বাংলাদেশে রাবার শিল্প : একটি পর্যালোচনা

ড. সেলিনা আখতার | বুধবার , ১৩ নভেম্বর, ২০২৪ at ৫:০৩ পূর্বাহ্ণ

রাবার গাছের দুধরঙের কষ (ল্যাটেক্স) একটি আশ্চর্যজনক প্রাকৃতিক দ্রব্য, যা আমরা পাই উদ্ভিদ জগতের ইউফরবিয়াসি পরিবারের অন্তর্ভুক্ত হিভিয়া ব্রাসিলিয়েনসিস বৈজ্ঞানিক নামধারী বৃক্ষ থেকে। এটি আমাজন রেইনফরেস্টের একটি বৃক্ষ যার আদি নিবাস দক্ষিণ আমেরিকার আমাজান উপত্যকার প্রাকৃতিক বনাঞ্চল। দক্ষিণ আমেরিকার প্রথম রাবার আবিষ্কারক হিসেবে ক্রিস্টোফার কলম্বাসকে গণ্য করা হয়। তিনি ১৪৯৬ সালে সেখান থেকে কিছু রাবার বল নিয়ে আসেন, যা এক ধরনের গাছের আঠা হতে তৈরি। তখন হাইতির লোকেরা খেলার জন্য রাবার বল ব্যবহার করতো। এরপর ১৮৭৩১৮৭৬ সালের দিকে ব্রাজিল হতে কিছু রাবার বীজ এনে পরীক্ষামূলকভাবে লন্ডনের কিউ গার্ডেনে রোপণ করেন ব্রিটিশদের এক উৎসাহী দল। এখান থেকে প্রায় ২০০০ চারা বর্তমান শ্রীলংকাতে প্রেরণ করা হয়; এবং সেখান থেকে কিছু সংখ্যক চারা মালয়েশিয়া, জাভা দ্বীপপুঞ্জ, সিংগাপুর পরবর্তীতে কিছু চারা ইন্ডিয়া ও অন্যান্য দেশে পাঠানো হয়। এ চারাগুলো হতেই প্রাচ্যে রাবার চাষের গোড়াপত্তন হয়। রাবার গাছ থেকে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে কষ আহরণের পদ্ধতি আবিষ্কার করে যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করেন সিংগাপুর বোটানিক্যাল গার্ডেনের পরিচালক এইচ রিডলী। রাবার গাছ হতে উৎপাদিত দুধের মত সাদা তরল পদার্র্থ ল্যাটেক্সই হচ্ছে রাবার। যার মধ্যে রাবার পার্টিক্যাল কলোয়েড আকারে ভাসমান থাকে। লেটেক্সের মধ্যে শতকরা প্রায় ২৫৩০ ভাগ রাবার হাইড্রোকার্বন, ৬০ ভাগ পানি, বাকি অংশে প্রোটিন, পেগমেন্ট, লবণ ও চিনি জাতীয় পদার্থ আছে। পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি প্রাকৃতিক রাবার এখন এশিয়াতে উৎপাদিত হয়। কলম্বাস গাছটিকে বলতেন, ‘কাওটচৌচ। এটি আমাজন জঙ্গলের আদিবাসীদের একটি শব্দ; যার অর্থ ‘যে গাছ কাঁদে’।

বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে ব্রিটিশদের মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রথম রাবার চাষ শুরু হয়। ১৯১০ সালে কলিকাতা বোটানিক্যাল গার্ডেন থেকে রাবার গাছের চারা এনে চট্টগ্রামে বারমাসিয়া ও সিলেটের আমু চা বাগানে রোপন করা হয়। দীর্ঘ বিরতির পর ১৯৫২ সালে বন বিভাগ টাংগাইলের মধুপুর, চট্রগ্রামের হাজেরীখিল ও পঞ্চগড়ের তেতুলিয়ায় পরীক্ষামূলক কিছু গাছ রোপন করে এবং ১৯৫৯ সালে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার একজন রাবার বিশেষজ্ঞ মিঃ ইউলিয়াম লয়েডকে বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে রাবারের বাণিজ্যিক চাষে সম্ভাব্যতা যাচাই করার জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়। তিনি তার সমীক্ষায় এদেশের জলবায়ু ও পাহাড়ি এলাকার মাটি বাণিজ্যিক ভাবে রাবার চাষের উপযোগী হিসেবে চিহ্নিত করে রাবার চাষের অনুকূলে রিপোর্ট দেন। এই রির্পোটের সুপারিশের ভিত্তিতে ১৯৬০ সালে বনবিভাগ ৭১০ একরে একটি পাইলট প্রকল্প গ্রহণ করে চট্টগ্রামের রাউজানে ১০ একর এবং কক্সবাজারের রামুতে ৩০ একর মোট ৪০ একর বাগান সৃষ্টির মাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে এদেশে রাবার চাষের যাত্রা শুরু হয় এবং ১৯৬০৬৫ সালের মধ্যে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনা নেয়। এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নকালে প্রকল্প সংশোধন করে সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বন বিভাগ ১৯৬২ সালে ৩,০০০ একর রাবার বাগান সৃষ্টির লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে পুন:প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এবং বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফআইডিসি)-এর উপর রাবার চাষ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব ন্যস্ত করে। এই প্রকল্পের সাফল্যের প্রেক্ষিতে সরকার ১৯৬৫ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত আরও ১০,৫০০ একর রাবার বাগান সৃষ্টি ও প্রাথমিকভাবে রাবার প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য আরও একটি প্রকল্প গ্রহণ করে।

১৯৬০ থেকে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত ১৩ বছরে রাবার বাগান সৃষ্টির জন্য বিএফআইডিসি’র অধীনে চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলে ৭,৭০০ একর এলাকাকে রাবার বাগানের জন্যে নির্বাচন করা হয়। তবে উক্ত সময়কালে প্রত্যাশিত উৎপাদনশীল এলাকা ২,০০০ একরের মধ্যে মাত্র ৪৪০ একর উৎপাদনের আওতায় আসে। এ পরিস্থিতিতে ১৯৭৪ সালে সরকার অধিকতর বিনিয়োগ বৃদ্ধি করে অবকাঠামো উন্নয়ন, আর্থিক বিনিয়োগ, গবেষণা ও প্রশিক্ষণ সুবিধার মাধ্যমে পুনরায় রাবার বাগান সৃজন করে উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহন করে। বাংলাদেশের যে সকল ভূমি খাদ্যশস্য বা অন্যান্য ফসলাদির জন্য অনুপযুক্ত, ঐ সকল অনাবাদি/ পতিত জমিতে ব্যাপকভাবে রাবার চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা বিবেচনায় সরকার দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ১৯৮০৮১ সাল থেকে ১৯৮৪৮৫ সাল পর্যন্ত সরকারি খাতে ৪০,০০০ একর এবং ব্যক্তিমালিকানায় ৩০,০০০ একর অর্থাৎ মোট ৭০,০০০ একরে রাবার বাগান সৃষ্টির পরিকল্পনা গ্রহণ করে।

১৯৮০৮১ সাল থেকে বিএফআইডিসি উচ্চফলনশীল জাতের রাবার চাষ শুরু করে। ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত বিএফআইডিসি চট্টগ্রাম, সিলেট ও মধুপুর অঞ্চলে ১৬টি রাবার বাগানের অধীনে মোট ৩২,৬৩৫ একরে রাবার বাগান সৃষ্টি করে। বিএফআইডিসি’র উত্তোলিত রাবার বাগানের প্রায় ৮০% গাছ মালয়েশিয়ার জজওগ৬০০ এবং চই২৩৫ ঈষড়হব দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে। এ সকল ক্লোনের প্রতি গাছ হতে গড়ে বার্ষিক ৩ কেজি হারে রাবার পাওয়া যায়।

১৯৬৭৬৮ সালে বাণিজ্যিকভাবে দেশে প্রথম বিএফআইডিসি ০.৭ মেট্রিক টন রাবার উৎপাদন করে। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭২৭৩ সালে ৫৫ মেট্রিক টন এবং ১৯৭৮৮৯ সালে ৪২৯ মেট্রিক টন রাবার উৎপাদিত হয়। ২০০৮০৯ সালে বিএফআইডিসি প্রায় ৬,১০০ মেট্রিক টন এবং প্রাইভেট সেক্টরে প্রায় ৫,৫০০ মেট্রিক টন রাবার উৎপাদিত হয়েছে। বিএফআইডিসি’র উৎপাদিত রাবার খোলা টেন্ডারে প্রতি কেজি ২২০ টাকা থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এ হিসেবে কেবলমাত্র ২০০৮০৯ সালে দেশে উৎপাদিত ১১,৬০০ মেট্রিক টন রাবারের গড় বিক্রয়মূল্য ২৫৫ কোটি টাকা।

বনশিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশন এর আওতাধীন বাগানসমূহ : বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশনের চট্টগ্রাম জোনে ৯টি, টাঙ্গাইলময়মংসিংহে ৫টি, সিলেটে৪টিসহ বর্তমানে দেশে মোট ১৮টি সরকারি রাবার বাগান রয়েছে। ১৮টি সরকারি বাগানের মধ্যে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির দাঁতমারা রাবার বাগানটি এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বড়। সবকটি বাগানেই বছর বছর রাবারের উৎপাদন বাড়ছে এবং এসব বাগান থেকে বর্তমানে বছরে অন্তত সাড়ে পাঁচ হাজার মেট্রিক টন রাবার উৎপাদন হচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফআইডিসি) ১৮টি রাবার বাগানে প্রায় ৩৮ লাখ ৭৮ হাজার রাবার গাছ রয়েছে যার মধ্যে ২০ লাখ রাবার গাছ উৎপাদনের আওতায় আছে। অন্যদিকে দেশে রাবার চাষ সম্প্রসারণের লক্ষ্যে সরকার চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনারকে প্রধান করে ১৮ সদস্যের একটি স্থায়ী কমিটির মাধ্যমে পার্বত্য জেলা বান্দরবানে ২৫ একর হারে ১৩০২ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ৩২,৫৫০ একর জমি বরাদ্দ দেয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন বহুজাতিক কোম্পানি, চা বাগান মালিকসহ ছোট ও ক্ষুদ্র আকারের ব্যক্তি মালিকানাধীনে আরও ২০,৮০০ একর জমিতে রাবার চাষের তথ্য পাওয়া যায়। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে ৩ হাজার ৩শ একর ভূমিতে ১১টি বাগান রয়েছে।

রাবার বোর্ডের কার্যক্রম : প্রায় হারিয়ে যাওয়া রাবার চাষকে পুনরুজ্জীবিত করার লক্ষ্যে সরকার বিগত ৫ মে ২০১৩ খ্রি তারিখে বাংলাদেশ রাবার বোর্ড আইন ২০১৩ (২০১৩ সালের ১৯ নম্বর আইন) এর মাধ্যমে বাংলাদেশ রাবার বোর্ড প্রতিষ্ঠা করে। বাংলাদেশ রাবার বোর্ড একটি সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান। শুরু থেকে বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশনের সাথে রাবার বোর্ডের কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছিল। ৩০ এপ্রিল ২০১৯ তারিখ হতে বাংলাদেশ রাবার বোর্ড স্বতন্ত্রভাবে এর কার্যক্রম শুরু করে।

বাংলাদেশ রাবার বোর্ডের অন্যতম কাজ হলো রাবার চাষ ও রাবার শিল্পের সার্বিক অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ ও পরিবীক্ষণ , উৎপাদিত রাবার বিপণন ও রপ্তানীর জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান, রাবার চাষে আগ্রহী উপযুক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বাছাই এবং তাদের অনুকুলে জমি ইজারা প্রদানের নিমিত্ত সরকারের নিকট সুপারিশ পেশ, ইজারা চুক্তির শর্ত ভঙ্গকারীর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে সরকারকে প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রদান, রাবার বাগানের মালিক, শ্রমিক ও কর্মচারীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ, জীবনচক্র হারানো রাবার কাঠ আহরণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বিপণনে সহায়তা প্রদান, ক্ষতিকারক কৃত্রিম রাবার সমাগ্রীর উৎপাদন, আমাদানি, বিপণন ও ব্যবহার নিরুৎসাহিত করার জন্য সরকারকে পরামর্শ প্রদান প্রভৃতি।

বাংলাদেশ রাবার বোর্ড আইন, ২০১৩ অনুযায়ী বোর্ডের কার্যাবলি: রাবার চাষ ও রাবার শিল্প সংক্রান্ত নীতিমালা ও পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং উহা বাস্তবায়নে সরকারকে সুপারিশ, পরামর্শ ও সহায়তা প্রদান; সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয় বা বিভাগের সহযোগিতায় রাবার চাষ উপযোগী জমি চিহ্নিতকরণ; রাবার চাষে আগ্রহী উপযুক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বাছাই এবং তাহাদের অনুকূলে জমি ইজারা বা বরাদ্দ প্রদানের নিমিত্ত সরকারের নিকট সুপারিশ পেশ; ইজারা বা বরাদ্দ চুক্তির শর্ত ভঙ্গকারীর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে সরকারকে প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রদান; রাবার বাগান সৃজনে উহার মালিক বা ক্ষেত্রমত, বরাদ্দ গ্রহীতাগণকে উদ্ধুদ্ধকরণ; রাবার বাগান সৃজন এবং রাবার শিল্প স্থাপন ও বিকাশে মালিক বা, ক্ষেত্রমত, বরাদ্দ, গ্রহীতাগণকে ঋণ ও বীমা সুবিধা প্রাপ্তিতে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান; রাবার বাগানের মালিক বা, ক্ষেত্রমত, বরাদ্দ গ্রহীতাগণকে বৈজ্ঞানিক, কারিগরি ও অর্থনৈতিক সহায়তা প্রদান; রাবার বাগানের মালিক, শ্রমিক ও কর্মচারীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ; ক্ষতিকারক কৃত্রিম রাবার সামগ্রীর উৎপাদন, আমদানী, বিপণন ও ব্যবহার নিরুৎসাহিত করিবার জন্য সরকারকে পরামর্শ প্রদান; রাবার বাগানের জমির অনুপযুক্ত অংশে (৩৫ ডিগ্রি ঢালের উপর অথবা জলাবদ্ধ অংশে) ফলজ, বনজ বা ঔষধি বৃক্ষসহ অন্যান্য সাহয়ক অর্থকরী ফসল উৎপাদনে প্রযুক্তিগত ও অর্থনৈতিক সহায়তা প্রদান; উৎপাদিত রাবার বিপণন বা, ক্ষেত্রমত, রপ্তানীর জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান; রাবার চাষ ও রাবার শিল্প সংক্রান্ত যে কোন বিষয়ে ডাটাবেজ তৈরী ও নিয়মিত হালনাগাদকরণ; রাবার চাষ ও রাবার শিল্পের সার্বিক অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ ও পরিবীক্ষণ; রাবার বাগান ও রাবার শিল্পের সহিত সংশ্লিষ্ট শ্রমিক ও কর্মচারীদের জন্য প্রয়োজনীয় কল্যাণমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ; রাবার চাষ ও রাবার শিল্প বিষয়ে গবেষণার নিমিত্ত রাবার গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার জন্য সরকারকে সুপারিশ প্রদান; জীবনচক্র হারানো রাবার কাঠ আহরণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বিপণনে সহায়তা প্রদান; রাবার চাষ ও পুনর্বাসন কার্যক্রমে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান; এবং সরকার কর্তৃক সময়ে সময়ে অর্পিত অন্য কোন দায়িত্ব পালন করা।

রাবারের উৎপাদন পদ্ধতি: সারা বছরই রাবার উৎপাদন চলে। তবে অক্টোবর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত ৪ মাস রাবার উৎপাদনের ভর মৌসুম। শীতে কষ আহরণ বেশি হয় আবার বর্ষায় উৎপাদন কমে আসে। রাবার গাছ মধ্যমাকৃতি। এই গাছের কাণ্ড লম্বা, পাতা পুরু, গাঢ় সবুজ। দুধের মতো সাদা, ঘন, আঠাল তরল নিঃসরণ হিসেবে রাবার সংগ্রহ করা হয়।

সাধারণ একটি গাছ (কষ) ল্যাটেক্স উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জন করার জন্য ৫৬ বছর সময় প্রয়োজন হয়। প্রথম দিকে কষ উৎপাদনের হার কম থাকে। বছর বছর এটি বাড়ে। সম্পূর্ণ ফলন প্রাপ্তির জন্য ১০ বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। সাধারণত দুই বছর বয়সী গাছ থেকে প্রথম কষ সংগ্রহ শুরু হয়। গাছপ্রতি বছরে গড়পড়তা উৎপাদন প্রায় দুই কিলোগ্রাম রাবার। প্রাকৃতিক রাবার হচ্ছে মূলত জৈব যৌগ আইসোপ্রিনের একটি পলিমার। পরিপক্ক রাবার গাছ হতে নিয়ন্ত্রিত কাটার মাধ্যমে কষ সংগ্রহ করার পদ্ধতিকে টেপিং বলে। সঠিক টেপিংয়ের মাধ্যমে কষ উৎপাদনক্ষম রাবর গাছ হতে সর্বাধিক পরিমান কষ আহরণ করা সম্ভব। একটি পরিপক্ব রাবার গাছ থেকে বেশি কষ সংগ্রহ করতে হলে টেপিং কাজটা সূর্য ওঠার আগে অর্থাৎ খুব ভোরে করতে হয়। কারণ এ সময় সূর্যের আলো পর্যাপ্ত না থাকায় গাছে প্রস্বেদন ক্রিয়া শুরু না হওয়ায় কষনালীতে কষ প্রবাহ চালু থাকে, আর সূর্য়্যের তাপ বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে কষনালীসমূহ সঙ্কুচিত হয়ে যায় ফলে কষ প্রবাহে তার স্বাভাবিক গতির ব্যাঘাত ঘটে। বাকলই হচ্ছে রাবার গাছের একমাত্র উৎপাদনশীল অংশ। বাকলের ভিতরের অংশে রয়েছে লেটেক্স ভেসেল রাবার উৎপাদনকারী কষনালী। এই কষনালীগুলোতেই দুধের মত সাদা রাবার কষ সঞ্চিত থাকে। টেপিং করার সময় বাকলের বাইরের দুটি স্তর ভেদ করে এই কষ নালীর স্তর কেটেই রাবার কষ সংগ্রহ করতে হয়। (চলবে)

লেখক: শিক্ষাবিদ, সাবেক সভাপতি, চট্টগ্রম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, সাবেক উপাচার্য, রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাংলাদেশের ফার্মাসিউটিক্যালস রিপ্রেজেনটিভদের প্রতি বঞ্চনা ও শ্রম অধিকার
পরবর্তী নিবন্ধওয়ানডে র‌্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের অবনমন