বাং লা দে শে র ফ ল

নাজমুল আহসান | বুধবার , ৯ জুলাই, ২০২৫ at ৭:১৫ পূর্বাহ্ণ

আম একটি রসালো ফল। বলা যায় আম সবাই খেতে পছন্দ করে। গ্রীষ্মপ্রধান দেশে ফলের সেরা আম। স্থান ভেদে নানা স্বাদের আম ও প্রকারের আম পাওয়া যায়। যেমন : ফজলী, ল্যাঙড়া, ক্ষীরসাপাতি, হিমসাগর, গোপালভোগ, মিসরিভোগ, গোলাপখাস, কোহিতুর, লক্ষণভোগ, বোমবাই, আলফানসো, লতাবম্বে, গোলাপ কোহিতুর, কিশানভোগ, দিলসাদ, কুয়া, পাহাড়ী, রাণীপছন্দ, শাহপছন্দ, মোহনভোগ, আশ্বিনা, কাঁচামিঠা, বারোমাসী আরও কত নাম না জানা আম বাংলাদেশে পাওয়া যায় । নানা আকৃতি ও স্বাদের মধ্যে দেখা যায় গোল, লম্বা, পাঁচের মতো, হলুদ, গাঢ় হলুদ, ঈষৎ হলুদ, সিঁদুরে, সবুজ প্রভৃতি রঙের, স্বাদের দিক থেকে আম টক, মিষ্টি, আঁশযুক্ত, আঁশহীন, তীব্রগন্ধী, মধুগন্ধী হয়ে থাকে। অনেকে মনে করেন মালয় অথবা দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া আমের উৎপত্তিস্থান । মহাবীর আলেকজান্ডার খ্রিস্টপূর্ব ৩২৭ অব্দে সিন্ধু উপত্যকার আমবাগানের কথা উল্লেখ করেছেন। সাধক কবি আমীর খসরু (১৩০০ খ্রিঃ) তাঁর কাব্যে আমের কথা বলেছেন। সম্রাট আকবর (১৫৫৬১৬০৫) বিহার প্রদেশের দ্বারভাঙ্গী জেলায় ‘লাখবাগীনামের আমের বাগান তৈরি করেন। এই বাগানে ছিল এক লাখ আমের গাছ। পলাশীর আম্রকাননের কথা তোমরা নিশ্চয়ই শুনেছো। তাই অনুমান করা হয় আমের জন্মস্থান ভারতবর্ষ । পরে এখান থেকে আম কাছাকাছি অন্যান্য দেশ যেমন শ্রীলংকা মায়ানমার, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও পূর্বভারতীয় দ্বীপপুঞ্জে পৌঁছে যায়। বর্তমানে আফ্রিকা, পশ্চিমভারতীয় দ্বীপপুঞ্জের মেক্সিকো এমনকি আমেরিকার ফ্লোরিডাতেও আমের চাষ হচ্ছে। বর্তমানে বিশ্বে আমের উৎপাদন ১.৫১ কোটি টনের মতো। আম উৎপাদনে সবচেয়ে এগিয়ে থাকা দেশ ভারত৯৫ লক্ষ টন, এছাড়াও ব্রাজিল.৯ লক্ষ টন, পাকিস্তান.৪ লক্ষ টন, মেক্সিকো ৭.৯ লক্ষ টন, ফিলিপাইন.৭ লক্ষ টন, ইন্দোনেশিয়া.৩ লক্ষ টন, হাইতি.৫ লক্ষ টন, চীন.৫ লক্ষ টন, বাংলাদেশ.৭ লক্ষ টন, তানজানিয়া.৭ লক্ষ টন, জায়ার.৬ লক্ষ টন, ডামিকান রিপাবলিকান.৯ লক্ষ টন। বাংলাদেশের রাজশাহী, রংপুর, চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশাল, দিনাজপুর, পাবনা ও ঢাকা । বাংলাদেশে বর্তমানে ৪৬ হাজার হেক্টর জমিতে ভাল জাতের আমের চাষ হয়। এরমধ্যে রাজশাহীতে ৯৭৬৫ হেক্টর, দিনাজপুরে ৩৭৫৮ হেক্টর, রংপুরে ৩২৪৮ হেক্টর এবং কুষ্টিয়াতে ১৫১৯ হেক্টর জমিতে ভাল জাতের আম জন্মে।

ফল গাছের গুণ ও বৈশিষ্ট্য বিবেচনা করে বিজ্ঞানীরা প্রায় আড়াই হাজার আমের জাত পেয়েছেন। আমে প্রচুর পরিমাণে ক্যারোটিন এবং ভিটামিন বি ও সি, শ্বেতসার, আমিষ ও খনিজ পদার্থ আছে। আম কাঁচা পাকা উভয় অবস্থায় খাওয়া যায়। প্রাচীন চিকিৎসা মতে কাঁচা আম পিত্তকর এবং পাকা মানুষের রং উজ্জ্বল করে ও শক্তি বৃদ্ধি করে । আমাশয়, বমি বমি ভাব ইত্যাদি ভোগে কচি আমপাতার রস ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয় । আম নিয়ে খনার বচন আছে : আমে ধান

তেঁতুলে বাম।

অর্থাৎ কোনও বছরে আমের ফলন বাড়লে সে বছরে ধানের ফলনও বাড়ে। আম থেকে বিভিন্ন প্রকার মুখরোচক আচার তৈরি করা হয়। সুস্বাদু আমসত্ত্ব ও আম থেকে তৈরি করা হয়। এত সব গুণাবলীর কারণেই আম হচ্ছে ফলের রাজা। আমের ইংরেজি নাম-Mango ও বৈজ্ঞানিক নাম Mangifera Indica.

পূর্ববর্তী নিবন্ধআবইয়াজের আমগাছ
পরবর্তী নিবন্ধবোয়ালখালীতে দুই টেক্সির সংঘর্ষ, গর্ভবতী নারীসহ আহত ৫