দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলের বাংলাদেশ দূতাবাস এই করোনাকালেও নিয়ে যাচ্ছে একের পর এক উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণ কোর্স, শিশুদের বাংলা শেখার ক্লাস, প্রবাসে বসে উম্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ডিগ্রি অর্জনের সুযোগ, ভিসা নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ সহ আরো বিভিন্ন উদ্যোগ।
এরই ধারাবাহিকতায় অনুষ্ঠিত হলো কোরিয়া-বাংলাদেশের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দ্বিপাক্ষিক বৈঠক।
দক্ষিণ কোরিয়ার বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পঞ্চম অবস্থানে যা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। গত দুই-তিন বছরে অবশ্য বাংলাদেশে কোরিয়ার বিনিয়োগ বেড়েছে। এর ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং দক্ষিণ কোরিয়ার বাণিজ্য, শিল্প ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে এবং সিউলের বাংলাদেশ দূতাবাসের সার্বিক তত্ত্বাবধানে উভয় দেশের মধ্যে ‘বাণিজ্য বিস্তার ও বিনিয়োগের সুযোগ-সুবিধা অন্বেষণ’ সম্পর্কিত প্রথমবারের মতো গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপক্ষীয় বৈঠকটি ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত হয় গত ২২ জানুয়ারি কোরিয়া সময় দুপুর ২টায়।
এই বৈঠকে দুই দেশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ এবং স্বনামধন্য বাণিজ্যিক সংস্থার প্রতিনিধি সহ প্রায় ৬২ জন অংশগ্রহণ করেন। এই বৈঠকের সার্বিক সাফল্য কামনা করে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশে নিযুক্ত দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত লি জ্যাং-গুন।
চমৎকার ও প্রাণবন্ত প্রেজেন্টেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রথম সচিব(রাজনৈতিক) ও দূতালয় প্রধান সামুয়েল মুর্মু। স্বাগত বক্তব্য রাখেন রাষ্টদূত আবিদা ইসলাম।
দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত সহযোগিতার সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরে রাষ্টদূত উল্লেখ করেন, দক্ষিণ কোরিয়া কর্তৃক বাংলাদেশে বিনিয়োগের সম্ভাব্য ক্ষেত্রসমূহ হলো সুনীল অর্থনীতি, জাহাজ শিল্প, বায়োটেক শিল্প, মাছ ও সমুদ্র শৈবাল প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র ইত্যাদি। এছাড়াও দুই দেশের ব্যবসায়িক প্রতিনিধিদের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ স্থাপন এবং মতবিনিয়োগের ওপরও জোর দেন তিনি।
বাংলাদেশে নিযুক্ত দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত লি জ্যাং-গুন তার উদ্বোধনী বক্তব্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগের পরিস্থিতি এবং এর ভবিষ্যত সম্পর্কে দিকনির্দেশনামূলক একটি সংক্ষিপ্ত বক্তব্য প্রদান করেন। দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধিতে এই বৈঠক সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
দক্ষিণ কোরিয়ার ইম্পোর্টার্স এসোসিয়েশন (কোইমা)-এর চেয়ারম্যান হং গুয়াং-হি বলেন, “এই বৈঠক দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্পর্ককে আরও জোরদার করতে এবং দুই দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে বাণিজ্য সংক্রান্ত কাঙ্খিত নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণে অবদান রাখবে।”
উভয় দেশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ আলোচনাকালে পণ্যের বৈচিত্র্যকরণ এবং দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার ওপর জোর দেন। চীন, ভারত এবং পাকিস্তান অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ সংযোগস্হলে অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই বিনিয়োগ আকর্ষণে সমর্থ হয়েছে যা তার অবকাঠামো সম্প্রসারণের মাধ্যমে অর্থনৈতিক বিকাশে সহায়ক হয়েছে বলে দক্ষিণ কোরিয়ার বাণিজ্য, শিল্প ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক ইউন জং চুন মন্তব্য করেন।
এর ফলে বাংলাদেশের প্রতি কোরিয়ার বিনিয়োগকারীদের আগ্রহও ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে জানান তিনি।
তিনি দুই দেশের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার বৈচিত্র্যকরণের ওপর জোর দেন এবং ইস্পাত, জাহাজ নির্মাণ, রাসায়নিক ও উচ্চপ্রযুক্তির শিল্পসমূহকে সহযোগিতার নতুন ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত করেন।
বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. আবদুর রহিম খান, বাণিজ্য নীতিমালা তৈরির ক্ষেত্রে সরকারের প্রচেষ্টার ওপর আলোকপাতকালে বাংলাদেশের রফতানিকৃত পণ্যের বৈচিত্র্যকরণের ওপর জোর দেন এবং বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণে সরকারের উদ্যোগ সমূহ তুলে ধরেন।
বাংলাদেশে পণ্যের বৈচিত্র্যকরণের এই সুযোগ নিয়ে তিনি কোরিয়ার বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে কোরিয়া বাণিজ্য-বিনিয়োগ প্রমোশন এজেন্সি(কোটরা) কর্তৃক ‘অর্থনৈতিক প্রবণতা এবং বাংলাদেশে কোরিয়ার ব্যবসায়িক উপস্থিতি’, কোইমা কর্তৃক ‘ভোক্তা বাজার ও আমদানি যোগ্য পণ্য’ বিষয়ক উপস্থাপনা প্রদান করা হয়।
এরপর ‘বাংলাদেশ ও দক্ষিণ কোরিয়ার বাণিজ্য এবং বিনিয়োগের সুযোগ অন্বেষণ’ সংক্রান্ত বিশদ উপস্থাপনা সহ প্রশ্নোত্তর পর্বের উত্তর প্রদান করেন সিউলস্হ বাংলাদেশ দূতাবাসের কমার্শিয়াল কাউন্সিলর ড. মো. মিজানুর রহমান।
তিনি বলেন, “বর্তমানে বাংলাদেশ হলো এশিয়ার প্রথম ও বিশ্বের দশম দ্রুত ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির দেশ।”
প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশগ্রহণ করে বক্তব্য রাখেন ঢাকা চেম্বার অভ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি(ডিসিসিআই) সেক্রেটারি মো. জয়নাল আবেদিন, মেট্রোপলিটন চেম্বার অভ কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির মো. মোসলেম উদ্দিন খান, ইনভেস্টর সার্ভিসেস প্রা. লি.-এর চেয়ারম্যান এজেডএম আজিজুর রহমান, বাংলাদেশ ইকোনমিক জোন ইনভেস্টর ফোরামের আশরাফ চৌধুরী প্রমুখ।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জাকির আহমেদ, সৈয়দ এম রহমান, জিয়াউল হক, মো. রফিউল আলম ও সিউল দূতাবাসের দ্বিতীয় সচিব মিসপে সরেন সহ আরো অনেকে।
দুই দেশের মধ্যে নতুন সূর্য তথা নতুন নতুন সম্ভাবনার দ্বার উদিত হওয়ার প্রত্যাশা নিয়ে রাষ্টদূত আবিদা ইসলামের সমাপনী বক্তব্য ও সিউল বাংলাদেশ দূতাবাসের ধন্যবাদ জ্ঞাপনের মধ্যে দিয়ে বৈঠকটি সমাপ্ত হয়।