এমভি বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজ ইউক্রেনে যাওয়ার বিষয়ে বিবৃতি দিয়েছে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি)। বিবৃতিতে বিএসসির পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিরূপ মন্তব্য ও সংবাদ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং অগ্রহণযোগ্য বলে উল্লেখ করেন বিএসসির উপ-মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) তারেক উল ইসলাম।
গণমাধ্যমে পাঠানো সেই বিবৃতিতে বলা হয়, ডেনমার্ক ভিত্তিক চার্টারার ডেলটা করপোরেশনের সঙ্গে বিএসসির সম্পাদিত চার্টার পার্টি অ্যাগ্রিমেন্ট অনুযায়ী টাইম চার্টার ভিত্তিতে জাহাজটি ভাড়ায় চলছিল। গত ২৬ জানুয়ারি মুম্বাই বন্দর থেকে পণ্য বোঝাই করে এটি তুরস্কের ইরেগলিতে পণ্য খালাস সম্পন্ন করে। সেখান থেকে পূর্বনির্ধারিত ভয়েজ অর্ডার অনুযায়ী ২১ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের ওলভিয়া বন্দরের উদ্দেশে জাহাজটি রওনা হয়। ২২ ফেব্রুয়ারি জাহাজটি ইউক্রেনের ওলভিয়া বন্দরের বহির্নোঙরে পৌঁছায়। পরদিন বন্দর পাইলটের মাধ্যমে একত্রে ২১টি জাহাজ কনভয় আকারে ইনার অ্যাংকরেজে নিয়ে যাওয়া হয়। এই বন্দর থেকে সিরামিক ক্লে নিয়ে ইতালির রেভেনা বন্দরের উদ্দেশে রওনা হওয়ার কথা ছিল বাংলার সমৃদ্ধির। কিন্তু ২৪ ফেব্রুয়ারি ভোরে ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরু হলে অনতিবিলম্বে লোডিং বাতিল করে জাহাজটি উক্ত বন্দর ছেড়ে আসার জন্য মাস্টারকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। কিন্তু বন্দর কর্তৃক পাইলট সরবরাহ না করা, পোর্ট অপারেশন কার্যক্রম বন্ধ হওয়া এবং বন্দর চ্যানেলে মাইন পোতার ফলে ওলভিয়া বন্দরে আটকে পড়ে জাহাজটি। এরপর যুদ্ধ চলার মধ্যে ২ মার্চ একটি মিসাইল আঘাত হানে বাংলার সমৃদ্ধির ওপর, তাতে আমাদের একজন প্রিয় সহকর্মী থার্ড ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুর রহমান মারা যান। এতে বিএসসি পরিবার খুবই শোকাহত। মিসাইলের আঘাতে জাহাজের মূল নিয়ন্ত্রণ কক্ষ (নেভিগেশন ব্রিজ) পুরোপুরি বিধ্বস্ত এবং প্রধান বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়ে।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, আন্তর্জাতিক শিপিং নিয়মানুযায়ী চার্টারার ও বিএসসি’র মধ্যে ৩ মাসের জন্য গত ১৫ জানুয়ারি চার্টার পার্টি সম্পাদিত হয়। উক্ত চার্টার পার্টি সম্পাদনকালে কোনো রূপ যুদ্ধ ঝুঁকি ঘোষণা না থাকায় ইউক্রেনকে ট্রেডিং এরিয়ার বাইরে রাখা হয়নি। লন্ডন জয়েন্ট ওয়ার কমিটি গত ১৫ ফেব্রুয়ারি সী অব আজব এবং ব্ল্যাকসী এরিয়াকে যুদ্ধঝুঁকি এলাকা হিসেবে ঘোষণা করে, যা ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হবে মর্মে বিমা সংস্থা নিশ্চিত করেন। কিন্তু জাহাজটি পণ্য খালাসের জন্য ১৪ ফেব্রুয়ারি তুরস্কের ইরেগলি (ব্ল্যাকসী এরিয়া) বন্দরে পৌঁছে অর্থাৎ ওয়ার জোন এরিয়া ঘোষণার আগেই জাহাজটি সেখানে পণ্য খালাসের জন্য গমন করে। যুদ্ধঝুঁকি এলাকা থেকে পরবর্তী বন্দরের জন্য পণ্য বোঝাই করা অর্থাৎ ইউক্রেন-ইতালি ভয়েজের বিষয়ে আন্তর্জাতিক সংস্থা (ইউএন, ন্যাটো, আইএমও) এবং ফ্ল্যাগ স্টেটের কর্তৃক কোনো নিষেধাজ্ঞা ছিল না। এ ছাড়া, উক্ত ভয়েজের জন্য বিধি মোতাবেক ইন্স্যুরেন্স কভারেজ প্রাপ্তি এবং জাহাজের ক্যাপ্টেন কর্তৃক কোনো রূপ বাধা বা আপত্তি উত্থাপিত না হওয়ার ফলে চার্টার পার্টি অ্যাগ্রিমেন্টের যুদ্ধ ঝুঁকি সংক্রান্ত ধারার বিধান মোতাবেক ভয়েজ অর্ডার বাতিল করার কোনোরূপ রিজনেবল জাজমেন্ট তৈরি হয়নি। তৎপ্রেক্ষিতে চার্টারার প্রদত্ত পূর্বনির্ধারিত ভয়েজ আদেশ বাতিলপূর্বক যুদ্ধঝুঁকি এলাকা থেকে লোডিং ছাড়া জাহাজ ফেরত আসার নির্দেশনা দেওয়ার কোনো আইনগত সুযোগ/এখতিয়ার বিএসসির ছিল না। যুদ্ধঝুঁকি এলাকায় কার্গো অপারেশন চলমান ছিল বিধায় সংশ্লিষ্ট পোর্ট অথরিটি বিএসসির জাহাজসহ ২১টি জাহাজ একত্রে কনভয় আকারে ইনার অ্যাংকরেজে ঢুকিয়েছে। ইনার অ্যাংকরেজে জাহাজ ঢোকানোর পরপরই যুদ্ধ শুরু হওয়া এবং বিএসসির জাহাজ মিসাইল হামলার শিকার হওয়া সংক্রান্ত ঘটনাটি খুবই অনাকাঙ্ক্ষিত এবং বিএসসি কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণ বহির্ভূত।
জাহাজে অবস্থানরত নাবিকদের জীবন রক্ষার্থে বিএসসি, নৌপরিবহন অধিদফতর, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পোল্যান্ড ও রোমানিয়ার বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূতের সময়োচিত ও সম্মিলিত প্রচেষ্টায় কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে দ্রুততম সময়ে অর্থাৎ বিগত ৩ মার্চ জাহাজটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণাপূর্বক ২৮ জন নাবিককে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয় এবং দেশে প্রত্যাবর্তনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া, মরদেহটি জাহাজ থেকে স্থানান্তর করে পোল্যান্ডের বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূতের সহায়তায় ইউক্রেনে মর্গে নিরাপদে রাখা হয়েছে।












