চলতি সপ্তাহের পাঁচটি কর্মদিবসের মধ্যে চার দিনই ‘বাংলা ব্লকেড’ নামে অবরোধ কর্মসূচি দেয়ায় ব্যাপক ভোগান্তির পর সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে আন্দোলনকারীরা ‘নমনীয়’ কর্মসূচি দিয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার প্রায় ৪ ঘণ্টা ঢাকার শাহবাগ মোড় অবরোধ করে রাখার পর নতুন কর্মসূচি হিসেবে শুক্রবার বিকেল ৪ টায় সারাদেশের বিভিন্ন ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করার ঘোষণা দেওয়া হয়। খবর বিডিনিউজের।
বৃহস্পতিবার রাত ৯ টার দিকে শাহবাগ মোড় ত্যাগ করার আগে এই সিদ্ধান্ত জানান আন্দোলনকারী ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ এর অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম।
তিনি বলেন, আজকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় আমাদের আন্দোলনকারীদের উপর হামলা করা হয়েছে, বাধা দেওয়া হয়েছে। এই হামলার প্রতিবাদ ও এক দফা দাবিতে আগামীকাল বিকেল ৪ টায় সারাদেশে বিভিন্ন ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল করে ২০১৮ সালে সরকারের পরিপত্র সমপ্রতি হাই কোর্ট অবৈধ ঘোষণা করলে নতুন এই পরিস্থিতি তৈরি হয়। পরিপত্র বহাল রাখা অর্থাৎ কোটা বাতিলের দাবিতে ফের আন্দোলন শুরু হয়। পরে অবশ্য তারা কোটা সংস্কারের কথা বলে। চলতি সপ্তাহের রবি ও সোমবার আধাবেলা, বুধবার দিনভর সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে হাই কোর্টের আদেশে আপিল বিভাগ চার সপ্তাহের স্থিতাবস্থা দিলেও বৃহস্পতিবার বিকালেও শাহবাগে অবরোধের ডাক দেয় আন্দোলনকারীরা।
আগের তিন দিন বিনা বাধায় কর্মসূচি পালন করলেও এদিন পুলিশ তাদেরকে বাধা দেয়। চট্টগ্রাম ও কুমিল্লায় সড়ক অবরোধ করতে যাওয়া শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটার ঘটনা ঘটেছে। এদিন ছাত্রলীগও মাঠে নেমেছে। কোটা আন্দোলনকারীদের জমায়েত থেকে কিছুটা দূরে সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্য পাদদেশে জমায়েত হয় ক্ষমতাসীন দল সমর্থন ছাত্র সংগঠনটিও।
এর মধ্যে হাই কোর্টের রায়ের বাস্তবায়নযোগ্য অংশ প্রকাশ হয়। এতে বলা হয়, সরকারি চাকরিতে সবগুলো কোটাই থাকতে হবে। তবে কোটায় যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে মেধা তালিকা থেকে নিয়োগ দেওয়া যাবে। আর সরকার চাইলে কোটার হার পরিবর্তন করতে পারেন। অবশ্য ২০১৩ সাল থেকেই কোটায় যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে মেধা তালিকা থেকে তা পূরণ করা হচ্ছে। ২০১৮ সালের পরিপত্রের আগে মোট ৫৬ শতাংশ কোটায় এবং ৪৪ শতাংশ মেধা তালিকায় নিয়োগ করার কথা বলা হলেও প্রথম শ্রেণির চাকরিতে মেধা তালিকা থেকে ৬২ শতাংশ নিয়োগের তথ্য মিলেছে। শাহবাগে পুলিশের বাধার মধ্যে চার ঘণ্টা অবস্থান শেষে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ এর অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, আমরা চাচ্ছি সংসদে জরুরি অধিবেশন ডেকে আমাদের এক দফার বিষয়ে আইন পাস করতে হবে, তার আগ পর্যন্ত আমরা রাজপথে থাকব। আন্দোলনকারীদের এক দফা দাবি হল: ‘সকল গ্রেডে সকল প্রকার অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে সংবিধানে উল্লেখিত অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য কোটাকে ন্যূনতম পর্যায়ে এনে সংসদে আইন পাস করে কোটা পদ্ধতিকে সংশোধন করতে হবে।
শাহবাগে আসার জন্য বিকেল ৪ টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে জড়ো হয়ে মিছিল বের করেন আন্দোলনকারীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে বিকাল ৫ টায় শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিয়ে যান চলাচলে ব্যাঘাত ঘটায় তারা।