বাংলাদেশে উচ্চ রক্তচাপ ও টাইপ ২ ডায়াবেটিসের প্রাদুর্ভাব উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা দেশের জন্য একটি বড় স্বাস্থ্য ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে। মোহাম্মদ ইনজামুল হক এবং তাঁর সহকর্মীদের পরিচালিত এই গবেষণায় ২০১০ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে এই দুটি রোগের প্রবণতা নিয়ে বিস্তারিত বিশ্লেষণ করা হয়েছে। গবেষণাটি বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার জন্য গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা প্রদান করে, যা রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সহায়ক। গবেষণার প্রধান ফলাফল অনুযায়ী, বাংলাদেশের জনসংখ্যার প্রায় ২১.৬% মানুষ উচ্চ রক্তচাপে এবং ১৩.৬% মানুষ টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। পুরুষদের তুলনায় নারীদের মধ্যে এই রোগগুলোর প্রাদুর্ভাব বেশি এবং নগর অঞ্চলে রোগটির প্রকোপ গ্রামীণ অঞ্চলের তুলনায় বেশি। নগরাঞ্চলে ২৮.৫% মানুষ উচ্চ রক্তচাপে এবং ১৮.৮% মানুষ ডায়াবেটিসে ভুগছে, যেখানে গ্রামীণ এলাকায় এই হার যথাক্রমে ২০.৩% এবং ১৪.২%। গবেষণাটি পূর্ববর্তী সময়কালের তুলনায় এই রোগগুলোর ব্যাপক বৃদ্ধির দিকটি তুলে ধরে। ১৯৯৫–২০১০ সময়কালে যে হারে এই রোগগুলো দেখা গিয়েছিল, বর্তমানে তা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। ১৯৯৫–২০১০ সালে উচ্চ রক্তচাপের প্রাদুর্ভাব ছিল ১৩.৭% এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিস ছিল ৬.৭%, যা ২০১০–২০২০ সময়কালে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। এই বৃদ্ধি পেছনে কয়েকটি প্রধান কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। গবেষকরা জানান, দ্রুত নগরায়ণ, খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন, এবং ফাস্ট ফুডের প্রতি মানুষের ঝোঁক এই রোগগুলির জন্য দায়ী। অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, যেমন শারীরিক কর্মক্ষমতার অভাব এবং স্থূলতার প্রাদুর্ভাবও এই রোগগুলোর বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এছাড়া, বাংলাদেশের নারীরা শারীরিক কর্মকাণ্ডে পুরুষদের তুলনায় কম সক্রিয়, যার কারণে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি তাদের মধ্যে বেশি। গবেষণায় দেখা গেছে, নারীদের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপের হার ২৪.৮% এবং পুরুষদের মধ্যে ১৮.৬%, যা নারীদের ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার কথা নির্দেশ করে। গবেষকরা পরামর্শ দিয়েছেন যে, স্বাস্থ্য সচেতনতা এবং প্রতিরোধমূলক কর্মসূচি বিশেষ করে নগর এলাকায় নারীদের জন্য বাড়ানো উচিত। তদ্ব্যতীত, বিশেষজ্ঞরা বলেন, শিশু ও যুবকদের মধ্যে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়মিত শারীরিক ক্রিয়াকলাপের অনুপ্রেরণা প্রদান করলে রোগের ঝুঁকি অনেকাংশে কমানো সম্ভব। গবেষণাটি আরও সুপারিশ করেছে যে, বাংলাদেশে উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিসের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য কার্যকর নীতি প্রণয়ন প্রয়োজন। তাৎক্ষণিক পদক্ষেপের মাধ্যমে এই রোগগুলো থেকে সৃষ্ট ঝুঁকি ও অর্থনৈতিক ক্ষতি কমিয়ে আনা যেতে পারে। গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী, বাংলাদেশের সরকারকে উচ্চ রক্তচাপ ও টাইপ ২ ডায়াবেটিসের প্রকোপ রোধে জরুরি ভিত্তিতে পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। রোগের কারণে জনসাধারণের জীবনমানের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে এবং এ থেকে মুক্তির জন্য সচেতনতা বৃদ্ধি, স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম জোরদার করা, এবং রোগ প্রতিরোধে পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। এই প্রবন্ধটি, ‘বাংলাদেশে উচ্চ রক্তচাপ ও টাইপ ২ ডায়াবেটিসের প্রাদুর্ভাবের প্রবণতা (২০১০–২০২০): একটি সিস্টেমেটিক রিভিউ এবং মেটা–অ্যানালাইসিস,’ প্রকাশ করেছে বেন্থাম সায়েন্স পাবলিশার্স কারেন্ট ডায়াবেটিস রিভিউস জার্নালে, যার ইম্প্যাক্ট ফ্যাক্টর ২.৩৭।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক, স্কুল অব পাবলিক হেলথ, ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি চট্টগ্রাম।