বাংলাদেশ ব্যাংককে এফআরসিকে সহায়তা করতে হবে

আর্থিক প্রতিবেদনের জালিয়াতি রোধ প্রসঙ্গ

| মঙ্গলবার , ১৫ ডিসেম্বর, ২০২০ at ৫:৪৬ পূর্বাহ্ণ

ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনকে আমলে নিয়ে থাকে, এটিই স্বতঃসিদ্ধ নিয়মও। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল কয়েকটি কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন জালিয়াতি নিয়ে তদন্ত করছে বলে বনিক বার্তার এক প্রতিবেদনে প্রকাশ পেয়েছে। ঋণ নেয়ার জন্য ব্যাংককে এক ধরনের এবং রাজস্ব ফাঁকি দেয়ার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) আরেক ধরনের আর্থিক তথ্য দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলো। এজন্য তৈরি করা হচ্ছে একই হিসাব বছরের দুটি ভিন্ন আর্থিক প্রতিবেদন। এ ধরনের জালিয়াতি ঠেকাতে ঋণ গ্রহণ ও নবায়নের সময় চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টসের নিরীক্ষিত হালনাগাদ আর্থিক প্রতিবেদনে জমা দেয়া বাধ্যতামূলক করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে সম্প্রতি চিঠি দিয়েছে এফআরসি। সেই সঙ্গে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ঋণগ্রহীতার জমা দেয়া প্রতিবেদনের যে কোনো তথ্য তদন্তের প্রয়োজনে এফআরসি চাইলেই সরবরাহ করার জন্য চিঠিতে অনুরোধ করছে সংস্থাটি। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বা তালিকাবহির্ভূত সব কোম্পানির ক্ষেত্রেই আর্থিক প্রতিবেদন একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। আর্থিক প্রতিবেদনের ওপর নির্ভর করে ব্যাংক ঋণ দেয়, রাজস্ব নির্ধারিত হয়, এমনকি শেয়ার বাজারের বিনিয়োগকারীরাও বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেন। একটি প্রতিবেদন দেখিয়ে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন আবার ভিন্ন প্রতিবেদন দেখিয়ে রাজস্ব দিয়েছেন কম। শেয়ার বাজার থেকে অর্থ তুলে নিতেও আর্থিক প্রতিবেদনে কারসাজির উদাহরণ মিলেছে। ভিন্ন উদ্দেশ্যে ভিন্ন আর্থিক প্রতিবেদন তৈরির সংস্কৃতি দেশের করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অনেকদিন ধরেই চলে আসছে। প্রায় ৭৮ হাজার প্রতিষ্ঠান কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) নিলেও এর অর্ধেক আয়কর রিটার্ন জমা দেয় না। অনেক কোম্পানি নানা কাজে ব্যবহারে একই বছরের জন্য তিন-চারটি পর্যন্ত অডিট রিপোর্ট জমা দেয়। কিছু ক্ষেত্রে এমন জালিয়াতির সঙ্গে আইসিএবির সদস্য চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টদের নাম জড়িয়ে যাচ্ছে। তাতে পুরো প্রতিষ্ঠানের সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে। আর্থিক প্রতিবেদন কেন্দ্রিক জালিয়াতি রোধে এফআরসি কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। ডিবিএস সিস্টেমের সঙ্গে যদি এনবিআর, বাংলাদেশ ব্যাংক ও আরজে এসসির সংযোগ থাকে, তাহলে দেশের কোনো কোম্পানির পক্ষে জাল আর্থিক প্রতিবেদন জমা দেয়া সম্ভব হবে না। তাই সবার আগে জাল আর্থিক প্রতিবেদনে জমা দেয়ার সুযোগ বন্ধ করতে হবে। নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন ছাড়া ব্যাংকের ঋণ প্রদান বন্ধ এবং একই সঙ্গে বন্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনাও প্রয়োজন। সন্দেহ নেই যে দেশের নিরীক্ষা পেশার ও আর্থিক প্রতিবেদনের মানোন্নয়ন প্রয়োজন। এমন নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন বিরল নয়, যার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত আর্থিক অবস্থা অসঙ্গতিপূর্ণ এবং বিনিয়োগকারী ও সংশ্লিষ্টদের প্রত্যাশা পূরণে সক্ষম নয়। সাধারণত কোনো প্রতিষ্ঠানের আর্থিক প্রতিবেদন প্রস্তুত করার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের। আইসিএবি কর্তৃক সনদ প্রদানকৃত নিরীক্ষা ফার্মগুলো যেসব আর্থিক প্রতিবেদন নিরীক্ষা করে সেগুলো যথাযথ কিনা, তার প্রত্যয়ন দেয়। এক্ষেত্রে নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবহেলা বা ত্রুটি বিচ্যুতি থাকলে সংশ্লিষ্ট নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান যেসব দায়ী, তেমনিভাবে আইসিএবির ও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব রয়েছে। সে কারণে কোনো নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান সরেজমিন পরিদর্শন করে সক্ষমতা যাচাই করা হয়। এসব ক্ষেত্রে আইসিএবি কোনো অসংগতি পেলে নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর সনদ স্থগিতকরণ, সংশ্লিষ্ট নিরীক্ষককে নিরীক্ষা কাজ থেকে বিরত রাখা, আর্থিক জরিমানাসহ নানা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ একান্ত প্রয়োজন। একই সঙ্গে যেসব কোম্পানি আর্থিক প্রতিবেদনে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে রাজস্ব ফাঁকি বা ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণের মতো অবৈধ সুযোগ নিয়েছে, তাদেরও শাস্তি দিতে হবে। আমরা চাইব আর্থিক প্রতিবেদন জালিয়াতি করে অবৈধ সুবিধা গ্রহণ বন্ধে সংশ্লিষ্ট সবাই কার্যকর উদ্যোগ নেবে। আর্থিক খাতে জালিয়াতি বন্ধ ও টেকসইত্ব নিশ্চিতে এটি অনেক বেশি জরুরি। আর্থিক প্রতিবেদন সংক্রান্ত অনিয়ম শনাক্ত ও তা রোধে বাংলাদেশ ব্যাংক, ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল, রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড একচেঞ্জ কমিশন ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের একসঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে আর্থিক প্রতিবেদন জালিয়াতি করে বাড়তি অর্থ তুলে নেয়া এবং বিনিয়োগকারীদের ক্ষতিগ্রস্ত করার ঘটনা ঘটেছে। এটি বন্ধে আর্থিক প্রতিবেদনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে