সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর সভাপতি এবং কার্যকরী সদস্য মো. আমিন হেলালী সিনিয়র সহ–সভাপতি নির্বাচিত হওয়ায় সংবর্ধনা ও সম্মাননা জানিয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই এসোসিয়েশন। গতকাল বিকেলে নগরের ওয়ার্ল্ড সেন্টারের বঙ্গবন্ধু হলে ‘অনন্য অর্জনে কীর্তিমান চবিয়ান, সাফল্যের উদ্ভাসে আমাদের সম্মান’ শীর্ষক এ সম্মাননা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. অনুপম সেন। এসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আবদুল করিমের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সংবাদপত্র দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ–উপাচার্য (একাডেমিক) প্রফেসর বেনু কুমার দে, বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন এন্ড টেকনোলজির উপাচার্য প্রফেসর ড. ওবায়দুল করিম।
বরেণ্য শিক্ষাবিদ ড. অনুপম সেন বলেন, বাংলাদেশের ৮৫ শতাংশ আমদানি–রপ্তানি চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে হয়। এই ব্যবসায় চট্টগ্রাম চেম্বারের ভূমিকা অপরিসীম। বাংলাদেশে ব্যবসা–বাণিজ্যের প্রসারে চট্টগ্রাম চেম্বারের ভূমিকা আছে। মাহবুবুল আলম সে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট হয়েছে, পাঁচবার চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি ছিল এটা তার বিশাল অর্জন। এ অর্জনের জন্য আমি গর্ববোধ করি। তিনি বলেন, পুত্র বা ছাত্র যখন এগিয়ে যায় তখন পিতা বা শিক্ষকের জন্য এর চেয়ে বড় আনন্দ আর কিছু হতে পারে না। একজন শিক্ষক যখন দেখে তার ছাত্র অনেক দূর এগিয়ে গেছে তখন তার যে আনন্দ হয় সেটা অপরিসীম। একজন ছাত্রের যখন সারা বিশ্বে নাম ছড়িয়ে যায় তখন সে শিক্ষকের মন আনন্দে ভরে উঠে, বুক স্ফীত হয়। মাহবুবের অর্জনে আমার বুকও স্ফীত হয়েছে।
এ সমাজবিজ্ঞানী বলেন, আমি বিশ্বাস করি বাংলাদেশ এগুচ্ছে, বাংলাদেশ এগুবে। একদিন এই বাংলাদেশ এগিয়ে ছিল। ১৬শ শতকে বার্নিয়া (পর্যটক ফ্রান্সিস বার্নিয়া) দুই বার বাংলাদেশে এসেছিলেন। তিনি ফ্রান্সের সম্রাটকে বলেছিলেন, তার দেখা সবচেয়ে সুন্দর দেশ বাংলাদেশ। সেই বাংলাদেশ দারিদ্রসীমায়। আমি বিশ্বাস করি সেই বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম ধনী দেশ হবে। কারণ তার অনেক প্রটেনশিয়ালিটি (সম্ভাবনা) আছে। আগে এক একর জমিতে যে পরিমাণ ধান হত এখন কিন্তু তার চেয়ে বহু বেশি হয়।
একুশে পদক প্রাপ্ত ব্যক্তিত্ব এম এ মালেক বলেন, চট্টগ্রামের সফল ব্যবসায়ীদের ছোট্ট তালিকার অন্যতম ব্যক্তিত্ব মাহবুবুল আলম। তিনি আমার রাউজানের সন্তান সেজন্য আমি গর্বিত। এফবিসিসিআই এর প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে মাহবুবুল আলম চট্টগ্রামকে ঢাকার বুকে সম্মানের সাথে অধিষ্ঠিত করেছেন। তাকে ব্যক্তিগতভাবে এবং চট্টগ্রামের মানুষের পক্ষে অভিনন্দন জানাই।
তিনি বলেন, মাহবুবুল আলম চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির টানা পাঁচবারের সভাপতি নির্বাচিত হয়েও রেকর্ড করেন। কারণ এর আগে কেউ টানা পাঁচবার চেম্বারের প্রেসিডেন্ট হতে পারেননি। শত বছরেরও বেশি ঐতিহ্য নিয়ে এগিয়ে চলা চট্টগ্রাম চেম্বারে একজন ইংরেজ বিভিন্ন মেয়াদে সাতবার প্রেসিডেন্ট ছিলেন। অবশ্য তখনকার প্রেক্ষাপটও পুরোই ভিন্ন ছিল। মাহবুবুল আলম যখন চেম্বারের প্রেসিডেন্ট হয়েছেন তার সাথে আগেরকার দিনগুলোর কোনো তুলনা করা উচিত হবে না। আমি বিশ্বাস করি মাহবুবুল আলম নিজের ক্ষেত্রে এক অনন্য ব্যক্তিত্ব। তিনি নিজের ব্যবসা–বাণিজ্যের পাশাপাশি বিভিন্ন সংগঠনেও নিজেকে উজ্জ্বলতর করেছেন। আশা করি ভবিষ্যতে তার এই উজ্জ্বলতা আরো বেশি প্রোজ্জ্বল হয়ে উঠবে। চট্টগ্রামকে ভিন্ন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রেও বড় ধরনের ভূমিকা রাখবেন বলে আমি আশা করছি। এই চট্টগ্রামের মাটি ও মানুষে জন্য তার অনেক বেশি কিছু করার রয়েছে বলেও আমি বিশ্বাস করি।
সংবর্ধিত আলোকিত চবিয়ান মাহবুবুল আলম বলেন, দ্রব্যমূল্য শুধু বাংলাদেশে না, সারা বিশ্বে বেশি। তারপরও সহনীয় পর্যায়ে রাখার জন্য এফবিসিসিআই এর প্রেসিডেন্ট হিসেবে চেষ্টা করে যাচ্ছি এবং চেষ্টা করে যাব। দেশের ব্যবসা–বাণিজ্যের প্রসারে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, আজকে চবিয়ানদের ভালোবাসায় আমি আনন্দিত। বর্তমানে চবি এলামনাই সেন্টার নির্মাণে কিছু সমস্যা দেখা দিচ্ছে, আমি সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে কথা বলে দ্রুত সমাধানে কাজ করে যাচ্ছি। আমি আপনাদের ভাই, বন্ধু ও বাংলাদেশের তিন কোটি ব্যবসায়ীরা নেতা বানিয়েছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি উনি আমাকে প্রেসিডেন্ট হওয়ায় সায় দিয়েছেন। আমি আজকে এই সাফল্য এলামনাই এসোসিয়েশনের বন্ধুদেরকে উৎসর্গ করলাম।
মো. আবদুল করিম বলেন, এফবিসিসিআই এর প্রেসিডেন্ট ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের বাণিজ্যমন্ত্রী এবং এফবিসিসিআই ব্যবসায়ী সংগঠনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এই দেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান এফবিসিসিআই। এই প্রতিষ্ঠানের যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন তারা ব্যবসা–বাণিজ্য, শিল্প উন্নয়নে অবদান রেখেছেন। আশা করব মাহবুবুল আলম তার ব্যক্তিত্ব, প্রজ্ঞা ও আন্তরিকতা দিয়ে চট্টগ্রামকে এবং বাংলাদেশকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবেন।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংবর্ধনা উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ও সংগঠনের সহ–সভাপতি ছৈয়দ ছগীর আহামদ। উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব মো. কামরুল হাসান হারুনের সঞ্চালনায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সহ–সভাপতি মো. আবুল কদর, চবির সাবেক ভিপি ও সংগঠনের কার্যকরী সদস্য মজহারুল হক শাহ চৌধুরী, সাবেক ভিপি ও সংগঠনের সহ–সভাপতি মো. নাজিম উদ্দিন, সহ সভাপতি মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন, সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক বিশ্বজিৎ চৌধুরী, অ্যাডভোকেট মো. শামীম, দপ্তর সম্পাদক দাউদ আবদুল্লাহ লিটন, সাংস্কৃতিক সম্পাদক শামীমা হারুন লুবনা, ক্রীড়া সম্পাদক ফেরদৌস বশির, সাংগঠনিক সম্পাদক মোহম্মদ শাহজাহান, অপয়ায়ন সম্পাদক জহিরুল আলম, মোহম্মদ ইউছুপ, শাহ নেওয়াজ খালিদ, মহিউদ্দিন বাদল, সামসুর রহমান রাকিব, হানিফ নেজা হেনা প্রমুখ।