বাংলা সাহিত্যের ‘স্বজন’ উইলিয়াম রাদিচের জীবনাবসান

| বুধবার , ১৩ নভেম্বর, ২০২৪ at ৪:৫৩ পূর্বাহ্ণ

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বহু কবিতা, গল্প এবং মধুসূদন দত্তের ‘মেঘনাদবধ কাব্য’ যার তর্জমায় ইংরেজি ভাষাভাষী পাঠক মহলে পৌঁছে গিয়েছিল অনায়াসে, সেই কবি, গবেষক ও অনুবাদক উইলিয়াম রাদিচে আর নেই।

গত সোমবার নর্থ ইংল্যান্ডে রাদিচের মৃত্যু হয়; তার বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর। তার চলে যাওয়ার খবর নিশ্চিত করেছেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী কবি কায়সার হক। তিনি বলেন, নিউ ক্যাসলে থাকতেন রাদিচে। জীবনের শেষ এক দশকের বেশি সময় নর্থ ইংল্যান্ডে থাকতেন। সেখানে থেকেই তিনি চলে গেলেন। খবর বিডিনিউজের।

এক দশক আগে এক সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হওয়ায় রাদিচে তার লেখালেখির ‘ক্ষমতা হারিয়েছিলেন’ বলে আক্ষেপ করছিলেন কায়সার। এক সময়ের ঘনিষ্ঠ রাদিচের সঙ্গে বহুকাল সরাসরি দেখাসাক্ষাৎ না হলেও টেলিফোন তারা কথা বলেছেন, একজন আরেকজনের খোঁজখবর করেছেন। তিনি বলেন, যতদূর মনে পড়ে আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে রাদিচের সঙ্গে আমার যোগাযোগ হয়। শামসুর রাহমানের কিছু কবিতা আমি অনুবাদ করেছিলাম। রাদিচে সেসবের কিছু রিভিউ লিখেছিলেন, পত্রিকাতে প্রকাশও হল। কদিন আগেও রাদিচের কথা ভেবেছিলাম। কি আশ্বর্য, এখন তার মৃত্যুর কথা বলতে হচ্ছে।

১৯৫১ সালে জন্ম নেওয়া রাদিচের মা বেটি রাদিচেও ছিলেন ধ্রুপদী ল্যাটিন সাহিত্যকর্মের অনুবাদক ও সম্পাদক। তার পূর্বপুরুষ যুক্তরাজ্যে এসেছিলেন ইটালি থেকে। সত্তরের দশকের গোড়ায় রাদিচে অঙফোর্ডে ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে পড়া শুরু করেন। তার এক বছর আগে তিনি ভারতের একটি স্কুলে শিক্ষকতা করেন, সেই সুবাদে কলকাতা, দিল্লি, বেনারস, চেন্নাইয়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন। ভারত সফরের আগেই পরিচালক লেখক আঁকিয়ে সত্যজিৎ রায়ের সিনেমা রাদিচের ভেতরে মুগ্ধতা তৈরি করে। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ভারতীয় সংস্কৃতির প্রতি তার আগ্রহ ছিল যুবক বয়স থেকেই।

ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের স্কুল অব ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজে (সোয়্যাস) বাংলা ভাষা নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেছিলেন রাদিচে। সেখানকার অধ্যাপক তারাপদ মুখোপাধ্যায়ের কাছে বাংলা শিখে তার শিষ্য হয়ে উঠেছিলেন। সেখানকার কারো কারো ধারণা, একাত্তরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধও রাদিচেকে আলোড়িত করেছিল, বাংলা ভাষার প্রতি তার আগ্রহ বাড়ার এটাও একটা কারণ। পরে সোয়্যাসের বাংলা বিভাগে অধ্যাপনা করেন রাদিচে।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবিত ও মৃত’, ‘পোস্টমাস্টার’, ‘কাবুলিওয়ালা’র ভাষান্তর ছাড়াও রবীন্দ্রনাথের ‘কণিকা’, ‘লিখন’, ‘স্ফুলিঙ্গ’র অণুকবিতাগুলি নিয়ে রাদিচে লেখেন ‘পার্টিকলস, জটিংস, স্পার্কস’। রবীন্দ্রনাথের গীতাঞ্জলির ইংরেজি ভাষান্তরের মূল পাণ্ডুলিপি নিয়ে গবেষণাধর্মী কাজও করেছেন রাদিচে। অনুবাদ করেছেন রবি ঠাকুরের ৩০টি গল্প, যা প্রকাশ হয়েছিল পেঙ্গুইনে। রাদিচের ভাষান্তরে ‘দেবতার গ্রাস’ (স্ন্যাচড বাই দ্য গডস)-এর অপেরাধর্মী উপস্থাপনা করেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ সুরকার পরম বীর। উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর ‘টুনটুনির বই’ও ভাষান্তরের জন্য বেছে নিয়েছিলেন রাদিচে। ‘টুনটুনির বই’ তার হাতে হয়ে ওঠে ‘দ্য স্টুপিড টাইগার অ্যান্ড আদার টেলস’। তিনি ‘মেঘনাদবধ কাব্য’ নিয়ে গবেষণা করেন। তর্জমাও করেন ‘দ্য পোয়েম অব দ্য কিলিং অব মেঘনাদ’। এছাড়া ইংরেজিতে লেখা কবিতা, প্রবন্ধ ও সম্পাদনাকর্মের বিপুল সম্ভার রেখে গেছেন উইলিয়াম রাদিচে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅনাকাঙ্ক্ষিত বক্তব্যের জন্য দুঃখিত রিজভী
পরবর্তী নিবন্ধগাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে ইসরায়েল : সৌদি যুবরাজ