বাংলার মেয়েরা আবারো চ্যাম্পিয়ন

সাফ নারী ফুটবল

নজরুল ইসলাম | বৃহস্পতিবার , ৩১ অক্টোবর, ২০২৪ at ৬:৩৯ পূর্বাহ্ণ

আরো একবার নারী ফুটবলে দক্ষিণ এশিয়ার সেরা বাংলার মেয়েরা। বাংলাদেশের ফুটবল আরো একটি ইতিহাস গড়ল মেয়েদের হাত ধরে। দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্বের আসর ‘সাফ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ’ এর বর্তমান চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ আরো একবার নিজেদের করে রাখল এই শিরোপা। ট্রফি জেতা ছাড়াও টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছেন ঋতুপর্ণা চাকমা। সেরা গোলরক্ষক নির্বাচিত হয়েছেন বাংলাদেশের রূপনা চাকমা। গত আসরেও সেরা গোলরক্ষকের পুরস্কার জিতেছিলেন রূপনা। তবে এবারের আসরে সর্বোচ্চ গোলদাতা এবং ফেয়ার প্লে ট্রফি দুটি হাতছাড়া হয়ে গেছে বাংলাদেশের। এ দুটি পুরস্কার জিতেছে ভুটান।

টুর্নামেন্টের সবচাইতে সফল দল ভারতকে হারিয়ে শুরু বাংলার নারীদের এই স্বপ্নের অভিযান। এরপর ভুটানকে হারানোর পর ফাইনালে স্বাগতিক নেপালকে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বার দক্ষিণ এশিয়ার সেরা বাংলার মেয়েরা। এ যেন একই চিত্রনাট্যের পুনর্মঞ্চায়ন। ফাইনালে প্রতিপক্ষ এক, ভেন্যু এক। সেই সাথে ফলাফলও এক। এদিন কাঠমন্ডুর রাজা দশরথ স্টেডিয়াম ছিল নেপালি সমর্থকদের দ্বারা ঠাসা। হাতে গোনা গুটিকয়েক বাংলাদেশি সম্বল ছিল সাবিনা, মনিকা, ঋতুপর্ণাদের। কিন্তু বাংলার মেয়েদের অসাধারণ মনোবল আর মাঠে দৃঢ়চেতা লড়াই পরাস্ত করে হিমালয় কন্যাদের। দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ফাইনালে বাংলাদেশের মেয়েরা ২১ গোলে স্বাগতিক নেপালকে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মত দক্ষিণ এশিয়া জয়ের উল্লাসে মাতে। ২০২২ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর এই মাঠে স্বাগতিক নেপালকে ৩১ গোলে হারিয়ে টুর্নামেন্টে ভারতের একক আধিপত্য খর্ব করে প্রথমবার শিরোপা জিতেছিল মনিকাসাবিনারা। সে শিরোপা ধরে রাখল এবারেও। এবারে বাংলাদেশের জয়ের নায়ক দুই চাকমা। মনিকা চাকমা এগিয়ে দিয়েছিলেন দলকে। আর নেপালের কফিনে শেষ পেরেকটা ঠুকে দিলেন ঋতুপর্ণা চাকমা।

হিমালয় কন্যা নেপাল সর্বাধিক ফাইনালে খেলেও শিরোপা জিততে পারেনি একবারও। তাদেরকে আরো একবার আক্ষেপে পোড়ালো বাংলার মেয়েরা। কি ফুটবল আর কি ক্রিকেট, দেশের ক্রীড়াঙ্গণে যখন চলছে হতাশা আর হাহাকার, তখন আরো একবার দেশবাসীকে আনন্দে ভাসালো মেয়েরা।

দশরথ স্টেডিয়ামে ফাইনালটা হলো ফাইনালের মতোই। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ম্যাচ রং ছড়াতে শুরু করে। প্রথমার্ধে ক্রসবারের বাধায় এগিয়ে যাওয়া হয়নি দুই দলের। দ্বিতীয়ার্ধে লড়াই চললো সমানতালে। বাংলাদেশের হয়ে গোল করলেন মনিকা চাকমা এবং ঋতুপর্ণা চাকমা। ম্যাচে সমতায় ফিরলেও শেষ পর্যন্ত জয়টা অধরাই রয়ে গেল নেপালের।

রাজা দশরথ রঙ্গশালা স্টেডিয়াম যেন বাংলাদেশের মেয়েদের জন্য সৌভাগ্যের ঢালা সাজিয়ে বসেছে। দুর্বল পাকিস্তানের কাছে পয়েন্ট হারিয়ে শুরু করা সাবিনার দল আর পেছনে ফিরে তাকায়নি। দক্ষিণ এশিয়ার সবসময়ের সেরা প্রতিপক্ষ ভারতকে উড়িয়ে দিয়েছে পরের ম্যাচে ৩১ গোলে। এরপর সেমিফাইনালে তো ভুটানকে নিয়ে ছেলেখেলাই খেলল বাংলাদেশ। হারালো ৭১ গোলের বড় ব্যবধানে। আর ফাইনালে সেই চেনা প্রতিপক্ষ নেপালকে দিল না বাধা হয়ে দাঁড়াতে। ম্যাচের শুরু থেকে দারুন গুছানো এবং আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলে বাংলাদেশ। শুরুতেই গোলের সুযোগ পেলেও তহুরার শট ক্রস বারে লেগে ফিরে আসে। দ্বিতীয় মিনিটে গীতা রানার ভুলে গোল হজম করতে বসেছিল নেপাল। গোলকিক নিতে এসে পিছলে পড়ে ঠিকঠাক শট নিতে পারেননি। বঙের বাইরে থাকা তহুরা খাতুন বল পেয়ে গোলে শট নেন। কিন্তু ক্রসবারে লেগে বল ফিরে আসে। ফিরতি বলে তহুরা আবার হেড করেন। কিন্তু তার সে হেড নেপালের গোলরক্ষক আঞ্জিলা সুব্বুর গ্লাভসে জমা পড়লে রক্ষা পায় নেপাল। ক্রসবারের বাধায় এগিয়ে যাওয়া হয়নি নেপালেরও। ম্যাচের ১০ মিনিটে মাঝমাঠ থেকে সাবিত্রা ভান্ডারির উদ্দেশ্যে পাস বাড়ান প্রীতি। বঙের ভেতর ঢোকা বল ফিরিয়ে দেন গোলরক্ষক রূপনা চাকমা। ফিরতি বলে সাবিত্রার ক্রস বঙের বাইরে পেয়ে যান আমিসা। তার জোরালো শট ফিরে ক্রসবার কাঁপিয়ে। এরপর আক্রমণ আর পাল্টা আক্রমণে জমে উঠে ম্যাচ। দুই দলই গোলের জন্য মরিয়া হয়ে খেললেও প্রথমার্ধ শেষ হয় গোলশূন্যভাবেই।

দ্বিতীয়ার্ধের ৭ মিনিটেই এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। একটি সংঘবদ্ধ আক্রমণ থেকে বল নিয়ে নেপালের রক্ষণে ঢুকে পড়েন মনিকা চাকমা। বল জালে জড়াতে কোনো ভুল করেনি এই স্ট্রাইকার। তবে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার সে আনন্দ বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। রক্ষণের ভুলে খেলার ৫৬ মিনিটে ম্যাচে সমতা ফেরান নেপালের আমিশা কারকি। এরপর চলে আক্রমণপাল্টা আক্রমণ। কিন্তু গোলের দেখা মিলছিলো না। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ শিবিরকে উল্লাসে মাতান ঋতুপর্ণা চাকমা। খেলার ৮১ মিনিটে সতীর্থের বাড়ানো বল ধরে দুর্দান্ত এক শট নেন তিনি। নেপালের গোলরক্ষক হাত লাগালেও বল থামাতে পারেননি। বল ঠিকই ঠিকানা খুজে নেয় জালে। উল্লাসে মেতে উঠে পুরো বাংলাদেশ শিবির। এরপর আর খেলায় ফিরতে পারেনি স্বাগতিক নেপালের মেয়েরা। শেষ বাঁশি বাজার সাথে সাথে মাঠ জুড়ে উল্লাসে মাতে বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়, কোচ, সাপোর্ট স্টাফ থেকে শুরু করে কর্মকর্তারা। গ্যালারিতে হাজির গুটিকয়েক বাংলাদেশি দর্শকও মাতে আনন্দ উচ্ছ্বাসে। আর টিভির পর্দায় চোখ রাখা এদিকে পুরো বাংলাদেশে তো তখন নেচে উঠে এক সঙ্গেই।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাংলাদেশে হাসিনার ফ্যাসিস্ট দলের কোনো স্থান নেই
পরবর্তী নিবন্ধদোদুল্যমান রাজ্যে ঘিরে নানা প্রস্তুতি