বাংলাদেশ লিও দিবস-২০২৪ যত্নের ছায়া, ছড়ায় মায়া

ডাঃ এম. জাকিরুল ইসলাম | শুক্রবার , ২৩ আগস্ট, ২০২৪ at ৬:৪৪ পূর্বাহ্ণ

২৩শে আগস্ট ৫১তম বাংলাদেশ লিও দিবস। আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশে ১৯৭৩ সালের ২৩শে আগস্ট লিও ইজমের শুভ সূচনা হয়। ঢাকা ধানমণ্ডি লায়ন্স ক্লাবের অভিভাবকত্বে ‘কমলাপুর লিও ক্লাব’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশে লিও আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে। এই আন্দোলনের জনক এক মহান ব্যক্তিত্ব যিনি প্রথম বাংলা সবাক চলচিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’ এর সফল নির্মাতা ও প্রাক্তন জেলা গভর্নর লায়ন আব্দুল জব্বার খান। তিনি লিওদের মাঝে বাংলাদেশের লিওইজমের জনক নামে খ্যাত। অনেক রক্ত ও ত্যাগ তিতীক্ষার মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর আমাদের প্রিয় মাতৃভুমি সবুজ শ্যামলিমা বাংলাদেশ স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসাবে পৃথিবীর মানচিত্রে গৌরব জনক স্থান অর্জন করে। যুদ্ধবিধস্ত সদ্য স্বাধীন দেশে যুবকদের মাঝে বিরাজ করছিল অস্থিরতা ও চরম হতাশা। জাতির উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ যুব সমাজকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে ও সেবার জগতে তাদের অনুপ্রাণিত করতে মনস্থ করলেন মরহুম লায়ন আব্দুল জব্বার খান। মূলত তাঁরই ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় আমাদের দেশে আন্তর্জাতিক সেবা সংগঠন লায়ন্স ক্লাবের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক যুব সেবা সংগঠন ‘লিও ক্নাব’ আত্মপ্রকাশ করে। লিও শব্দের অর্থ নেতৃত্ব, অভিজ্ঞতা ও সুযোগ। লিও মনোগ্রামে দেখা যায় দুইটি সিংহ দুই দিকে তাকিয়ে আছে। এর অর্থ হচ্ছে একটির মাধ্যমে লিওরা তাকিয়ে থাকবে অনাগত ভবিষ্যতের দিকে যেখানে তারা প্রয়োজনে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে অন্যের দিকে। অন্যটির মাধ্যমে লিওরা স্বস্ব পেশায় আত্মনিয়োগ করে সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ে তুলবে।

লিও হওয়ার যোগ্যতা: আপনি যদি একজন সমাজ সচেতন তরুণ কিংবা তরুণী হন এবং বয়স যদি ১২ বৎসর থেকে ৩০ বৎসরের মধ্যে থাকে অবশ্যই আপনি লিও সদস্য হবার যোগ্যতা রাখেন। আন্তর্জাতিক ভাবে লিও সদস্য দুই ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। প্রথমটি হচ্ছে আলফা বা নিয়মিত সদস্য, যাদের বয়স ১২ থেকে ১৭ বৎসর। ওমেগা বা সিনিয়র সদস্য যাদের বয়স ১৮ থেকে ৩০ বৎসর। আপনাকে এই কথা অবশ্যই স্মরণ রাখতে হবে যে, লিও সদস্য পদ পেতে হলে আপনাকে সৎ চরিত্রবান ও সেবার মনোভাব সম্পন্ন হতে হবে এবং সমাজ রাষ্ট্রবিরোধী কোন কার্যকলাপে জড়িত থাকা যাবে না।

লিও সদস্য হওয়ার প্রক্রিয়া: লিও হওয়ার যোগ্যতা সম্পন্ন কোনো তরুণ বা তরুণী লিও সদস্য হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলে উনাকে পরিচিত কোনো লিও ক্লাবের সদস্যের সাথে যোগাযোগ করে আগ্রহ প্রকাশ করতে হবে। ঐ সদস্য উনাদের ক্লাবের নিয়মিত সভায় আগ্রহী তরুণ/ তরুণীকে নিয়ে যাবেন এবং সভায় পরিচয় করিয়ে দিয়ে উদ্দেশ্যটা জানাবেন। সভায় তিনি ঐ তরুণ/তরুণীর স্পন্সর হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিবেন। তারপর ক্লাবের নিয়ম অনুযায়ী ফরম পূরণ ও প্রয়োজনীয় ফি দিয়ে সদস্য পদ গ্রহণ করবেন।

লিও সংগঠনের নীতিমালা: আমি আমার বৃত্তি জীবনের মর্যাদার প্রতি আস্থাবান হবো এবং সেই লক্ষ্যে নিষ্ঠার সাথে কর্মলিপ্ত থেকে আমরা পেশাগত কাজে উৎকর্ষের জন্য সুনাম অর্জনে সচেষ্ট থাক্বো। আমি মনে রাখবো বন্ধুত্বই বন্ধুত্বের লক্ষ্য, বন্ধুত্ব কখনো কার্যসিদ্ধির মাধ্যম নয়। আমি বিশ্বাস রাখবো প্রকৃত বন্ধুত্বের মূল্য একজনের প্রতি আর একজনের উপকার বা সাহায্যর দ্বারা নিরুপিত হয় না। বরং সত্যিকার বন্ধুত্ব কিছুই দাবী করে না এবং উপকার গ্রহণ করে শুভেচ্ছার নিদর্শন স্বরূপ। একজন নাগরিক হিসাবে আমরা জাতি, রাষ্ট্র ও সমাজের প্রতি আমার দায়িত্ব ও কর্তব্য আমি সর্বদা স্মরণ রাখবো। কথায়, কাজে ও আচরণে তাদের প্রতি আনুগত্যে আমি অটল ও অবিচল থাকবো। দুঃস্থকে সহানুভূতি, দুর্বলকে সহায়তা ও নিঃস্বকে দান করে আমি তৃপ্ত হবো। সমালোচনার ক্ষেত্রে আমি সতর্ক ও সংযত থাকবো কিন্তু প্রশংসাই হবো উদার ও অকৃপণ, আমি গড়ে তুলবো কখনোও ভাঙবো না।

লিওদের প্রত্যাশা: আমরা লিওরা জীবনের অর্ঘ্য সাজাই আশার কুসুমে, স্বপ্নের বুননিতে গড়ি অনাগত জীবনের নকশীকাঁথা। বিগত দিনের জীর্ণতার নাগপাশ ছিন্ন করে অনাগত দিনের রক্তিম সূর্যের উষ্ণ আলিঙ্গনে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। প্রতিকূলতা অক্টোপাসের মত সহস্র বেষ্টনীতে ঘিরে আছে আমাদের যুব সমাজকে। আমাদের দৃঢ় প্রত্যয় হোক মাদকমুক্ত ও সন্ত্রাসমুক্ত যুব সমাজ প্রতিষ্ঠা করে ফুলের মত সুভাসিত জীবন গড়ি। গভীর ধ্বংস স্তুপের মাঝে দাঁড়িয়ে ও আমরা নির্মাণের কঠিন শপথে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। সকল আঁধার সরিয়ে আলোকিত ঝর্নাধারার ধুঁইয়ে দিয়ে শান্তির নীলাকাশ প্রতিষ্ঠা করার অঙ্গীকার গ্রহণ করতে হবে লিওদের। সকল ভালোর প্রতি উদাত্ত আহ্বান আর অসুন্দরের প্রতি ক্ষমাহীন সংগ্রাম আমাদের। মনে রাখতে হবে এই বিশ্বে যা কিছু ভালো তা বিশ্বের সকল মানুষের অধিকার। এই অধিকার আদায়ের নাম হোক লিওইজম। আমরা এমন একটি দিনের অপেক্ষায় আছি যেদিন স্বপ্নের পাখিরা নীড় খুঁজে পাবে, চিকিৎসাহীন মৃত্যু করবে না যখন উপহাস, দুঃস্থের মুখে হাসি আর অন্ধের চোখে আলো সেদিন থাকবে নিশ্চিত। আত্ম সচেতন ব্যক্তি ও জাতিই পারে বিশ্বের মাঝে সম্মানের সাথে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে। এই জন্য যে উপকরণের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন তা হচ্ছে নেতৃত্ব, অভিজ্ঞতা, মহতী উদ্যোগ ও সুষ্ঠু পরিকল্পনা।

লিও জেলা ৩১৫বি: মাল্টিপল লিও জেলা ৩১৫এর মধ্যে অন্যতম সক্রিয় লিও জেলা ৩১৫বি, বাংলাদেশ। মাল্টিপল লিও জেলা ৩১৫ এর অধীনে ৭টি লিও হচ্ছে অ১, অ২, অ৩, ই১, ই২, ই৩, ই৪ লিও জেলা ৩১৫বি৪ এর অধীনে ৪৮ টি সক্রিয় লিও ক্লাব রয়েছে। ৩১৫বি৪ লিও জেলা (১৯৯৭৯৮) লিও সেবা বর্ষে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন প্রাক্তন জেলা গভর্নর লায়ন মোঃ মনজুর আলম মনজুপি.এম.জে.এফ। প্রতিষ্ঠাকালীন সচিব ছিলেন বর্তমানে রিজিয়ন চেয়ারপার্সন হেড কোয়ার্টার (এডমিন) লায়ন ডাঃ মোঃ জাকিরুল ইসলাম। বর্তমানে লিও জেলা ৩১৫বি৪ এর অধীনে ৪৮ লিও ক্লাবের মাধ্যমে দুই হাজারের অধিক লিও সদস্য সেবা কর্মকাণ্ডে নিজেদের সর্বদা নিয়োজিত রেখেছেন।

লায়ন্স জেলা ৩১৫বি৪ বাংলাদেশ: বর্তমান লায়ন্স সেবা বর্ষ (২০২৪২০২৫) লায়ন্স জেলা ৩১৫বি, বাংলাদেশ এর নেতৃত্ব দিচ্ছেন জেলা গভর্নর ‘যত্নের ছায়া, ছড়ায় মায়া’ ‘ঝযধৎব ্‌ ঈধৎব এর প্রবক্তা লায়ন কোহিনুর কামালএম.জে.এফ সদ্য প্রাক্তন জেলা গভর্নর লায়ন এমডি.এম মহিউদ্দিন চৌধুরী পি.এম.জে.এফ ১ম ভাইস জেলা গভর্নর লায়ন মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ অপু এম.জে.এফ। ২য় ভাইস জেলা গভর্নর লায়ন মোঃ কামরুজ্জামান লিটনএম.জে.এফ। আসুন আমরা পরম সম্মানিত জেলা গভর্নর লায়ন কোহিনুর কামালএম.জে.এফ যুগপোযোগী ডাক ‘যত্নের ছায়া, ছড়ায় মায়া’ ‘Share &  Care’ সফল বাস্তবায়নের জন্য একযোগে কাজ করি এবং সমাজের অবহেলিত জনগোষ্ঠীর জন্য আত্মত্যাগ করে সুপ্রিয় লিও জেলা সভাপতি লিও দীপ্ত দে এর নেতৃত্বে সমাজকে পরিবর্তনের লক্ষ্যে লিওদেরকে সেবার মানসিকতায় পরিচালনা করি ও আগামী দিনের সুনাগরিক হিসাবে গড়ে তুলি।

লেখক: রিজিয়ন চেয়ারপার্সন হেডকোয়ার্টার (এডমিন), লায়ন্স ক্লাবস্‌ ইন্টারন্যাশনাল লায়ন্স জেলা ৩১৫বি, বাংলাদেশ। চিকিৎসক, কলামিস্ট ও সমাজকর্মী।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজুম’আর খুতবা
পরবর্তী নিবন্ধআল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারীদের পছন্দ করেন না