বাংলা সাহিত্যের হিরন্ময়ী গবেষক

এ.কে.এম. আবু বকর চৌধুরী | মঙ্গলবার , ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ at ৮:১৪ পূর্বাহ্ণ

সৌভাগ্যের চেয়ে সাধনাকে যারা বড় মনে করেন তাদেরকেই সাধনা আঁধারে পথ দেখায়। সাধনা মানুষের সুপ্ত মনের ক্রম অভিব্যক্তি। একে কষ্ট করে আবিস্কার করতে হয়, আর প্রতিভা মানুষের অজ্ঞাত শক্তির সাময়িক স্ফূরণ। সুতরাং সাধনা কষ্টসাধ্য ব্যাপার, এর সিদ্ধিও সহজে হয় না। আর কষ্টসাধ্য সাধনার মাধ্যমে সিদ্ধি লাভের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বাংলার সাহিত্যের ইতিহাসকে সমৃদ্ধশীলকারকদের অন্যতম চট্টগ্রামের হিরন্ময় সন্তান মহান গবেষক মুন্সী আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ।

আলাওল, দৌলতকাজী, মর্দন, মাগনঠাকুর, শেখ কবি, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, শরৎচন্দ্র, মাইকেল মধুসুদন দত্ত, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, . দীনেশ চন্দ্র সেন, ব্যোমকেশ মুস্তফী, মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, রামেন্দ্র সুন্দর ত্রিবেদী, . মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, সৈয়দ মরতুজা আলী, কায়কোবাদ, নবীন সেন, . কাজী মোতাহের হোসেন, . মুহাম্মদ এনামুল হক, অধ্যাপক আবদুল হাই, অধ্যাপক আবুল ফজল, . আহমদ শরীফ প্রমুখ খ্যাতিমান মহাকবি, কবি, সাহিত্যিক ও গবেষকদের সাথে মুন্সী আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদের নামও বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে চিরঞ্জীব হয়ে থাকবে।

তিনি ১৮৬৯র ৩০ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের পটিয়া উপজিলায় সুচক্রদন্ডী গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত বংশে জন্মগ্রহণ ও ১৯৫৩এর ৩০ সেপ্টেম্বর বুধবার জীবনকালকে সাতটি যুগের দ্বীপে পৌঁছিয়ে ইন্তেকাল করেন। ১৮৯৩ সালে পটিয়া ইংলিশ হাইস্কুল হতে দ্বিতীয় বিভাগে এন্ট্রাস পাশ করেন। তৎসময়ে চট্টগ্রাম ‘বি’ জোন ও কক্সবাজার মহকুমার মধ্যে তিনিই প্রথম ও একমাত্র ছাত্র হিসাবে এই কৃতিত্বের অধিকারী হন। শারীরিক অসুস্থতা হেতু চট্টগ্রাম কলেজে এফ.এ ক্লাসে অধ্যয়নরত অবস্থায়ী শিক্ষাজীবনের ইতি টানেন, কারণ অসুস্থতাহেতু পরীক্ষা দিতে ব্যর্থ হন।

শারীরিক ও আর্থিক সংঘাতে পরাজিত হয়ে সাহিত্য বিশারদ চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যাল হাইস্কুল ও সীতাকুন্ড মধ্য ইংরেজি স্কুলে কিছুকাল শিক্ষকতা করেন। পরবর্তীতে পটিয়া মুন্সেফী আদালতে কর্মরত থাকাকালে আরেক কৃতি সন্তান কবি নবীন সেনের (তিনি তখন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের পিএ ছিলেন) প্রচেষ্টায় ১৮৯৮ সালে কমিশনার কার্যালয়ে কেরানীর চাকুরী পান। এখানে সামান্য ভুল বুঝাবুঝিকে কেন্দ্র করে তিনি চরমভাবে লাঞ্ছিত হয়ে বিতাড়িত হন। এরপর আনোয়ারায় মধ্য ইংরেজী বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদে যোগ দেন। ১৯০৬ হতে ১৯৩৪ পর্যন্ত সুদীর্ঘ ২৮ বছর চট্টগ্রাম স্কুল সমূহের পরিদর্শকের কার্যালয়ে কেরানী হিসেবে চাকুরী করেন।

আনোয়ারা হাইস্কুলের প্রধানশিক্ষক থাকাকালে এক চাষীর বাড়িতে একখানি পুঁথি পেয়ে সপ্তাহব্যাপী গবেষণা করে এটিকে মহাকবি আলাওলের ‘পদ্মাবতী” বলে আবিস্কারের মাঝ দিয়ে মুন্সী আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদের প্রতিভা ও সাধনায় স্বর্ণযুগের শুভযাত্রা।

সাহিত্য বিশারদ জীবনের দীর্ঘকাল সময়ে পুঁথি সংগ্রহে যথাসাধ্য ব্যয়, যথেষ্ট কষ্ট সহ্য ও সকল পুঁথির আলোচনা করেন। পুঁথি সংগ্রহে তাঁকে বহু উৎপীড়ন নীরবে সহ্য করতে হয়েছে। মুসলিম বলে হিন্দুর আঙ্গিনায় প্রবেশাধিকার না থাকলেও হিন্দুর ঘরে পুঁথি আছে খবর পেয়ে ভিক্ষুকের মত তার দ্বারে গিয়ে পুঁথি দেখতে চেয়েছেন। তাঁকে পুঁথি ছুঁতে বা দেখতে দেয়া যায় না, কারণ মনসা পূজায় পঠিত ও সরস্বতী পূজায় পূঁজিত হয়। কিন্তু বাংলা সাহিত্যের এই মহান সাধক পুরুষ এতে দুঃখ পেলেও সাধনার অদম্য প্রেরণায় আকুল মিনতি জানাতেন একটুকু দেখার জন্য, ফলশ্রুতিতে হিন্দুরাই পুঁথিটিকে খুলে উল্টিয়ে পাল্টিয়ে দেখাতেন। দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে স্পর্শ না করে শুধু চোখে দেখে নোট করে সেই সকল পুঁথির বিবরণ লিখে নিতেন।

নিম্নতম বেতন ভোগী কেরানী হয়ে কাজের বিনিময়ে তিনি বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসকে সমৃদ্ধশালী করে গেছেন। তাই এই ইতিহাস তাঁর কাছে চিরঋণী। রক্তের ঋণ রক্ত দিয়ে, অর্থের ঋণ অর্থ দিয়ে শোধ করা গেলেও সাহিত্য বিশারদের ঋণ শোধ করার মত বাংলা সাহিত্যে বাঙালি জাতির কাছে কিছুই নাই। বিভিন্ন স্কুলের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বিভিন্ন কাজ আদায়ের জন্য তার কাছে তদবির করলে তিনি একটা শর্তের বিনিময়ে কাজ করে দিতেন। এবং তা হল যেভাবে হোক যেস্থান থেকে হোক তাঁকে পুঁথি সংগ্রহ করে দিতে হবে। এটাই ছিল তাঁর বিস্ময়কর ও অভিনব যুগের ঘোষিত নিয়ম।

সাহিত্য বিশারদ ৫৯৭টি পাণ্ডুলিপি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারে দান করেন। তৎমধ্যে ৫৮৫টি বাংলা পুঁথি (একটি ছাপানো ২৬২ সংখ্যক পুঁথি), ২০টি ফারসী ও ২টি উর্দু পান্ডুলিপিও ছিল। ৫৮৫টি বাংলা পুঁথির মধ্যে ন্যূনপক্ষে ৪৯টি আরবী হরফে লিখা, ২৮টি কলের কাজ এবং বাকীগুলি ঘরে প্রস্তুত তুলোট কাগজের। মহাকবি আলাওলের ‘পদ্মাবতীর’ অন্যুন ৩৬টি কপি আছে এবং এগুলির অধিকাংশই খণ্ডিত।

প্রাচীন সাহিত্যের কাল নির্ণয় ও বৈশিষ্ট্য বিচারে ভাষার রহস্য আবিস্কার এবং গতিধারা অনুসন্ধান যে অপরিহার্য দায়িত্ব তাঁর এই উপলব্ধি ছিল সুগভীর। তাই তিনি প্রাচীন সাহিত্যের ভাষা স্বরূপ সন্ধানে ব্রতী হন। যার ফলে বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস কিছুটা পরিবর্তিত হয়েছে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে। তিনিই এই ইতিহাসকে নির্ণয় করতে সাহায্য করেন।

মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে মুসলিম কবি সাহিত্যিকদের অবদান কোন অংশে কম না হলেও গবেষণার অভাবে তাদের পরিচয় আমাদের কাছে অজ্ঞাত ছিল। তিনিই এঁদের আবিস্কার করে ইতিহাসে প্রতিষ্ঠিত করে আমাদের পুর্বপুরুষদের চিন্তাধারা ও সাহিত্যকর্মের সাথে বর্তমানে গণমানসের সেতুবন্ধন তৈরী করে গেছেন। ইতিহাস জানল যে, বাংলা সাহিত্যের আদি কবি মুসলিম, বাংলা সাহিত্যের বিষয়বস্তুতে বৈচিত্র প্রদান করেন মুসলিম কবিগণ, প্রথম মৌলিক কাব্য রচনা করেন মুসলিম কবি মর্দন ও মাগন ঠাকুর, বাংলা সাহিত্যের ভাষাকে প্রথম শালীনতা দান করেন মুসলিম কবি আলাওল। এককথায় সাহিত্য বিশারদই আবিস্কার করেন যে, বাংলা সাহিত্যের সৃষ্টি ও বৈচিত্র সাধনের মৌলিক অবদান প্রথমতঃ ও প্রধানতঃ মুসলিমদের সাধনা। তাঁর আবিস্কৃত ৫০ জন পদকর্তার মধ্যে শেখ কবিরকে প্রথম মুসলিম পদকর্তা বলে চিহ্নিত করেন। মুসলিম বাংলা সাহিত্যে সপ্তদশ শতাব্দী ছিল স্বর্ণযুগ।

১৩০১রে ১৭ বৈশাখে প্রতিষ্ঠিত বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ বাংলা সাহিত্যের উন্নতি ও সৃষ্টিকল্পে বলিষ্ট পদক্ষেপে অগ্রসর হচ্ছিল তখন শ্রী ব্যোমকেশ মুস্তফী, মহামহোপধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী প্রমুখ মনীষীদের অক্লান্ত পরিশ্রমে বাংলা প্রাচীন পুঁথি সংগৃহীত হতে থাকে। এসময় সাহিত্য বিশারদ কর্তৃক অজ্ঞাতপূর্ব, অশ্রুতনাম, কৌতুলোদ্দীপক, বিস্ময়কর বহু প্রাচীন পুঁথি বিভিন্ন মাসিকপত্রে বের হতে থাকে। বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের তৎকালীন যুগ্ম সম্পাদক ব্যোমকেশ মুস্তফীর অনুরোধে ১৩০৭ সালে পাঁচশ পুঁথির যেই বিবরণ লিখে সাহিত্য বিশারদ পত্রিকার জন্য পাঠান তা কয়েক দফায় খণ্ডাংশে পত্রিকায় বের হয়। ১৩২০ সালের চৈত্রের সংখ্যা দু’খণ্ডে ছয়শ পুঁথির সুপ্রণালীবদ্ধভাবে প্রকাশিত করে তাঁকে সাহিত্য জগতে সুপ্রতিষ্ঠিত হতে পত্রিকার তৎকালীন সম্পাদক ব্যোমকেশ মুস্তফী যথেষ্ট অবদান রাখেন।

জীবনের সুদীর্ঘ পাঁচটি যুগেরও বেশীকাল ধরে অক্লান্ত সাধনা করে বিপুল পুঁথি, পত্রপত্রিকা সংগ্রহ করেন ও সাহিত্য, সমাজ, ইতিহাসের উপর বিরামহীনতার মুন্সী আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ লিখেন। একক প্রচেষ্টায় এত পুঁথি ও পত্রপত্রিকা কেহ সংগ্রহ করেননি এবং সমকালীন এমন কোন সাময়িক পত্রিকা ছিল না য তাঁর লেখা ধারণ করেননি। সংগৃহীত সব পুঁথির পরিচয় তিনি পরিচায়করূপে বা প্রবন্ধাকার রেখে গেছেন। পুঁথি বিষয়ক তাঁর প্রকাশিত প্রবন্ধের সংখ্যা প্রায় পাঁচ শতাধিক এবং প্রায় আড়াই হাজার দুস্প্রাপ্য পুঁথিসংগ্রহ করেন।

মহাকবি আলাওলের ‘পদ্মাবতী’র প্রাচীন পান্ডুলিপির আবিস্কার তার জীবনের প্রথম ও স্মরণীয় ঘটনা, এটি সম্পাদনে তিনি দীর্ঘসময় ব্যয় করেন। তাঁর সম্পাদিত রাধিকার মানভঞ্জ (১৩০৮), মৃগলুদ্ধ, সংবাদ ও সত্য নারায়নের পুঁথি (১৩২২), গঙ্গা মঙ্গল (১৩২৩), গৌরক্ষ বিজয়, শ্রী গৌরাঙ্গ সন্ন্যাস, সারদা মঙ্গল, জ্ঞান সাগর (১৩২৪) প্রভৃতি বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ কর্তৃক প্রকাশিত হয়। তিনি এই পরিষদের সহসভাপতিও (১৩২৬) ছিলেন। ড. মুহাম্মদ এনামুল হকের সহযোগের রচনা করেন ‘আরকান রাজসভায় বাংলা সাহিত্য’ এবং তাঁর রচিত ‘ইসলামাবাদ’ (চট্টগ্রামের ইতিহাস) গ্রন্থটি বাংলা একাডেমী কর্তৃক প্রকাশিত হয় (অক্টোবর ’৬৪)। তাঁর স্মৃতি প্রতি সম্মানস্বরূপ বিনা পারিশ্রমিকে কথাশিল্পী সৈয়দ মুরতজা আলী এটি সম্পাদনা করেন।

বাংলা সাহিত্যের এই মহান গবেষক ১৯৫০এর ২১ জানুয়ারি চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত সাহিত্য সম্মেলনে সভাপতির ভাষণে আক্ষেপ করে বলেন “দরিদ্রের অকিঞ্চিতকর সম্বল লইয়া আমি সাধ্যানুসারে অর্থ ও শরীরে ঘুম ব্যয় করে একটির পর একটি পুঁথি সংগ্রহ করিয়াছি এবং আজীবন যক্ষের মত এই সবকে আগলাইয়াছি। নষ্ট হইতে দেই নাই। কতবার কতভাবে আমি সমাজের দ্বারে দ্বারে আমার সংগৃহীত পুঁথি গুলি প্রকাশের জন্য ভিক্ষার হাত বাড়াইয়াছি। কিন্তু কেহই সাড়া দেয় নাই” (স্মারকগ্রন্থ/১৯৬৯)

তিনি ১৯৩৯এর ৬ মে শনিবার কলকাতার মুসলিম হলে অনুষ্ঠিত বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য সমিতির বার্ষিক অধিবেশনে সভাপতির করেন। এতে বাংলার প্রথম প্রধানমন্ত্রী (এপ্রিল ’৩৭ মার্চ ’৪৩) শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, আমাদের জাতীয় ও বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম ও বঙ্গীয় আইন পরিষদের তৎকালীন স্পিকার স্যার আজিজুল হক (কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য) যথাক্রমে প্রধান অতিথি, প্রধান বক্তা ও উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

এই মহান সাধক গবেষক মুন্সী আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদকে ১৯২০এর ৩১ মার্চ নদীয়া সাহিত্য সভা ‘সাহিত্য সাগর’ ও চট্টগ্রামের পণ্ডিত সমাজ ‘সাহিত্য বিশারদ’ উপাধিতে ভূষিত করে। ১৯৪৫এর গোড়ার দিকে চট্টগ্রামে সাহিত্য বিশারদ জয়ন্তী উদ্‌্‌যাপিত এবং ১৯৬৯ সালে জন্মশতবার্ষিকীতে ড. মুহাম্মদ এনামুল হক ও অধ্যাপক কবীর চৌধুরী সম্পাদনায় বাংলা একাডেমী কর্তৃক ‘স্মারক গ্রন্থ’ প্রকাশিত হয়।

বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের তৎকালীন যুগ্ম সম্পাদক বিশিষ্ট সাহিত্যে শ্রী রাজেন্দ্র সুন্দর ত্রিবেদী এক চিঠিতে সাহিত্য বিশারদকে লিখেন “আপনি যেরূপ অধ্যাবসায় যত্ন ও পরিশ্রম করে বাংলার প্রাচীন পুঁথির বিবরণ সংগ্রহ করে পাঠাচ্ছেন এতে আপনার কাছে সমাজ চিরঋণী হয়ে থাকবে। আপনার ঋণ পরিশোধে আমরা অক্ষম। আপনার পুরস্কার ভবিষ্যত লেখকদের হাতে। বর্তমানের অধম সমাজ আপনার পুরস্কার দিতে পারবে না।” (২২ চৈত্র, ১৩২১)। কথাশিল্পী অধ্যাপক আবুল ফজল তাঁকে মুল্যায়ন করেছেন : একথা বোধ হয় জোর করে বলা যায় তাঁর সংগৃহীত গ্রন্থাবলীর সাহায্য ছাড়া আমাদের সাহিত্যের কোন পুর্ণাঙ্গ ইতিহাস রচিত হতে পারে না (মাহে নও / নভেম্বর ১৯৫৩)

স্বদেশের ও মাতৃভূমির প্রাচীন পুণ্যময়ী গাঁথা গাইবার যেই সাধনা তিনি স্বেচ্ছায় বরণ করেছিলেন সেই সাধনা আনন্দের মাঝেই তিনি তার পুরস্কার লাভ করে গেছেন (স্মারকগ্রন্থ/শুভেন্ধু শেখর মুখোপাধ্যায়/১৯৬৯)

তাঁর রাধিকার মানভঙ্গ (১৩০৮) গ্রন্থের ভূমিকায় মহামহোপধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী লিখেন “শ্রী আবদুল করিম চট্টগ্রামে একটি বাংলা বিদ্যালয়ের পণ্ডিত। তার সাংসারিক অবস্থা ভাল নয়, তবুও তিনি সাহিত্য সেবা অকাতরে পরিশ্রম করে থাকেন। বাংলা সাহিত্যের প্রতি প্রগাঢ় অনুরাগের প্রশংসা না করে থাকা যায় না। তিনি এই দুলর্ভ গ্রন্থের সম্পাদনার কাজে যেই পরিশ্রম, কৌশল, সহৃদয়তা ও সুক্ষ্মদর্শিতা দেখিয়েছেন তা সমগ্র বাংলায় কেন সমগ্র ভারতেও বোধ হয় সচরাচর মিলে না। এক একবার মনে হয় যেন ‘জার্মান এডিটর’ এই গ্রন্থ সম্পাদনা করেছেন” (১৩০৮ সাল)। পাবলো নিরুদার ভাষায় বাংলা সাহিত্যের এই হিরন্ময়ী গবেষকের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই।

লেখক : বাংলা একাডেমির জীবন সদস্য ও কলামিস্ট।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআজাদী চট্টলার মাটি ও মানুষের কথা তুলে ধরে
পরবর্তী নিবন্ধসাহিত্যবিশারদ মুন্সী আব্দুল করিম