বাংলাদেশ অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন

সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ নারী ফুটবল টুর্নামেন্ট ফাইনালে ভারতের ১-০ গোলে হার

ক্রীড়া প্রতিবেদক | বৃহস্পতিবার , ২৩ ডিসেম্বর, ২০২১ at ৫:৫৮ পূর্বাহ্ণ

বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীর একেবারে শেষ ভাগে এসে বাংলাদেশকে আরো একটি বিজয়ের স্বাদ দিল বাংলাদেশের তরুণী ফুটবলাররা। দক্ষিণ এশিয়ার নারী ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে আরো একবার নিজেদের সেরা প্রমাণ করল তারা। সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ নারী ফুটবলের শিরোপা জিতল বাংলাদেশের মেয়েরা। ২০১৮ সালে এই তরুণীরাই অনূর্ধ্ব-১৮ বয়সী টুর্নামেন্টে নেপালকে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল। পুরুষ কিংবা মহিলা, ভারত বরাবরই বাংলাদেশের ফুটবলে কঠিনতম প্রতিপক্ষ। সেই কঠিনতম প্রতিপক্ষকে হারিয়ে বাংলাদেশের মেয়েরা জিতল দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট। আর এটি স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বছরে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে সবচাইতে বড় অর্জন। গতকাল বুধবার কমলাপুর শহীদ সিপাহী মোস্তাফা কামাল স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত টুর্নামেন্টের ফাইনালে শক্তিধর ভারতকে ১-০ গোলে পরাজিত করে শিরোপা জিতে নেয় বাংলাদেশের মেয়েরা। শুধু ফাইনালেই নয়, গ্রুপ পর্বের ম্যাচেও এই ভারতকে ১-০ গোলে পরাজিত করেছিল বাংলাদেশ। টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়ে ইতিহাস গড়ল। নারীদের এই ফুটবল ফাইনাল দেখতে স্টেডিয়াম কানায় কানায় ভরিয়ে তুলেছিল দর্শকরা। তরুণী ফুটবলারদের সাহস এবং সমর্থন যোগাতে মোটেও কার্পন্য করেনি তারা। কারণ বাংলাদেশের ফুটবলে এমন আনন্দের ক্ষণ সাম্প্রতিক অতীতে খুব কমই এসেছে। আর ফুটবলের পিপাসায় তৃঞ্চার্থ দর্শকদের আনন্দে ভাসিয়েছে আখি, মারিয়া মান্ডা, শামসুন নাহাররা।
ফাইনালে প্রায় একচেটিয়া খেলেছে বাংলাদেশের মেয়েরা। তবে প্রতিপক্ষকে আক্রমণের পর আক্রমণে ব্যতিব্যস্ত রাখলেও গোল আদায় করে নিতে পারছিল না। খেলার ১৪ মিনিটে এগিয়ে যেতে পারতো বাংলাদেশ। মারিয়া মান্ডার দূরপাল্লার শট গোলরক্ষক আংশিকা ঝাঁপিয়ে পড়ে আটকালেও বল গ্লাভসে নিতে পারেননি। দুই ডিফেন্ডারের ফাঁক গলে বেরিয়ে গেলে কোনাকুনি শট নেন তহুরা। শটে গতি না থাকলেও বল ছুটছিল জালের দিকে। ছুটে গিয়ে গোললাইনের উপর নির্মলা দেবি বল আটকানোর পর গ্লাভসে নেন আংশিকা। বল গোললাইন পেরিয়েছে এমন দাবি করে রেফারিকে ঘিরে ধরেন বাংলাদেশের মেয়েরা। কিন্তু সে যাত্রায় বাংলাদেশকে হতাশ করেন রেফারি। ২৪ মিনিটে বাংলাদেশকে হতাশ করে গোলবার। থ্রো ইনে সতীর্থের কাছ থেকে ফিরতি পাস পেয়ে উঁচু শট নিয়েছিলেন মোগিনি। বল গোলরক্ষককে ফাঁকি দিলেও ফিরে আসে পোস্টে লেগে।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকে ভারতের উপর চাপ আরো বাড়াতে থাকে বাংলাদেশ। ৪৬ মিনিটে আবারও বাংলাদেশকে হতাশ হতে হয় ক্রসবারের কারণে। আঁখি খাতুনের লম্বা ক্রসে তহুরার শট ক্রসবারে লেগে ফিরে আসে। ৫৭ মিনিটে শামসুন্নাহারের দূরপাল্লার শট চলে যায় ক্রসবারের উপর দিয়ে। শেষ পর্যন্ত ৭৯ মিনিটে আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। কাঙ্খিত গোলের আনন্দে মেতে ওঠে বাংলাদেশ। সে সাথে কমলাপুরের গ্যালারি। রিপার ব্যাক হিলে মোগিনি নিয়েছিলেন দারুণ এক শট। তার বাঁক খাওয়া শট লাফিয়ে উঠে রুখার চেষ্টা করেছিলেন ভারতের গোল রক্ষক। কিন্তু বল তার গ্লাভস ছুঁয়ে জড়ায় জালে। বাংলাদেশ শিবির মাতে বাধ ভাঙ্গা উল্লাসে। যেন গর্জে উঠে কমলাপুর স্টেডিয়ামের গ্যালারিও। বাকিটা সময় এ গোল আগলে রেখেই শিরোপা উৎসবে মেতে ওঠে বাংলাদেশের মেয়েরা। পাঁচ দলের এই টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ কোন গোলই হজম করেনি। গোলও দিয়েছে সবচেয়ে বেশি। প্রতিপক্ষের জালে বাংলাদেশ দিয়েছে ২০ গোল। বাংলাদেশের মেয়েদের এই দলটি লম্বা সময় ধরে খেলছে এক সাথে। আর তারই ফল পাচ্ছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে। যার সবশেষ সংযোজন দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রশংসায় ভাসছে খাগড়াছড়ির মেয়ে আনাই
পরবর্তী নিবন্ধপাসপোর্টে তথ্য সংশোধন এনআইডি অনুযায়ী করা যাবে