বাংলা ভাষা-প্রযুক্তির ওয়েবসাইটের সঙ্গে উন্মুক্ত হলো ‘ধ্বনি’

| শনিবার , ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ at ১০:৩০ পূর্বাহ্ণ

বাংলাকে বিশ্বে নেতৃস্থানীয় ভাষার কাতারে নেওয়ার লক্ষ্য সামনে রেখে ভাষা-প্রযুক্তি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিষয়ক প্রযুক্তির প্ল্যাটফর্ম বাংলা ডট গভ ডট বিডি এবং বাংলা থেকে আইপিএতে রূপান্তরের সফটওয়্যার ‘ধ্বনি’র পরীক্ষামূলক সংস্করণ উম্মুক্ত করেছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ। গতকাল শুক্রবার এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে টুল দুটির উদ্বোধন করেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল ‘গবেষণা ও উন্নয়নের মাধ্যমে তথ্য প্রযুক্তি বাংলা ভাষা সমৃদ্ধকরণ’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। ‘এর উদ্দেশ্য বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্মে নেতৃস্থানীয় ভাষা হিসেবে বাংলা ভাষাকে প্রতিষ্ঠা করা। বিশেষ করে, কম্পিউটিং ও আইসিটিতে বাংলা ভাষাকে অভিযোজিত করা বা খাপ খাইয়ে নেওয়া।’ খবর বিডিনিউজের।
আইপিএ বা ইন্টারন্যাশনাল ফোনেটিক অ্যালফাবেট হল আন্তর্জাতিক ধ্বনিভিক্তিক প্রতিবর্ণীকরণ পদ্ধতি বা আন্তর্জাতিক ধ্বনিলিপি, যার উদ্দেশ্য হল বিশ্বের সব ভাষার সব ধ্বনিকে এক লিপিতে প্রমিতভাবে উপস্থাপন করা। বাংলা থেকে আইপিএতে রূপান্তরের সফটওয়্যার ধ্বনি সেই প্রতিবর্ণীকরণের কাজটিই করবে। আইপিএ ডট বাংলা ডট গভ ডট বিডিতে (রঢ়ধ.নধহমষধ.মড়া.নফ) ‘ধ্বনি’ সবার জন্য পরীক্ষামূলকভাবে উম্মুক্ত করা হয়েছে বলে জানান পলক। তিনি বলেন, ‘আশা করছি ২০২১ সালের মধ্যে অধিকাংশ সেবা জনগণের কাছে পৌঁছাতে পারব। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলা ডট গভ ডট বিডি এবং ধ্বনি সফটওয়্যারটির পরীক্ষামূলক সংস্করণ প্রকাশ করছি। বাংলাকে জাতিসংঘের ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে রিয়েল-টাইম অটোমেটিক স্পিচ টু স্পিচ মেশিন ট্রান্সলেশনসহ বিভিন্ন রিসোসের্র প্রয়োজন হয়। এই প্রকল্প এই সার্ভিসগুলো তৈরি করছে।’ এ প্রকল্পের আওতায় ভাষা-প্রযুক্তি ও কৃত্রিম-বুদ্ধিমত্তার অনেকগুলো সেবা ও রিসোর্স তৈরি হচ্ছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২০টি পাবলিক ফেইসিং সার্ভিস, ১৬টি রিসার্চ টুলস ও রিসোর্স, ৮ ধরনের স্ট্যান্ডার্ড ও প্রিন্টেড রিসোর্স এবং ১০ ধরনের করপাস বা ডেটাসেট এর উল্লেখ্যযোগ্য। এর মাধ্যমে পৃথিবীর সকল বাংলা ভাষাভাষী যেমন এর প্রত্যক্ষ উপকার পাবেন, ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী সদস্য ও বাক-দৃষ্টি-শ্রবণ প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীও সুফল পাবে। সাধারণ জনগণকে সেবা দিতে বাংলাভাষাকে আরো সমৃদ্ধ করতে ১৬টি সফটওয়্যার টুলস পর্যায়ক্রমে ২০২৩ সালের মধ্যে উম্মুক্ত করা হবে বলে জানান পলক।
অনুষ্ঠানে ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, ‘ভাষা নিয়ে যারা গবেষণা করেন, তাদের জন্য এসব অমূল্য সম্পদ। তবে সাধারণ মানুষের তেমন কাজে লাগবে না। যারা গবেষক, তারা এর গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারবেন এবং তাদের অনেক সুবিধা হবে। যারা বাংলাদেশে গবেষণা করে, তাদের জন্য এটি অমূল্য সম্পদ হবে। আশা করছি কিছু দিনের মধ্যে অন্যান্য কাজ শেষ হলে সাধারণ মানুষের কাজে আসবে।’
জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষক অধ্যাপক আ ফ ম দানীউল হক, বিসিসির নির্বাহী পরিচালক পার্থ প্রতীম দেবসহ অন্যান্যরা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
বাংলা ডট গভ ডট বিডি : বাংলা ডট গভ ডট বিডিকে বলা হচ্ছে ‘ভাষা-প্রযুক্তি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিষয়ক প্রযুক্তির’ প্ল্যাটফর্ম। এ প্রকল্পের মাধ্যমে তৈরি করা বাংলা ভাষার বিভিন্ন সেবা এই প্লাটফর্ম থেকে পাওয়া যাবে। আপাতত এটি প্রোডাক্ট শোকেইস ও ইনফরমেশন পোর্টাল হিসেবে ব্যবহৃত হবে। এর মাধ্যমে ব্যবহারকারী ও গবেষকদের মধ্যে যোগাযোগ গড়ে তোলা হবে। এই পোর্টালটিই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিভর্র বাংলা ভাষা-প্রযুক্তির হাব হয়ে উঠবে বলে সরকার আশা করছে।
আইপিএ বিষয়ক এপ্লিকেশন ‘ধ্বনি’ : এটি মূলত একটি কনভার্টার ইঞ্জিন, যা বাংলা থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আইপিএতে রূপান্তর করবে। অর্থাৎ, একটি বাংলা শব্দের উচ্চারিত রূপ আইপিএতে কেমন হবে, তা দেখিয়ে দেবে। এই এপ্লিকেশনে অন-স্ক্রিন কিবোর্ড ও এমবেডেড ফন্ট রয়েছে। এঙপোর্ট ও কপির অপশন রয়েছে। এটি তৈরির ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। ব্যবহারকারীদের অভিজ্ঞতা জেনে পরীক্ষামূলক সংস্করণ থেকে পরে স্টেবল ভার্সন প্রকাশ করা হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসড়ক দুর্ঘটনায় ভেঙে গেল এক চিকিৎসক দম্পতির স্বপ্ন
পরবর্তী নিবন্ধবাংলা বাঁচাও