বাইডেনের ঐতিহাসিক জয়

‘কথা দিচ্ছি, সবার প্রেসিডেন্ট হব’

আজাদী ডেস্ক | রবিবার , ৮ নভেম্বর, ২০২০ at ৪:৪২ পূর্বাহ্ণ

শৈশবে তোতলামির কারণে বন্ধুদের হাসির পাত্র হওয়া, ব্যক্তিগত জীবনে ভয়াবহ ট্র্যাজেডি, প্রথমবার হোয়াইট হাউজে পৌঁছানোর দৌড়ে নেমে বক্তৃতা চুরির দায় মাথায় নিয়ে সরে দাঁড়ানো; এসবের কোনোটিই যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের লক্ষ্যপূরণে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। হার না মানার মানসিকতা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন এই ডেমোক্র্যাট প্রার্থী। এই জয়ে সবচেয়ে বেশি বয়সে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার ইতিহাস গড়লেন বাইডেন। এর আগেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ইতিহাসে সর্বোচ্চ পপুলার ভোট পাওয়ার ইতিহাসও সৃষ্টি করেন ৭৭ বছর বয়সী এই ডেমোক্র্যাট। তাঁর রানিংমেট কমলা হ্যারিসও যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম নারী ভাইস প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন। এছাড়া বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের সিকি শতাব্দীরও বেশি সময়ের মধ্যে ক্ষমতাসীন কোনো প্রেসিডেন্টকে হারিয়ে ইতিহাস গড়েছেন। আর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ট্রাম্প তৃতীয় কোনো প্রেসিডেন্ট যিনি, ক্ষমতাসীন হিসেবে নির্বাচন করে হেরে গেলেন।
গত দুদিন ধরে নির্বাচনের ফল জানতে সবার দৃষ্টি ছিল পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের দিকে। এই রাজ্যে জিতলেই বাইডেনের জয় নিশ্চিত হতো। হয়েছে সেটাই। আগেই ২৫৩ ইলেকটোরাল কলেজের ভোট পাওয়া বাইডেনের ইলেকটোরাল কলেজ ভোটের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৭৩এ। বাকি পাঁচটি অঙ্গরাজ্যে ট্রাম্প জয় পেলেও তাঁর ইলেকটোরাল কলেজ ভোটের সংখ্যা দাঁড়াবে ২৬৫। তবে দ্য গার্ডিয়ান ও আল জাজিরা জানিয়েছে, ইতোমধ্যেই ২৯০টি ইলেকটোরাল ভোট নিশ্চিত হয়েছে বাইডেনের। অন্যদিকে ট্রাম্প পেয়েছেন ২১৪টি ইলেকটোরাল ভোট। নির্বাচনে ৫০.৫৭ শতাংশ ভোট রয়েছে বাইডেনের পক্ষে। ট্রাম্প পেয়েছেন ৪৭.৭৭ শতাংশ ভোট।
সিএনএনের খবরে বলা হয়, পেনসিলভানিয়ায় বাইডেন পেয়েছেন ৩৩ লাখ ৪৫ হাজার ৭২৪ ভোট। আর ট্রাম্প পেয়েছেন ৩৩ লাখ ১১ হাজার ৩১০ ভোট। ব্যবধান ৩৪ হাজার ৪১৪ ভোট। আর দেশজুড়ে পপুলার ভোটের হিসাব বলছে, এ পর্যন্ত গণনা করা ভোটের মধ্যে বাইডেন পেয়েছেন ৭ কোটি ৪৪ লাখ ৭৮ হাজার ৫৩৩ ভোট। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ট্রাম্প পেয়েছেন ৭ কোটি ৩ লাখ ৩০ হাজার ২১০ ভোট।
গত কয়েকদিন পেনসিলভেনিয়া, জর্জিয়া, অ্যারিজোনা, নেভাডা, নর্থ ক্যারোলাইনা ও আলাস্কায় ভোট গণনার দিকে নজর ছিল সারা বিশ্বের। এর মধ্যে প্রথম দিকে পেনসিলভেনিয়া, জর্জিয়া, নর্থ ক্যারোলাইনা ও আলাস্কায় ট্রাম্প এগিয়ে থাকলেও শুক্রবার পোস্টাল ব্যালট গণনা শুরুর পর পাল্টে যায় চিত্র। পেনসিলভেনিয়া ও জর্জিয়ায় ট্রাম্পকে টপকে এগিয়ে যান বাইডেন। শুক্রবারই জর্জিয়ার ৯৯ শতাংশ ভোট গণনা শেষ হয়। তবে দুই প্রার্থীর ব্যবধান খুব সামান্য হওয়ায় সেখানকার নিয়ম অনুযায়ী ভোট পুনঃগণনায় চলে যায়। তবে আগাম ভোটের ওপর ভর করে নির্বাচনী ফল বাইডেনের দিকে ঝুঁকে পড়ে। এতে ভোট গণনা বন্ধের আহ্বান জানান ট্রাম্প। প্রমাণ ছাড়া ভোট কারচুপির অভিযোগও তোলেন তিনি। পেনসিলভেনিয়ায় ভোট গণনা বন্ধের দাবি নিয়ে আদালতেও যায় তার অনুসারীরা।
তবে শনিবার পেনসিলভেনিয়ায় বাইডেন জয়ী হওয়ায় ২০টি ইলেকটোরাল ভোট চলে আসে তার পক্ষে। আর এতেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ২৭০টির বেশি ইলেকটোরাল ভোট হয়ে যায় তাঁর।
এদিকে পেনসিলভেনিয়ার ভোটের ফলাফল নিশ্চিত হওয়ার পরপরই টুইট করেন জো বাইডেন। তিনি বলেন, ‘আমেরিকা, মহান এই রাষ্ট্রের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য আমাকে বেছে নেওয়ায় আমি সম্মানিত। আমাদের সামনের যে কাজ রয়েছে, তা কঠিন হবে। তবে এই প্রতিশ্রুতি আমি আপনাদের দিচ্ছি, আপনি আমাকে ভোট দিন বা না দিন, আমি হব সব আমেরিকানের প্রেসিডেন্ট। আমার ওপর যে আস্থা আপনারা রেখেছেন, তার প্রতিদান আমি দেব’। নির্বাচনী প্রচারে বাইডেন সব সময় বলেছেন, ‘জাতির আত্মা’ এখন সংকটে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শাসনামলের ক্ষত সারাবেন বলে অঙ্গীকারও করেন তিনি।
এক নজরে বাইডেন : পুরো নাম জোসেফ রবিনেট বাইডেন জুনিয়র। পরিচিত জো বাইডেন হিসেবে। সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে দুই মেয়াদে কাজ করেছেন। ১৯৭৩ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ডেলাওয়ার থেকে সিনেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
বাইডেনের জন্ম ১৯৪২ সালের ২০ নভেম্বর। পেনসিলভেনিয়ার স্ক্রানটনে। চার ভাইবোনের মধ্যে সবার বড় তিনি। তার বাবা জোসেফ রবিনেট বাইডেন সিনিয়র। মা আইরিশ বংশোদ্ভূত ক্যাথরিন ইউজেনিয়া ফিনেগান। বাইডেন ডেলাওয়ার ইউনিভার্সিটিতে ইতিহাস ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। পরে সিরাকিউজ ইউনিভার্সিটি থেকে আইনে ডিগ্রি নেন।
১৯৬৬ সালে নিলিয়া হান্টারকে বিয়ে করেন বাইডেন। তাদের ঘরে তিন সন্তান রয়েছে। স্ত্রীকে তিনি বলেছিলেন, ৩০ বছর বয়সের মধ্যে সিনেটর হওয়ার স্বপ্ন তার। সিনেটর হওয়ার পর তার লক্ষ্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়া। ১৯৭২ সালে বড় দিনের আগে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন স্ত্রী নিলিয়া। পরে ১৯৭৩ সালে জিল ট্রেসি জ্যাকবকে বিয়ে করেন বাইডেন। তাদের ঘরে এক কন্যা সন্তান রয়েছে।
১৯৭০ সালে ডেলাওয়ারের নিউ ক্যাসল কাউন্টির কাউন্সিলম্যান নির্বাচিত হন জো বাইডেন। এরপর তাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। ৩০ বছর বয়সের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হয় তার। ১৯৭২ সালের নভেম্বরে তৎকালীন জনপ্রিয় রিপাবলিকান সিনেটর স্যালেব বগসের বিপক্ষে ডেমোক্র্যাটিক দল থেকে প্রার্থী হন তিনি। তারপর নাম লেখান ইতিহাসে। ৭৩’ থেকে টানা ২০০৯ সাল পর্যন্ত সিনেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকমলা হ্যারিস প্রথম নারী ভাইস প্রেসিডেন্ট
পরবর্তী নিবন্ধএকা না, সবাইকে নিয়ে সবাইকে দিয়ে খাব