বৈশাখ বাংলা নববর্ষ বাঙালি জাতিসত্তার এক সর্বজনীন জাতীয় উৎসব ও ঐক্যের চেতনা। জাতি–ধর্ম–বর্ণ–গোত্র নির্বিশেষে সর্ব শ্রেণির মানুষের আবহমান কাল থেকে বাঙালির প্রাণের উৎসব নববর্ষ। নববর্ষ সকল মানুষের হৃদয়ে আশার সঞ্চার করে, সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা যোগায় সর্বোপরি জীবনের সম্ভাবনাময় স্বপ্নপূরণের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য উদ্যমী করে তোলে। পুরানো বছরের সকল দুঃখ, কষ্ট, গ্লানি, হতাশা ভুলে নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়ার নতুন সুর, নতুন উদ্দীপনা ও নব আনন্দের বার্তা নিয়ে বারেবারে ফিরে আসে। বাংলার প্রকৃতির আকাশে বাতাসে জনমনে সবখানে রঙিন করে তোলে নববর্ষ। বাংলার হাজার বছরের ইতিহাস, ঐতিহ্য, কৃষ্টি, সংস্কৃতির এক চিরাচরিত বাঙালিয়ানা পোশাকে আশাকে, সাজগোছে, খাবারে, সংগীতে, খেলাধুলায় সর্বত্র গ্রামবাংলার শাশ্বত রূপ ধরা দেয়। লাল–সাদার বর্ণিল পোশাকে দেহমনে আনন্দের দোলা দেয়, বাউল, মারফকি, মুর্শিদি, ভাটিয়ালি লোকগানে মুখরিত বাংলার আকাশ বাতাস। সরকারিভাবে ছুটির এই বাংলা নববর্ষ বাঙালিজাতির জীবনে এক জাতীয় উৎসবে পরিণত হয়েছে। পৃথিবীতে সর্বত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বাংলা ভাষাভাষী বাঙালিরা এ দিনে বাংলার সাংস্কৃতিকে ধারন ও লালন করে একজন বাঙালিয়ানা হিসাবে গড়ে তোলে টুকরোটুকরো লালসবুজ বাংলাদেশ। আধুনিকযুগে অনলাইন ফেসবুক দুনিয়াই বা সামাজিক যোগাযোগের নানা মাধ্যমে এই দিনে সবার ওয়ালে ওয়ালে শোভা পায় লাল–সাদার অপূর্ব যুগল, পারিবারিক ও সামাজিক আনন্দের অসাধারণ মাধুর্যময় বাঙালিয়ানার উৎসবমুখর মুহূর্তের নানারঙের ছবি।
এমন প্রাণের উৎসবকে এক শ্রেণির মানুষ সাম্প্রদায়িক রূপ দিয়ে বিতর্কিত করার হীন চেষ্টায় লিপ্ত থাকে। অনেক সময় অপ্রীতিকর, বিব্রতকর ও মর্মান্তিক ঘটনাও ঘটিয়ে আপামর জনসাধারণের আনন্দকে ম্লান করে দেওয়ার অপচেষ্টা করে থাকে। যা ঐক্যতা চেতনাকে আঘাত করে। তাই কোনো অপশক্তি যেন আমাদের ঐতিহ্যকে এমন প্রাণের উৎসবকে ধ্বংস করতে না পারে সেদিকে প্রত্যেক বাঙালিকে সচেতন থাকতে হবে। এই দিনটিতে প্রজন্মেরা বাঙালির সঠিক ইতিহাস জানতে পারে। প্রজন্মের সুপ্ত মানবিক মূল্যবোধকে জাগ্রত করে, অসাম্প্রদায়িক চেতনায় সম্প্রীতির বন্ধন সৃষ্টি করে। বাংলা নববর্ষ মানুষে মানুষে প্রেম ভালোবাসা মায়া মমতার এক অনিন্দ্য সুন্দর আনন্দের প্রেরণা দান করে থাকে। তাই বাংলা নববর্ষের আয়োজন আরো ব্যাপকতর হয়ে আনন্দে উচ্ছ্বাসে বাংলার আবহমান কৃষ্টি–সংস্কৃতি লোকজ উৎসব সর্বজনীনতায় উজ্জীবিত থাকুক। এবারের ১৪৩০ বঙ্গাব্দের পহেলা বৈশাখের শুভ নববর্ষে মহাধুমধামে আনন্দ আয়োজনে সারা বিশ্বব্যাপী উদযাপিত হোক বাঙালির চেতনার প্রাণের উৎসব। শুভ নববর্ষ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ।
প্রতিধ্বনিত হোক বারংবার: ‘এসো এসো এসো হে বৈশাখ, তাপসনিশ্বাসবায়ে মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে’। সকলের সমৃদ্ধময় ও মঙ্গলময় জীবন কামনা করি। বিশ্বকবি রবিঠাকুরের সৃষ্টি দিয়ে মনের কথা ব্যক্ত করে বলি: নিখিলের আনন্দধারায় ধুইয়ে দাও, মনের কোণের সব দীনতা, মলিনতা ধুইয়ে দাও, আলোকের এই ঝর্ণাধারায় ধুইয়ে দাও।
লেখক : প্রাবন্ধিক