বাংলা ভাষাকে ধ্বংসের নানা কারসাজি চলছিল

আজাদী ডেস্ক | বৃহস্পতিবার , ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ at ৬:৫১ পূর্বাহ্ণ

পাকিস্তান আমলে এসে আরবি হরফ প্রবর্তনের পক্ষে একদিকে ছিল ধর্মীয় আবেগ, অন্যদিকে রাষ্ট্রীয় সংহতির যুক্তি। বলা হচ্ছিল, উর্দু ছাড়াও পশতু, সিন্ধি, পাঞ্জাবি ভাষায় আরবি হরফ যেহেতু ব্যবহৃত হচ্ছে এখন বাংলায় এই হরফের প্রবর্তন করলে পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় ও সাংস্কৃতিক সংহতি দৃঢ় হবে। মূলত, এটার আড়ালে ছিল বাংলা ভাষাকে ধ্বংসের কারসাজি। এর প্রধান উদ্যোক্তা ছিলেন কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ফজলুর রহমান। ১৯৪৮ সালে ফজলুর রহমান এ কাজে সহযোগিতার জন্য সৈয়দ আলী আহসানকে এ বিষয়ে সাহায্য করতে বলেন। সৈয়দ আলী আহসান বলেন, . মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্‌ এ বিষয়ে উপযুক্ত ব্যক্তি। ফজলুর রহমানের নির্দেশে তৎকালীন কেন্দ্রীয় শিক্ষা উপদেষ্টা মাহমুদ হাসান চিঠি দেন ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহেক। চিঠিতে উল্লেখ ছিল, ‘সরকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন পাকিস্তানকে ইসলামি মতে গঠন করতে এবং সেই উদ্দেশ্যে তারা বাংলা ভাষায় উর্দু অক্ষর প্রবর্তন করতে চান। এর জন্য মুহম্মদ শহীদুল্লাহ সাহায্য পেলে সরকার উপকৃত হবে।’

. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্‌ এ চিঠির উত্তর না দিয়ে তার ভাবনার কথা লিখে সংবাদপত্রে পাঠান, যা কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। পরে ১৯৪৯ সালের ১৪ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বাসভবনে এক অনুষ্ঠানে তার সঙ্গে মাহমুদ হাসানের দেখা হলে মাহমুদ হাসান তার এ কাজের জন্য মুহম্মদ শহীদুল্লাহেক দেশদ্রোহী বলে উল্লেখ করেন। ১৯৪৮ সালের মার্চের ভাষা আন্দোলন স্তিমিত হয়ে এলেও পাকিস্তান সরকারের আরবি হরফ প্রচলনের বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানে প্রতিক্রিয়া ও প্রতিরোধ অব্যাহত থাকে। ১৯৪৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা সভায় আরবি হরফ প্রচলনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান। এতে সভাপতিত্ব করেন মুস্তাফা নূরউল ইসলাম। এ সভায় বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থীদের নিয়ে একটি সংসদ গঠন করা হয়। মো. নুরুল ইসলাম সভাপতি এবং ইলা দাশগুপ্তা ও আশরাফ সিদ্দিকী যুগ্মসাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

পাকিস্তানের রাজধানী হলো পশ্চিম পাকিস্তানে। ব্যবসাবাণিজ্য, অফিসআদালত সবই পশ্চিমাঞ্চলকে ঘিরে বেড়ে উঠছিল। শিল্পায়ন, আমদানি, বিদেশি সাহায্য কেন্দ্রীভূত হচ্ছিল পশ্চিমে। পূর্ব বাংলা যে ধীরে ধীরে অভ্যন্তরীণ উপনিবেশ হয়ে উঠছে, সেই বোধও গ্রাস করছিল এ অঞ্চলের মানুষদের। বাঙালি জাতিকে পঙ্গু করে দেওয়ার পাঁয়তারা চলছিল। আরবি হরফে বাংলা লেখার চেষ্টা বাঙালি জাতীয়তাবাদের ওপর আঘাত।

পূর্ববর্তী নিবন্ধহাছান মাহমুদ ও জয়শঙ্করের হৃদ্যতাপূর্ণ বৈঠক
পরবর্তী নিবন্ধসীমান্তে কমেছে গোলাগুলি তবে কাটেনি আতঙ্ক