বাংলাদেশে শান্তি ও সংলাপ আয়োজনে সহায়তা দিতে প্রস্তুত জাতিসংঘ

যৌথ সংবাদ সম্মেলনে গুতেরেস।। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আরাকান আর্মির সঙ্গে সংলাপে বসার পরামর্শ মহাসচিবের সফর মিথ্যা প্রচার চেষ্টা প্রতিহত করবে : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

আজাদী ডেস্ক | রবিবার , ১৬ মার্চ, ২০২৫ at ৪:১১ পূর্বাহ্ণ

সফররত জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, বাংলাদেশ যখন গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথে অগ্রসর হচ্ছে, সেই মুহূর্তে জাতিসংঘ শান্তি, জাতীয় সংলাপ আয়োজন, আস্থা ও নিজেদের মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক বাড়াতে সহায়তা প্রদানে প্রস্তুত রয়েছে। গতকাল শনিবার রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, বাংলাদেশ যখন গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার ও পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে আমি আপনাদের নিশ্চিত করতে চাই যে জাতিসংঘ শান্তি, জাতীয় সংলাপ, আস্থা ও নিজেদের মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক বাড়াতে সহায়তা প্রদানে প্রস্তুত রয়েছে।

জাতিসংঘ প্রধান বলেন, এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে বাংলাদেশের পাশে থাকতে পেরে তিনি আনন্দিত। তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ উত্তরণের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যেখানে জনগণের বৃহত্তর গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও সমৃদ্ধির আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত হচ্ছে। এটি বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত একটি ন্যায়সঙ্গত, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের পথে আপনাদের প্রচেষ্টাকে সহায়তা করা। খবর বাসসের।

গুতেরেস বলেন, আপনারা জাতিসংঘের ওপর নির্ভর করতে পারেন। আমরা বাংলাদেশের জনগণের পাশে থেকে একটি টেকসই ও ন্যায়সঙ্গত ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে সাহায্য করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি বলেন, বাংলাদেশ শান্তি, উন্নয়ন ও মানবিক সহায়তার প্রতি তার অঙ্গীকারের মাধ্যমে এসব মূল্যবোধের জীবন্ত প্রতীক। বাংলাদেশ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বৃহৎ পরিসরে অবদান রাখা দেশগুলোর একটি উল্লেখ করে জাতিসংঘ মহাসচিব বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে কঠিন ও বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে কাজ করা বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের ত্যাগ ও নিষ্ঠার প্রতি শ্রদ্ধা জানান।

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে আরাকান আর্মির সঙ্গে সংলাপে বসার পরামর্শ : আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, রাখাইনে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রত্যাবর্তন এবং তাদের অধিকার সম্পূর্ণরূপে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য আরাকান আর্মির সঙ্গে সংলাপে বসা জরুরি হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, মিয়ানমারে লড়াই বন্ধ করা ও সেখানে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং মিয়ানমারের সমস্ত প্রতিবেশী দেশের চাপ বৃদ্ধি করা অত্যন্ত জরুরি।

তিনি বলেন, এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, বরং সমগ্র আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং মিয়ানমারের প্রতিবেশী দেশগুলোকে একত্রিত করে একটি সমাধানের জন্য কাজ করতে হবে। এর প্রথম ধাপ হবে সহিংসতা বন্ধ করা এবং একই সঙ্গে এমন কার্যকর ব্যবস্থা গঠন করা, যা মিয়ানমারে প্রকৃত গণতান্ত্রিক সমাধানের পথ সুগম করবে। এটা স্বাভাবিকভাবেই রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবর্তনকে সহজ করবে। তিনি বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারের জন্য একটি মানবিক সহায়তা চ্যানেল তৈরির সম্ভাবনার কথাও উল্লেখ করেন।

জাতিসংঘ মহাসচিবের সফর মিথ্যা প্রচার চেষ্টা প্রতিহত করবে : বিডিনিউজ জানায়, জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সফর বাংলাদেশবিরোধী যে কোনো ধরনের মিথ্যা প্রচার ও অস্থিতিশীল করার চেষ্টাকে প্রতিহত করবে বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। গতকাল শনিবার দুপুরে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে গুতেরেসের সঙ্গে যৌথ ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, জাতিসংঘের মহাসচিব বাংলাদেশবিরোধী ভুয়া তথ্য প্রচার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তার এই সফর যে কোনো ধরনের মিথ্যা প্রচার ও অস্থিতিশীল করার চেষ্টাকে প্রতিহত করবে।

এ সফরকে ঐতিহাসিক মুহূর্ত বলে মন্তব্য করে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এটি বাংলাদেশ ও জাতিসংঘ উভয়ের জন্যই একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত; কারণ মহাসচিব নিজেই এমন এক নতুন বাংলাদেশের গঠনপর্ব প্রত্যক্ষ করছেন। যে বাংলাদেশ জুলাইআগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত আত্মত্যাগের মাধ্যমে এক ন্যায়সঙ্গত, গণতান্ত্রিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজের স্বপ্ন দেখেছে।

তিনি বলেন, রমজান সংহতি সফর একটি ঐতিহ্য, যা মহাসচিব গুতেরেস নিজেই শুরু করেছিলেন। তার ভাষায় ইসলামের প্রকৃত চেহারা স্মরণ করিয়ে দিতে। সংকটময় সময়ে তিনি সবসময় ন্যায়বিচারভিত্তিক, শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক সমাজের প্রচেষ্টার প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছেন। উপদেষ্টার মতে, এই সফর সরকার এবং বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধতর্কাতর্কির জের ধরে নিজ দলের কর্মীদের মারধর, যুবকের মৃত্যু
পরবর্তী নিবন্ধরোহিঙ্গারা উচ্ছ্বসিত, ঘরে ফেরার স্বপ্নে বিভোর