‘বাংলার আপেল’ খেতে সুস্বাদু, ভিটামিন বেশি

বাড়বকুণ্ডে বাড়ছে লাল পেয়ারার চাষ

সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি | বুধবার , ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ at ৬:১৬ পূর্বাহ্ণ

সীতাকুণ্ড উপজেলার বাড়বকুণ্ডের লাল পেয়ারার ঐতিহ্য ও সুনাম দীর্ঘকালের। কৃষকদের উৎপাদিত এ পেয়ারার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে উপরের দিক সবুজ, আর ভেতরের অংশ লাল। তাই এখানকার স্থানীয়রা লাল পেয়ারাকে ‘বাংলার আপেল’ বলে থাকেন। শিশুদের খুব পছন্দের এই লাল পেয়ারা। মৌসুমে এই অঞ্চলের পেয়ারার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন শহরগুলোতে নিয়ে যাচ্ছেন আগত পাইকারগণ।

ভাটিয়ারী ইউনিয়ন থেকে শুরু করে বড়দারোগার হাট পর্যন্ত পাহাড়ি এলাকাজুড়ে লাল পেয়ারাসহ অন্যান্য জাতের পেয়ারার চাষ হলেও সবচেয়ে বেশি লাল পেয়ারার চাষ হয়ে থাকে বাড়বকুণ্ড ইউনিয়নের পাহাড়ি অঞ্চলজুড়ে। তবে উপজেলায় এবার ২৭০ জন কৃষক ২৯৩ হেক্টর সমতল ও টিলায় লাল পেয়ারাসহ বিভিন্ন জাতের পেয়ারার চাষ করেছেন। পাহাড়ি এলাকায় এখন যেদিকে দুচোখ যাবে সেদিকে সারি সারি সবুজে সবুজে ঘেরা পেয়ারার বাগান চোখে পড়বে।

প্রতি বছর মৌসুমে বিভিন্ন জেলা উপজেলা থেকে আগত পাইকারগণ কৃষকদের কাছ থেকে পাইকারি দরে পেয়ারা কিনে দেশের বিভিন্ন শহরগুলোতে বিক্রির উদ্দেশ্যে নিয়ে যান। তবে অন্যান্য জাতের পেয়ারার থেকে লাল পেয়ারার ভিটামিন ও স্বাদ সবচেয়ে বেশি। তাই এ পেয়ারার কদর অন্যান্য পেয়ারার চেয়ে একটু হলেও বেশি। এ সময়ে চট্টগ্রাম ও ঢাকাসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে বেড়াতে আসা মানুষগুলো কিছু কিনুক আর না কিনুক অন্তত ১ কেজি লাল পেয়ারা হলেও তারা বাড়বকুণ্ড বাজার থেকে সাথে করে পরিবারের সদস্য ও সন্তানদের জন্য নিয়ে যান।

বাড়বকুণ্ড এলাকার কৃষক মো. নজরুল ইসলাম বলেন, বাড়বকুণ্ড পাহাড়ি কুণ্ড রোড এলাকার টিলায় ৩ একর জমিতে দেশীয় লাল পেয়ারার চাষ করেছি। এ বছর পূর্বের চেয়ে চাষের পরিমাণ একটু বেড়েছে। অন্যান্য বছরের মতো চলতি বছরেও পাইকারি দরে দেশীয় লাল পেয়ারা চাষ করে লাভবান হয়েছি। ফলনও অনেক ভালো হয়েছে। শুরুতে বাজারদর একটু ভালো থাকে। তাই প্রতি টুকরি ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা করে পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে। সে হিসেবে কেজি পড়ে ৪০ টাকা। এভাবে খরচ বাদ দিয়ে শেষ পর্যন্ত পেয়ারা বিক্রি করে লাভ হবে প্রায় ১ লাখ টাকার কিছু বেশি। বাড়বকুণ্ড ব্লকে দায়িত্বে থাকা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. নাজিম উদ্দিন বলেন, বাড়বকুণ্ডে প্রায় ১০০ জনের মতো পেয়ারা চাষি রয়েছে। প্রতি মৌসুমে তারা পাহাড়ি টিলায় তাদের উৎপাদিত লাল পেয়ারা বিক্রি করে আর্থিকভাবে অনেক লাভবান হচ্ছেন। এ অঞ্চলের লাল পেয়ারার ঐতিহ্য দীর্ঘদিনের। পৌরসদর এলাকায় দায়িত্বে থাকা উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. শাহ আলম জানান, চলতি মৌসুমে পৌরসদরের চৌধুরী পাড়া পাহাড়ের পাদদেশে পেয়ারার চাষ করেছেন কৃষক মো. রফিক, নুরুল হুদা, মো. নিজাম, মো. মানকি, রোস্তুম আলীসহ অনেকে। কৃষকদের মধ্যে অনেকেই লাল পেয়ারাসহ দেশীয় পেয়ারার চাষ করেছেন। দীর্ঘদিন ধরে লাল পেয়ারাসহ বিভিন্ন জাতের পেয়ার চাষ করে এখানকার কৃষক লক্ষ লক্ষ টাকা আয় করে চলেছেন।

উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. হাবিবুল্লাহ বলেন, এ অঞ্চলের কৃষক পরিবারগুলো বাড়বকুণ্ড, কুমিরা, ভাটিয়ারী, বড়দারোগার হাট ও পৌরসদরের চৌধুরী পাড়াসহ পাহাড়ি অঞ্চলের টিলাগুলোতে পেয়ারার চাষ করেছেন। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি লাল পেয়ারার চাষ হয়েছে বাড়বকুণ্ড পাহাড়ি অঞ্চলের টিলাতে। প্রথম অবস্থায় বাজারে পেয়ারার দাম একটু ভালো পাওয়া যাচ্ছে। আবহাওয়া ভালো থাকলে ২৮৭২ মেট্রিক টন পেয়ারা উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। পাহাড়ের পাদদেশে পেয়ারা চাষে কোনো রকম সার দিতে হয় না। শুধু একটু পরিচর্যা করতে পারলেই চলে। সবরকম পেয়ারায় ভিটামিন রয়েছে। তবে অন্যান্য পেয়ারা থেকে লাল পেয়ারায় ভিটামিন বেশি এবং খেতেও সুস্বাদু।

পূর্ববর্তী নিবন্ধভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্যানেল তৈরির নির্দেশনা ইসির
পরবর্তী নিবন্ধজুমের ধান কাটা শুরু