প্রাবন্ধিক, গবেষক, সাহিত্য সমালোচক ও সমাজ বিশ্লেষক আবুল কাসেম ফজলুল হককে আগামী তিন বছরের জন্য বাংলা একাডেমির সভাপতির দায়িত্ব দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। ৮৪ বছর বয়সী আবুল কাসেম ফজলুল হক জীবনের চার দশক অধ্যাপনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে। সর্বস্তরে বাংলা ভাষার ব্যবহার নিশ্চিতে সোচ্চার রাষ্ট্রভাষা বাংলা রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক তিনি। খবর বিডিনিউজের।
গতবছর আবুল কাসেম ফজলুল হক তার জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বলেছিলেন, তরুণরা এখন নতুন নেতৃত্ব চায়। বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ–বিএনপি, ভারতে কংগ্রেস–বিজেপির মধ্যে এখন শৃঙ্খলা নেই। সারাবিশ্বে গণতন্ত্রকে এখন নির্বাচনতন্ত্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এটার এখন পরিবর্তন দরকার। বর্তমানে নতুন নেতৃত্ব, নতুন রাজনৈতিক দল প্রয়োজন।
আবুল কাসেম ফজলুল হক বাংলা একাডেমিতে সেলিনা হোসেনের স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন। ২০২২ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি একাডেমির সভাপতি পদে দায়িত্ব পাওয়া কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ১৭ অক্টোবর পদত্যাগ করেন।
গতকাল তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, আমি এখনো চিঠি হাতে পাইনি। হয়ত আমার দপ্তরে পাঠিয়ে থাকতে পারে। তবে যারা আমাকে এই পদে মনোনীত করেছেন, তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই। একই সাথে এটাও বলব, বাংলা একাডেমি আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক মননের জাতীয় প্রতিষ্ঠান। কিছু সংকীর্ণ লোকজন এটি পরিচালনা করার কারণে ধীরে ধীরে দলীয় প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছিল। আমাদের সবাইকে চেষ্টা করতে হবে। এটি যেন জাতীয় প্রতিষ্ঠান হয়ে থাকতে পারে এবং বাংলা একাডেমির যে কাজ, তা যেন করতে পারে।
আবুল কাসেম ফজলুল হকের জন্ম ১৯৪০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায়। ময়মনসিংহ জিলা স্কুল থেকে মাধ্যমিক এবং আনন্দমোহন কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষে করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই শিক্ষকতা শুরু করেন আবুল কাসেম ফজলুল হক। পরে বাংলা বিভাগের সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। তার লেখা ২১টির মতো বই প্রকাশিত হয়েছে, যার মধ্যে বাংলাদেশের সংগ্রামের ইতিহাস নিয়ে ‘মুক্তিসংগ্রাম’; ‘কালের যাত্রার ধ্বনি’; ‘একুশে ফেব্রুয়ারি আন্দোলন ’এর মত বই যেমন আছে, তেমনি আছে রাজনীতি, রাষ্ট্র ও সমাজ চিন্তার ফসল ‘নৈতিকতা: শ্রেয়োনীতি ও দুর্নীতি’; ‘যুগসংক্রান্তি ও নীতিজিজ্ঞাসা’, ‘মাও সেতুঙের জ্ঞানতত্ত্ব’; ‘রাজনীতি ও দর্শন’ ‘আশা–আকাঙ্ক্ষার সমর্থনে’; ‘বাঙলাদেশের রাজনীতিতে বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা’; ‘অবক্ষয় ও উত্তরণ’; ‘রাজনীতি ও সংস্কৃতি: সম্ভাবনার নবদিগন্ত’; ‘রাষ্ট্রচিন্তায় বাংলাদেশ’। সাহিত্য নিয়ে তার কাজের মধ্যে ‘উনিশ শতকের মধ্যশ্রেণি ও বাঙলা সাহিত্য’; ‘বাঙলাদেশের প্রবন্ধ সাহিত্য’, ‘সাহিত্যচিন্তা’; ‘সাহিত্য ও সংস্কৃতি প্রসঙ্গে’; ‘সংস্কৃতির সহজ কথা’; ‘আধুনিকতাবাদ ও জীবনানন্দের জীবনোৎকণ্ঠা’ অন্যতম। এছাড়া ‘বার্ট্রান্ড রাসেল প্রণীত: রাজনৈতিক আদর্শ’; ‘বার্ট্রান্ড রাসেল প্রণীত: রাজনৈতিক আদর্শ’ নামে দুটি অনুবাদগ্রন্থও আছে তার। কয়েকটি বইয়ের সম্পাদনাও করেছেন। আশির দশক থেকে লোকায়ত নামে একটি মননশীল পত্রিকার সম্পাদনা করে আসছেন আবুল কাসেম ফজলুল হক। আহমদ শরীফ প্রতিষ্ঠিত স্বদেশ চিন্তা সংঘের সভাপতির দায়িত্বও তিনি পালন করেছেন। পত্র–পত্রিকায় কলাম লিখেছেন নিয়মিত। ১৯৮১ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পান এই লেখক।
তার দুই সন্তানের মধ্যে শুচিতা শরমিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। আর ফয়সল আরেফিন দীপন জাগৃতি প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী। ২০১৫ সালের ৩১ অক্টোবর দীপনকে হত্যা করে জঙ্গিরা।