এক মাসের বেশি সময় বন্ধ থাকার পর নগরীর বাওয়া স্কুলের সামনে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের র্যাম্প নির্মাণের কাজ আজ থেকে শুরু হচ্ছে। বাওয়া স্কুলের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে এই র্যাম্প নির্মাণের কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। এতে নগরীর বিস্তৃত এলাকার মানুষের জন্য এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার কঠিন হয়ে ওঠে। পরে বাওয়া স্কুল কর্তৃপক্ষ এবং শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনা করার পর তারা র্যাম্প নির্মাণের ব্যাপারে তাদের আপত্তি প্রত্যাহার করে। সিডিএর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নগরীর যানজট নিরসনসহ বহুমুখী লক্ষ্য সামনে নিয়ে পতেঙ্গা থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত সাড়ে ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এক্সপ্রেসওয়ে লালখান বাজারে আখতারুজ্জামান চৌধুরী ফ্লাইওভারের সাথে যুক্ত হবে। এতে পতেঙ্গা থেকে বহদ্দারহাট পর্যন্ত ২২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ফ্লাইওভার দিয়ে যান চলাচল করতে পারবে। এক্সপ্রেসওয়ের মূল অবকাঠামোর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এক্সপ্রেসওয়ের কানেক্টিভিটি বাড়ানোর জন্য মূল ফ্লাইওভার থেকে ৮টি এলাকায় ১৫টি র্যাম্প নির্মাণের ব্যবস্থা রেখে নকশা প্রণয়ন করা হয়। জিইসি মোড়ে ম্যানোলা হিলের পাশ থেকে একটি র্যাম্প উঠে তা ওয়াসা মোড়ে ফ্লাইওভারের সাথে যুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে। এ র্যাম্প ব্যবহার করে জিইসি মোড় থেকে সন্নিহিত বিস্তৃত এলাকার শত শত যানবাহন এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠার সুযোগ পাবে। জাকির হোসেন রোড, ও আর নিজাম রোড থেকে শুরু করে আশেপাশের মানুষের এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠার এই র্যাম্প নকশায় রয়েছে। র্যাম্প নির্মাণের লক্ষ্যে পাইলিংসহ আনুষঙ্গিক কাজ সম্পন্ন করা হয়। নির্মাণ কার্যক্রমের মাঝ পর্যায়ে এসে বাওয়া স্কুলের শিক্ষার্থীরা র্যাম্প নির্মাণের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামে। র্যাম্প নির্মিত হলে মেয়েদের নানা ধরনের সমস্যা হবে–এমন অভিযোগ উত্থাপন করে। ছাত্রীদের আন্দোলনের মুখে র্যাম্পটির নির্মাণকাজ ১৯ সেপ্টেম্বর বন্ধ করে দেওয়া হয়।
অপরদিকে টাইগারপাস মোড়ে দুটি র্যাম্পের একটি সিআরবি রোড থেকে, অপরটি আমবাগান রোড থেকে এসে ফ্লাইওভারে যুক্ত হওয়ার কথা। কিন্তু গাছ কাটা পড়ায় সিআরবির দিকের র্যাম্প নির্মাণ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় টাইগারপাস মোড়ে র্যাম্প নির্মিত হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করা হয়েছে। টাইগারপাসে আমবাগানের দিকে যে র্যাম্প নামানো হয়েছে সেটা দিয়ে দক্ষিণ খুলশীসহ সন্নিহিত অঞ্চলের যানবাহন পতেঙ্গার দিক থেকে এসে এক্সপ্রেসওয়ে থেকে নামবে। এটি চালু হয়েছে। লালখান বাজার ম্যাজিস্ট্রেট কলোনির সামনেও নামার জন্য একটি র্যাম্প চালু রয়েছে। এই র্যাম্পটি দিয়ে লালখান বাজার, ওয়াসা মোড়, জিইসি মোড়সহ সন্নিহিত অঞ্চলের যানবাহন নেমে মূল সড়ক ধরে গন্তব্যে যাবে। এছাড়া আগ্রাবাদ মোড়ে ৪টি, ফকিরহাটে ১টি, নিমতলা মোড়ে ২টি, সিইপিজেড মোড়ে ২টি, সিমেন্ট ক্রসিংয়ে ১টি এবং কেইপিজেডের সামনে দুটি র্যাম্প ফ্লাইওভারে যুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে। সাড়ে ১৬ কিলোমিটারের এক্সপ্রেসওয়ে এসব র্যাম্পসহ ২২ কিলোমিটার দীর্ঘ হওয়ার কথা।
বেশ কিছুদিন ধরে পরীক্ষামূলকভাবে এক্সপ্রেসওয়েতে যান চলাচল করছে। অনেক মানুষ প্রতিদিন এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করছেন। এতদিন লালখান বাজারে নামার র্যাম্পটি এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছিল। কিন্তু ৮ অক্টোবর থেকে সিডিএ সেটিকে নামার জন্য ব্যবহার শুরু করেছে। ফলে এখন এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠার জন্য বায়েজিদ রোডের বেবি সুপার মার্কেট বা মুরাদপুরের এন মোহাম্মদ কনভেনশন সেন্টারের সামনের র্যাম্প ব্যবহার করতে হচ্ছে। এতে করে খুলশী, জামালখান, নিউ মার্কেট, আন্দরকিল্লা এবং ও আর নিজাম রোডসহ শহরের একটি বড় অংশের মানুষকে ষোলশহর কিংবা মুরাদপুর গিয়ে এক্সপ্রেসওয়েতে উঠতে হচ্ছে। এতে ষোলশহর ও মুরাদপুরে বাড়তি যানবাহনের চাপ সৃষ্টি হয়। নাগরিক দুর্ভোগও বেড়েছে।
বিষয়টি নিয়ে সিডিএর কর্মকর্তারা বাওয়া স্কুলের শিক্ষার্থীদের সাথে বৈঠক করেন। বৈঠকে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে র্যাম্পটিতে গাড়ি চলাচলের বিষয়টি তাদের বোঝানো হয়। স্কুলের সামনে র্যাম্পটি রাস্তা থেকে ৩৫ ফুট উপরে থাকবে। স্কুলের গেটে র্যাম্পের পিলার হচ্ছে না। র্যাম্পটিতে এক পিলার থেকে অপর পিলারের দূরত্ব (স্প্যান) ৮২ ফুট থেকে ১১৪ ফুট। সিডিএর কর্মকর্তারা শিক্ষার্থীদের বোঝাতে সক্ষম হন, এই র্যাম্প শিক্ষার্থীদের কোনো অসুবিধা করবে না। বরং র্যাম্প না হলে হাজার হাজার মানুষ দুর্ভোগে পড়বেন। এরপর শিক্ষার্থীরা আল্টিমেটাম তুলে নেয়।
এদিকে আজ রোববার সকাল থেকে বাওয়া স্কুলের সামনে র্যাম্প নির্মাণের কার্যক্রম পুরোদমে শুরু হচ্ছে। প্রকল্প এলাকা থেকে সরিয়ে নেওয়া ভারী যন্ত্রপাতিগুলো এনে সড়কের পাশে রাখা হয়েছে। প্রায় সাড়ে ৬শ মিটার দীর্ঘ র্যাম্পটি নির্মাণে তিন মাস সময় লাগতে পারে। এ র্যাম্প ওয়াসা মোড়ে এক্সপ্রেসওয়ের সাথে যুক্ত হলে জিইসি মোড় থেকে অসংখ্য গাড়ি প্রতিদিন এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করার সুযোগ পাবে।
বাওয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আরিফুল হাসান বলেন, সিডিএ থেকে একটি টিম এসে আমাদের মেয়েদের সাথে বৈঠক করেছিল। উনারা মেয়েদের সার্বিক অবস্থা বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন। এই র্যাম্পের ব্যাপারে এখন শিক্ষার্থীদের আর আপত্তি নেই।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মাহফুজুর রহমান আজাদীকে বলেন, কানেক্টিভিটি বাড়ানো না গেলে এত টাকা খরচ করে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ অর্থহীন হয়ে যাবে। জিইসি মোড়ের র্যাম্পটি গুরুত্বপূর্ণ। আমরা বাওয়া স্কুলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের বিষয়টি বোঝাতে সক্ষম হয়েছি। সফল আলোচনার পর তারা আপত্তি প্রত্যাহার করে। আমরা আবার কাজ শুরু করতে যাচ্ছি। রোববার (আজ) থেকে কার্যক্রম শুরু হবে।