বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ বাণিজ্যিক শো এক্সপো ২০২০। এই আয়োজনটি ২০২০ সালে হওয়ার কথা থাকলেও করোনার কারণে হয়নি। এ বছরের ১ অক্টোবর থেকে শুরু হয়েছে ছয় মাসের এই বিশ্ব বাণিজ্যমেলা। সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ের সিটি সেন্টার থেকে প্রায় একশ কিলোমিটার দূরে মরুর বুকে সৃজন করা হয়েছে এই বিশাল বিশ্ব বাগান। যেখানে বিশ্বের ১৯২ টি দেশ অংশগ্রহণ করেছে। এই বিশ্ব বাণিজ্য মেলা চলবে আগামী বছর মার্চ পর্যন্ত। মরুর বুকে প্রায় ৬০০ ফুটবল মাঠ বা স্টেডিয়ামের সমান মাঠে আয়োজিত হয়েছে এই মেলা। প্রযুক্তির সবশেষ ব্যবহার এবং আধুনিক সব সরঞ্জাম ব্যবহার করে গড়ে তোলা হয়েছে এই মেলার প্যাভেলিয়নসমূহ। কোন দেশ কত বড় এবং কত বেশি আধুনিক এবং দৃষ্টিনন্দনভাবে নিজেদের প্যাভেলিয়ন গড়ে তুলতে পারে তার যেন একটি প্রতিযোগিতা চলেছে এই এক্সপোতে। একেকটি প্যাভেলিয়ন যেন এক একটি বহুতল ভবন। যেখানে আধুনিক স্থাপত্য শৈলীর পাশাপাশি ব্যবহার করা হয়েছে প্রযুক্তির। এশিয়ার বড় বড় দেশগুলোর পাশাপাশি ইউরোপ আমেরিকার মত দেশের প্যাভেলিয়নগুলো যেন একেকটি দেশের
প্রতিচ্ছবি। যেখানে উপস্থাপন করা হয়েছে সেসব দেশের শিক্ষা, সংস্কৃতি, উৎপাদিত পণ্য, শিল্প, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি, পর্যটন, ইতিহাস, ঐতিহ্য। তুলে ধরা হয়েছে নানা দেশের অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যতের কাহিনী। প্যাভেলিয়নগুলোতে প্রবেশ করলে যেন পাওয়া যায় পুরো দেশটাকে। ছয় মাসের এই এক্সপোতে ২৫ মিলিয়ন দর্শনার্থীর লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে আয়োজক সংযুক্ত আরব আমিরাত। এক্সপোর প্রবেশ ফি রাখা হয়েছে ছুটির দিনে ৯০ দেরহাম। বাংলাদেশী মুদ্রায় ২২৫০ টাকার মত। আর ছুটির দিন ব্যতীত ৪৫ দেরহাম। যা বাংলাদেশী মুদ্রায় ১১২৫ টাকার মত।
বিশ্বের ১৯২ টি দেশের মত বাংলাদেশও অংশ নিয়েছে এক্সপোতে। বাংলাদেশের প্যাভেলিয়নের দেওয়ালে রয়েছে বঙ্গবন্ধু, রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রতিকৃতি। ভেতরে রয়েছে বঙ্গবন্ধু জোন, সোশ্যাল ইকোনমিক, পণ্য প্রদর্শনী মঞ্চ ও ট্যুরিজম জোন। যেখানে গার্মেন্টস পণ্য, পাটের তৈরি ব্যাগ, নানা পণ্য, চামড়াজাত পণ্য, বেতের তৈরি পণ্য। রয়েছে বাংলার ঐতিহ্য রিকশা এবং সাম্পান। জায়ান্ট স্ক্রিনের মাধ্যমে প্রদর্শন করা হচ্ছে
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, দীর্ঘ ৫০ বছরের নানা অর্জন। যেখানে স্থান পেয়েছে বাংলাদেশের ক্রিকেটও। রয়েছে সাকিব-তামিমদের ক্রিকেটের সাফল্যের কথা। জানা গেছে, প্রায় ২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে বাংলাদেশের প্যাভেলিয়ন। তবে তা মন ভরাতে পারেনি প্রবাসীদের। এক্সপোর একপাশে আফ্রিকান কয়েকটি দেশের পাশেই বাংলাদেশ প্যাভেলিয়ন। প্রবাসী বাংলাদেশীরা ছুটে যান নিজ দেশের প্যাভেলিয়নে। কিন্তু অন্যান্য দেশের প্যাভেলিয়নের সাথে তুলনা করে অনেকটা হতাশ হয়েই ফিরে। এই প্রতিবেদক যখন বাংলাদেশ প্যাভেলিয়ন পরিদর্শন করতে যায় তখন প্যাভেলিয়নে একজন মাত্র গাইডকে দেখা যায়। তিনিও বাংলাদেশের দূতাবাসের কেউ নন। তিনি একজন ছাত্র। এক্সপোতে পার্ট টাইম চাকুরি করছেন। অবশ্য এরকম বাংলাদেশের অনেক ছাত্র চাকুরি করছেন সেখানে। অথচ অন্যান্য প্যাভেলিয়নগুলোতে দেখা গেছে প্যাভেলিয়নে প্রবেশের পর থেকে গাইডরা একেকটা বিষয় বুঝিয়ে দিচ্ছেন দর্শনার্থীদের। দীর্ঘদিন আরব আমিরাতে বসবাস করা রাউজানের নুরুল আবছার জানান, আমরা অনেক দূর থেকে এক্সপোতে আসি। আর এক্সপোতে এসেই নিজ দেশের প্যাভেলিয়নে ছুটে আসি। কিন্তু যখন অন্য দেশের প্যাভেলিয়ন দেখি তখন হতাশ হই। কারণ বিশ্বের অনেক ছোট দেশের প্যাভেলিয়নও আমাদের প্যাভেলিয়নের চাইতে সমৃদ্ধ। আনোয়ার হোসেন আরব আমিরাতে আছেন প্রায় একযুগ হলো। ফটিকছড়ির এই বাসিন্দা জানান, ভারতের কথা না হয় নাই বললাম। পাকিস্তান কিংবা মালদ্বীপের প্যাভেলিয়নও আমাদের চাইতে সমৃদ্ধ। অথচ বাংলাদেশের প্যাভেলিয়নে তুলে ধরার অনেক কিছুই ছিল। বিশেষ করে বাংলাদেশের পর্যটন স্পটগুলো যদি ভালভাবে তুলে ধরা যেতো তাহলে বিশ্বের মানুষ জানতে পারতো আমাদের দর্শনীয় স্থানগুলো সম্পর্কে। তারপরও বাংলাদেশের মানুষ মেলায় ছুটে আসে নিজ দেশের প্যাভেলিয়ন দেখতে।
এক্সপোর প্যাভিলিয়ন এরিয়ায় প্রতিটি দেশের প্যাভিলিয়ন যেন একেকটি দেশ। কোনো কোনো দেশ প্যাভেলিয়ন জুড়ে স্থাপন করে দিয়েছে এলইডি স্ক্রিন। তাতে পুরো দেশটাই যেন ভাসছে। কয়েক তলা বিশিষ্ট প্যাভেলিয়নও রয়েছে। যেখানে ব্যবহার করা হয়েছে এক্সেলেটর এবং লিফট। বড় দেশগুলোর একেকটি প্যাভেলিয়ন ঘুরে আসতে সময় লাগে এক ঘণ্টার মত। এছাড়াও এক্সপোতে রয়েছে সেন্ট্রাল ডোম, ওয়াটার ফলিংয়ের মত নানা আকর্ষণীয় বিষয়। এক্সপোর জন্য তৈরি করা হয়েছে কয়েক লক্ষ্য গাড়ি রাখার মত পার্কিং স্পেস। এক্সপো গেট পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়েছে মেট্রো রেল। রয়েছে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা। অসংখ্য ফুড কর্নার সহ রয়েছে বিনোদনের সেরা সব আয়োজন। সন্ধ্যার পর সেন্ট্রাল ডোমে চলে লেজার শো। যা হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে পড়া দর্শনার্থীদের বিনোদনে যোগ করে নতুন মাত্রা। বলা যায়- এক্সপো ২০২০ মরুর বুকে যেন অন্য এক পৃথিবী। যেখানে একই ছাদের নিচে বিশ্বের ১৯২টি দেশ।