সবশেষ কবে এমন হাসি মুখে বিদেশ থেকে ফিরেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট সেটা অনেকেরই মনে থাকার কথা নয়। কারন বিদেশে গিয়ে ব্যর্থ হতে হতে দল যে কখন আসতেছে বা কখন যাচ্ছে সেটাই যেন ভুরে গিয়েছিল সবাই। তবে এবারে পাকিস্তান সফর শেষে যেন বীরের বেশে দেশে ফিরলেন শান্ত–মোমিনুলরা। তাইতো দেশে ফিরে টাইগার অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত বললেন আমার কাছে তো মনে হয়, বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে সেরা অর্জন গুলির একটি এই সিরিজ। এটুকু বলে আরও কিছু বলতে চাচ্ছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। তাকে থামিয়ে আবার প্রশ্ন করা হলো, সেরা গুলির একটি নাকি এটিই সেরা? বাংলাদেশ অধিনায়ক এবার সরাসরিই বললেন অবশ্যই এটিই সেরা। পাকিস্তানে টেস্ট সিরিজ জয়ের পর তো উচ্ছ্বসিত প্রতিক্রিয়া জানিয়েই এসেছেন শান্ত ও দলের অন্যরা। ঐতিহাসিক এই সিরিজ জয়ের পর দেশে ফিরে গত বুধবার রাতে বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেন, তার মতে এটিই এখনও পর্যন্ত বাংলাদেশ ক্রিকেটের সেরা সাফল্য। এবারের আগে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৩ টেস্টে কোনো জয় ছিল না বাংলাদেশের। পাকিস্তানের মাঠে তাদের বিপক্ষে জয় ছিল না কোনো সংস্করণেই। এবার শুধু প্রথমবার টেস্ট জয়ের কীর্তি গড়েই ক্ষান্তি দেয়নি শান্তর দল, পরের টেস্ট জিতে সিরিজও জয় করেছে। টেস্ট আঙিনায় বাংলাদেশের ২৪ বছরের পথচলায় দেশের বাইরে টেস্ট সিরিজ জয়ের নজির ছিল এতদিন একটিই। ২০০৯ সালে দ্বিতীয় সারির ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের বিপক্ষে এসেছিল সেই জয়।
এবারের অর্জনের ওজন যে কত বেশি, সেটি ফুটে উঠল শান্তর কথায়। তিনি বলেন আমার কাছে তো মনে হয়, বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে সেরা অর্জনগুলির একটি। আরও সুনির্দিষ্ট করে জানতে চাওয়ার পর অধিনায়কের উত্তর, বেস্ট বেস্ট। আমার মনে হয়, সবচেয়ে বড় অর্জন এটা বাংলাদেশ ক্রিকেটের। এটা শুধু আমার একার ব্যক্তিগত কথা নয়, দলের সবাই এটা বিশ্বাস করে। খুবই ভালো লাগছে। সিরিজ জয়ের পর উদযাপন কেমন হয়েছে সেটিও কিছুটা শোনালেন অধিনায়ক। এরকম জয়ের পর তো উদযাপন বিশেষ কিছুই থাকে। ড্রেসিং রুমে সবাই উদযাপন করেছে। সবাই হাসিখুশি ছিল। হোটেলে যাওয়ার পরও আমরা উদযাপন করেছি। পুরো সময়টাই অনেক উপভোগ করেছি। প্রথম টেস্ট জয়ের পর ও পরে সিরিজ জয়ের পর শান্ত সহ দলের সবাই বলেছেন, এবারের সাফল্যের পেছনে বড় ভূমিকা ছিল দারুণ প্রস্তুতির। টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে যখন ব্যস্ত ছিল দল, তখন অন্য ক্রিকেটারদের নিয়ে স্থানীয় কোচরা নিবিড়ভাবে কাজ করেছেন বিশেষায়িত ক্যাম্পে। মুশফিকুর রহিম, মেহেদী হাসান মিরাজ, মোমিনুল হক, নাহিদ রানাদের পারফরম্যান্সে সেটির প্রতিফলন পড়েছে। সিরিজ শুরুর আগে রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে যখন দেশে অনুশীলন বাধাগ্রস্ত হচ্ছিল বারবার, তখন পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড বাংলাদেশ দলকে সুযোগ করে দেয় আগেভাগেই সেখানে গিয়ে বাড়তি অনুশীলন করার। দেশে ফিরেও শান্ত বললেন, প্রস্তুতির পথ ধরেই এমন সাফল্যের ঠিকানায় তারা পৌঁছতে পেরেছেন।
এই সিরিজটি খুবই ভালো গিয়েছে। আমরা যেভাবে প্রস্তুতি নিয়েছি, সফরে যাওয়ার আগে এবং ওখানে যাওয়ার পর দলের প্রত্যেকের মানসিকতা, স্কিল নিয়ে চিন্তাভাবনা, সব মিলিয়ে খুব ভালো প্রস্তুতি ছিল । প্রত্যেকের ইচ্ছা ছিল যেন আমরা খেলায় জিততে পারি। আমরা পাকিস্তানে তিন দিন আগে গিয়েছিলাম। এটা আমাদেরকে বাড়তি সুবিধা দিয়েছে। টেস্ট ক্রিকেটে জেতার জন্য প্রতিটি সেশন ভালো খেলা প্রয়োজন। যদিও অনেক সময় একটি–দুটি সেশন এদিক–সেদিক হলে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ থাকে। তবে কাজটা কঠিন। দলের সবাই অনেক কষ্ট করেছে। কোচিং স্টাফ অনেক কষ্ট করেছেন। সঠিক পরিকল্পনা আমাদের দিয়েছেন। সবাই দলের জন্য খেলেছে ও পরিকল্পনার বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছে। এই জয়ের সাফল্যে খুব বেশি দিন বুঁদ হয়ে থাকার সুযোগ নেই। ভারত সফর কড়া নাড়ছে দুয়ারে। আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর চেন্নাই টেস্ট দিয়ে শুরু হবে দুই টেস্ট ও তিন টি–টোয়েন্টির সফর। ভারতের বিপক্ষেও কখনও টেস্ট জয়ের স্বাদ পায়নি বাংলাদেশ। এবার পাকিস্তান সফরের সাফল্যকে সঙ্গী করে ভারতেও ভালো কিছুর আশায় অধিনায়ক। এরকম জয়ের পর তো অবশ্যই আত্মবিশ্বাস প্রত্যেকেরই বেশি থাকবে এবং দলের মধ্যে বিশ্বাস ওপরের দিকে থাকবে। ভারত সিরিজ কঠিন একটা সিরিজ হবে। নতুন করে পরিকল্পনা নিতে হবে, প্রস্তুতি নিতে হবে। দলের যা অবস্থা এখন, নিজেদের সেরাটা খেললে অবশ্যই ভালো খেলা সম্ভব। মধ্যরাতে বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটারদের বরণ করে নিতে বিমান বন্দরে হাজির হন বিসিবি পরিচালক আকরাম খান, নাজমুল আবেদীন ফাহিম সহ বিসিবিরি কর্মকর্তারা। ক্রিকেটারদের ফুল দিয়ে বরণ করা হয় বিমান বন্দরে। তাদের মুখে মিষ্টিও তুলে দেওয়া হয়।