বাংলাদেশে রাবার শিল্প: একটি পর্যালোচনা -৩

ড. সেলিনা আখতার | বুধবার , ২৭ নভেম্বর, ২০২৪ at ৫:৫৯ পূর্বাহ্ণ

রাবান বাগান এলাকার অবকাঠামো উন্নয়ন, বিদ্যুৎ সংযোগের ব্যবস্থা গ্রহণ এবং বাগান এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাসহ সামাজিক পরিবেশ উন্নয়নের যথাযথ ব্যবস্থা করতে হবে। করোনা মহামারির প্রকোপে ক্ষতিগ্রস্ত রাবার বাগান মালিক, শ্রমিক, কর্মচারীদের জন্য বিশেষ প্রণোদনাসহ রাবার চাষিদের পৃষ্ঠপোষকতা ও সহায়তার জন্য সরকারের আলাদা প্রণোদনার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশে দারুণ সম্ভাবনাময় পরিবেশবান্ধব রাবার চাষ খাতটিকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে সরকারি সংশ্লিষ্ট মহলের সুদৃষ্টি প্রদান এখন সময়ের দাবি হয়ে উঠেছে। রাবার শিল্পের সমস্যা লাঘবে সরকারের কাছে ১০ খাতে সহযোগিতা চায় বাংলাদেশ রাবার গার্ডেন ওনার্স এসোসিয়েশন। এ সংক্রান্ত একটি আবেদন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে জমা দেয়া হয়েছে। আবেদনে প্রথম খাত ছিল রাবার প্লট হস্তান্তর ও নবায়ন সহজীকরণ এবং থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়ার আদলে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সমন্বিতভাবে রাবার চাষ করার লক্ষ্যে সমবায় সমিতি ও যৌথ মূলধনী কোম্পানির নামে রাবার প্লট হস্তান্তরে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসককে নির্দেশনা প্রদান।

দ্বিতীয় খাত ছিলকোন প্রকার নোটিশ প্রদান ছাড়া রাবার বাগান মালিকদের বাতিলকৃত রাবার প্লটগুলো পুনর্বহাল। তৃতীয়ত, সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক এবং পুলিশের সহযোগিতায় বরাদ্দকৃত রাবার প্লটগুলোর সিট ও নকশা অনুযায়ী পরিমাপ। চতুর্থপূর্বের স্ট্যাডিং কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রাবার প্লট এলাকায় জেনারেল হোল্ডিং মালিকদের অবৈধ দখল রোধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন। পঞ্চমপুনরায় রাবার ঋণ চালু করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ। ষষ্ঠরাবার আমদানির উপর ৫০ শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপসহ এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ রাবার বোর্ডের অনুমোদন বাধ্যতামূলক করা। সপ্তমশ্রীলংকা, ভারত ও থাইল্যান্ডের ন্যায় রাবার চাষে ভর্তুকির ব্যবস্থা করা। তাতে প্রথম পর্যায়ে ক্লাইমেন্ট চেইঞ্জ ট্রাস্ট ফান্ড থেকে ভর্তুকির ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। কারণ একটি রাবার গাছ বছরে প্রায় ১৪৪ দশমিক ৫ কেজি কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে। অষ্টমহাতিসহ অন্যান্য বন্য প্রাণির হাত থেকে রাবার বাগান রক্ষার জন্য সোলার প্যানেলের ব্যবস্থা গ্রহণ ও হাতি দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত বাগানসমূহ ক্ষতিপূরণ প্রদান। নবমরাবার বাগান এলাকার অবকাঠানো উন্নয়ন, বিদ্যুতের ব্যবস্থা এবং বাগান এলাকার আইনশৃঙ্খলা উন্নয়নে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং দশমরাবার শিল্পে বিরাজমান সমস্যা, যেমন রাবারকে কৃষি পণ্য ঘোষণা, রাবার সিটের উপর আরোপিত ভ্যাট ট্যাক্স প্রত্যাহার, রাবার চাষে প্রণোদনা, আমদানি শুল্ক বৃদ্ধি, রাবার চাষে ঋণ প্রদান, দেশে বিদেশে বাগান মালিক ও শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ, রাবার বাগানের গ্রাফটার ও টেপারদের প্রশিক্ষণ প্রদান।

রাবার শিল্পের উন্নয়নে রাবার গবেষণা ইনস্টিটিউট স্থাপন করা প্রয়োজন। রাবার শিল্পে বিরাজমান সমস্যা সমাধানে এবং এর উন্নয়নের ব্যাপারে অভিজ্ঞ লোকের অভাব থাকায় বিদেশ থেকে রাবার বিশেষজ্ঞ আনার প্রয়োজন রয়েছে। রাবার চাষের ব্যাপারে রাবার চাষীরা সব সময় আর্থিক সঙ্কটে ভুগেন। তারা মূলধন সমস্যার কারণে রাবার বাগানের উন্নয়ন এবং মানসম্মত রাবার উৎপাদনে ব্যর্থ হচ্ছে। রাবার বাগান মালিকদের জন্য সরকার যে ঋণের ব্যবস্থা রেখেছিল তাও এখন বন্ধ রয়েছে। রাবার বাগান মালিকদের সহজ শর্তে ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে।

বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন করপোরেশন রাবার শিল্পকে একটি প্রতিযোগিতামূলক, আত্মনির্ভরশীল ও স্বয়ম্ভর করপোরেট প্রতিষ্ঠানে উন্নীতকরণের জন্য ১৮টি রাবার বাগান উন্নয়ন, রাবার প্রসেসিং প্ল্যান্ট আধুনিকায়নের মাধ্যমে গুণগত মানসম্পন্ন কাঁচা রাবার উৎপাদন ও বিপণনের জন্য প্রকল্পটি নেওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। প্রকল্পের উদ্দেশ্য হলো, অর্থনৈতিকভাবে জীবনচক্র হারানো রাবার গাছ কাটা, পুনরায় বাগান সৃজন, গুণগত মানসম্পন্ন কাঁচা রাবার উৎপাদন ও আধুনিকায়ন করা হবে রাবার প্রসেসিং প্ল্যান্ট। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন করপোরেশনকে একটি প্রতিযোগিতামূলক, আত্মনির্ভরশীল ও স্বয়ম্ভর করপোরেট প্রতিষ্ঠানে উন্নীতকরণ এবং দুর্গম ও পাহাড়ি এলাকার জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান হবে। সার্বিক বিবেচনায় এ শিল্প রক্ষায় নতুন করে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। প্রকল্পের মূল কার্যক্রম হিসেবে ১০টি আধুনিক রিবড স্মোকড শিট (আরএসএস) রাবার প্রসেসিং কারখানা স্থাপন করা হবে। এ ছাড়া ১০ লাখ নতুন রাবার গাছ প্রতিস্থাপন, আধুনিক রাবার প্রসেসিং প্ল্যান্ট স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ ও কর্মকর্তাকর্মচারীদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।

প্রাকৃতিক রাবারের গুণগত মান নিয়ন্ত্রণের জন্য পাঁচটি রাবার টেস্টিং ল্যাব, পাঁচটি এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (ইটিপি) স্থাপন, রাবার সংরক্ষণের জন্য ১০টি ওয়ার হাউজ গোডাউন নির্মাণ, হ্যাভি ডিউটি স্কেল ও ফর্ক লিফট সংগ্রহ করা হবে। প্রকল্পের উদ্দেশ্য হলো, অর্থনৈতিকভাবে জীবনচক্র হারানো রাবার গাছ কাটা, পুনরায় বাগান সৃজন, গুণগত মানসম্পন্ন কাঁচা রাবার উৎপাদন ও আধুনিকায়ন করা হবে রাবার প্রসেসিং প্ল্যান্ট। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন করপোরেশনকে একটি প্রতিযোগিতামূলক, আত্মনির্ভরশীল ও স্বয়ম্ভর করপোরেট প্রতিষ্ঠানে উন্নীতকরণ এবং দুর্গম ও পাহাড়ি এলাকার জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান হবে। সার্বিক বিবেচনায় এ শিল্প রক্ষায় নতুন করে উদ্যোগ নিতে হবে সরকারকে।

রাবার শিল্পের সম্ভাবনা:

বাংলাদেশ রাবার চাষে নবীন হলেও এর ভূপ্রকৃতি, জলবায়ু, পরিবেশ সহায়ক ও আর্থসামাজিক প্রয়োজনে রাবার চাষের গুরুত্ব অপরিসীম। দ্রুত বনায়ন, বনায়নের মাধ্যমে বিস্তীর্ণ এলাকার ভূমিক্ষয় রোধ, বিপুল কর্মসংস্থান, বিদেশে রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক আয়ের ব্যবস্থাসহ প্রভূত কল্যাণ সাধন হবে এ দেশের রাবার চাষের মাধ্যম। আমাদের দেশের জাতীয় অর্থনীতিতে রাবারশিল্প ইতিমধ্যে বিশেষ অবদান রাখতে শুরু করেছে। দেশে উৎপাদিত উন্নতমানের রাবার দেশের চাহিদা পূরণ করে বিদেশেও রপ্তানি করা হচ্ছে। রাবার এমন একটি মূল্যবান অর্থকরী সম্পদ, যার বিভিন্ন ধরনের ব্যবহার রয়েছে।

রাবার গাছ শুধু রাবার উৎপন্ন করে তাই নয়, এই গাছগুলো প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায়, পরিবেশের সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এ গাছ অন্য যেকোনো গাছের চেয়ে তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি পরিমাণ অক্সিজেন উৎপাদন এবং কার্বন শোষণ করে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি হেক্টর রাবার বাগান (যেখানে প্রায় ৪১৫টি উৎপাদনশীল রাবার গাছ রয়েছে) বায়ুমন্ডল থেকে বার্ষিক ৩৯.০২ টন কার্বন শোষণ করে, যা উষ্ণতা রোধে ও পরিবেশ রক্ষায় অতি গুরুত্বপূর্ণ। পামওয়েল উৎপাদনকারী দেশগুলোর মাধ্যমে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ওপরে যে বিরূপ প্রভাবের প্রতিফলন ঘটছে বাংলাদেশের রাবার উৎপাাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে পরিবেশ ও প্রতিবেশের ঐ সমস্ত বিরূপ প্রভাবের অবসান ঘটিয়ে ক্ষতিকারক কার্বনের পরিমাণ শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা সম্ভব হবে। ৩৫ ডিগ্রি ঢালের নিম্ন অংশ পর্যন্ত রাবার চাষ করা হলে এটি ভূমির ক্ষয়রোধ করে। রাবার বাগান জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, বন্য প্রাণীর বিচরণের ক্ষেত্র হিসেবেও ভূমিকা রাখে। রাবার বাগানে হাঁসমুরগী, গরু ছাগলের খামার করা যায়। হলুদ, আদা, লেবু, মালটা, কাজুবাদাম,আম্রপালি এ সমস্ত সাথী ফসলের চাষ করা যায়।

এ গাছের ল্যাটেক্স রাবার শিল্পের মূল কাঁচামাল। রাবার গাছের ফুল হতে মধু উৎপন্ন হয়। গাছের পাতার বোঁটা থেকে ও মধু আহরণ করা যায়। এ মধুর ঔষধি ব্যবহারিক গুণ ও প্রচুর এবং এ মধু খুব সুস্বাদু। রাবার গাছ বায়ু শোষণ করে পরিবেশকে নির্মল রাখে। বাগান ও ঘর সাজানোর জন্য টবে, বাড়ির বাগানে খুব সহজ পদ্ধতিতে রাবার গাছ লাগানো যায়। অল্প যত্ন পেলেই এ গাছ সুন্দরভাবে বেড়ে উঠে। টবে রাখলে ঘরের বাতাস থেকে অনেক ক্ষতিকারক জৈব বাষ্প শুষে নেয়। যেমন: ফর্মালডিহাইড, বেঞ্জিন, টলুইন, ট্রাইক্লোরো, ইথেন ইত্যাদি। রাবারগাছ অনুর্বর পতিত জমিতে জন্মায়। এছাড়া পাহাড়ি জমিতে রাবার চাষ ভালো হয়। আমাদের দেশে বন বিভাগের আওতায় অনেক পাহাড় আছে, যেখানে বনায়ন করা হয়নি। ঐ সমস্ত পাহাড়ে রাবার চাষ করা হলে একদিকে পরিবেশের জন্য সুফল বয়ে আনবে, অন্যদিকে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে যে সমস্ত ঝুঁকি রয়েছে যেমন :খরা, অতিবৃষ্টি, ভূমি রক্ষা, বন্যাএসব প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করা সহজ হবে।

দ্রুত বনায়নের জন্য দ্রুত বর্ধনশীল হিসেবে এ প্রজাতির জুড়ি নেই। এটি বৈশ্বিক উষ্ণতা কমাতে সাহায্য করে, কার্বন শোষণের মাধ্যমে সবুজায়ন করে। রাবার চাষের উন্নয়ন হলে রাবারবাগানে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান হবে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের পাহাড়ি, বাঙালি নারীরা কাজে নিয়োজিত হতে পারবে, তাদের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়ন হবে এবং নারীর ক্ষমতায়নের পথ সুগম হবে। দেশীয় কাঁচা রাবার যখন শিল্পপ্রতিষ্ঠানে ব্যবহার করা হবে, হাজার হাজার শিল্পপণ্য উৎপাাদনে অনেকের কর্মসংস্থান হবে। রাবারভিত্তিক শিল্পপ্রতিষ্ঠানে ব্যাপক কর্মসংস্থান সম্ভব। শুধু শিল্পপ্রতিষ্ঠানে নয়, বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতি ২৫ একর রাবারবাগানে ১০ জন লোকের কর্মসংস্থান হয়।

রাবার গাছের আয়ুস্কাল ৩২৩৪ বছর। এরপরে জীবনচক্র হারানো রাবার গাছ দিয়ে উন্নত মানের আসবাবপত্র তৈরি করা যায় এবং ঘরবাড়ি তৈরির কাজে লাগে। বাংলাদেশে ২০২০ সালের মধ্যে ১ লক্ষ মেঃ টন এবং ২০৫০ সালের মধ্যে ২ লক্ষ মেঃ টন রাবার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। অষ্টম পঞ্চ বার্ষিকী পরিকল্পনা, ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ এবং ২০ বছর মেয়াদী প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২১২০৪১ এ দারিদ্রের হার ১৫.% এ কমিয়ে আনা, ৭৫ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি, নারীর ক্ষমতায়নের উপরে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। রাবার চাষ এবং রাবার ভিত্তিক শিল্প প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এসব ক্ষেত্রে অবদান রাখার ব্যাপক সুযোগ রয়েছে। এছাড়া জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট লক্ষমাত্রার ১..১ সূচকে দারিদ্র্য বিলোপ, সূচক ৫ এ জেন্ডার সমতা ও নারীর ক্ষমতায়ন এবং ১৩.২ এ জলবায়ু পরিবর্তন ও এর প্রভাব মোকাবেলায় জরুরি কর্ম ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

আমাদের দেশের যেসব স্থানে এখানো পর্যন্ত রাবার চাষ করা হয়নি, সেসব স্থানে রাবারবাগান প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া যায়। রাবার প্রসেসিং করার জন্য পৃথক পৃথক উন্নত প্রসেসিং প্ল্যান্ট সরকারি উদ্যোগে স্থাপন করতে হবে। এতে করে রাবারের উত্‌পাদন বৃদ্ধি পাবে এবং মানসম্মত রাবার পাওয়া যাবে। রাবারগাছকে প্রক্রিয়াজাত করে মূল্যবান আসবাবপত্র তৈরির মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা আয় করা সম্ভব হবে। রাবারশিল্পের সঙ্গে রাবারগাছের কাঠও দেশের জন্য বিশাল সম্ভাবনা নিয়ে আসতে পারে। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, প্রতিবছর ৩% হারে রাবারের চাহিদা বেড়ে চলছে। শ্রমিক সংকট ও শ্রমদর বৃদ্ধি পাওয়ায় এশিয়ার সর্বাধিক রাবার সরবরাহকারী দেশ মালয়েশিয়া পর্যায়ক্রমে রাবার চাষ কমিয়ে দেওয়ায় বাংলাদেশের জন্য এটি একটি শিল্প সুযোগ তৈরি হয়েছে। বর্তমানে মালয়েশিয়া রাবার বোর্ড বাংলাদেশ রাবার বোর্ডের সাথে সহযোগী হিসেবে যৌথভাবে রাবার খাতে বিনিয়োগ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশের আগ্রহী উদ্যোক্তারা এগিয়ে আসলে বাংলাদেশের অর্থনীতি পরিবেশ ও জনসম্পদের উন্নয়ন বিশাল সম্ভাবনার দুয়ার খুলে যাবে। প্রকৃতপক্ষে রাবার চাষ অত্যন্ত সম্ভাবনাময় একটি খাত। এই খাতের মাধ্যমে পরিবেশের জন্য এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য ব্যাপক অবদান রাখা সম্ভব। শত শত একর খালি পাহাড়ি জমি ও অন্যান্য পতিত জমি রাবার চাষের আওতাভুক্ত করে জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করে সবুজায়নের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবিলায় অবদান রাখা যাবে। এর জন্য প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা ও সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা। বিদ্যমান সমস্যাগুলো কাটিয়ে উঠতে পারলে রাবার উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করা এবং রাবারের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন শুধু সময়ের ব্যাপার। সমাপ্ত।

(লেখাটি তৈরি করতে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত প্রবন্ধ ও প্রতিবেদনের সহায়তা নেওয়া হয়েছে)

লেখক: শিক্ষাবিদ, সাবেক সভাপতি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, সাবেক উপাচার্য, রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রাতিষ্ঠানিক রূপ ছাড়া গণতন্ত্র টেকসই হয় না
পরবর্তী নিবন্ধহামলা-লুটপাটে মোল্লা কলেজের ক্ষতি ৫০ কোটি টাকা, দাবি অধ্যক্ষের