বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের ৩৩০ বিজিপি সদস্যকে হস্তান্তর

উখিয়া প্রতিনিধি | শুক্রবার , ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ at ৫:২০ পূর্বাহ্ণ

মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান সংঘর্ষের জেরে প্রাণভয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে এসে আশ্রয় নেওয়া বর্ডার গার্ড পুলিশ বা বিজিপি, সেনা ও অন্যান্য সদস্যদের তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার উখিয়ার ইনানী নেভাল জেটি দিয়ে দুই দফায় মোট ৩৩০ জনকে সমুদ্র পথে ফেরত পাঠানো হয়। বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া এ সেনা সদস্যদের রাখা হয়েছিল টেকনাফ হ্নীলা ও নাইক্ষংছড়ির ঘুমধুমের দুটি হাই স্কুলে। গতকাল বৃহস্পতিবার ভোর থেকে তাদের ইনানী নেভাল জেটিতে স্থানান্তর প্রক্রিয়া শুরু করে বিজিবি, পুলিশ, র‌্যাব ও স্থানীয় প্রশাসন। তাদের পরিচয় শনাক্তে ইতিপূর্বে স্থানীয় প্রশাসন তাদের বায়োমেট্রিক সম্পন্ন করেছে বলে জানা গেছে।

বিজিবি সূত্র জানায়, পালিয়ে আসাদের মধ্যে ৩০২ জন বিজিপি সদস্য, ৪ জন বিজিপি পরিবারের সদস্য, ২ জন সেনা সদস্য, ১৮ জন ইমিগ্রেশন সদস্য এবং ৪ জন বেসামরিক নাগরিকসহ সর্বমোট ৩৩০ জন। গতকাল সকাল ছয়টায় ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৬৬ জন ও ১৬৪ জন হ্নীলা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বাসে করে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে ইনানীর নেভাল জেটি ঘাটে আনা হয়। ইনানী পর্যন্ত পুরো এলাকা কঠোর নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে রাখা হয়েছিল। ইনানী নেভাল জেটি ঘাট সংলগ্ন এলাকায় মিয়ানমারের পলাতক সদস্যদের জন্য নির্মিত হয়েছিল অস্থায়ী ওয়েটিং শেড। শেডে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিরা তাদের সঠিক পরিচিতি যাচাই করেন। পরে গতকাল বেলা ১১ টায় প্রথমে ১৬৫ জন বিজিপি সদস্যকে হস্তান্তর করা হয়। বিকেল ৩টায় দ্বিতীয় দফায় বাকী সদস্যদের মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশের নিকট হস্তান্তর করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ। এ কার্যক্রমে মিয়ানমার পক্ষে অংশ নেন সেদেশের বিজিপির পুলিশ কর্ণেল মায়ো থুরা নাউং সহ ৫ সদস্যের প্রতিনিধি দল।

বাংলাদেশ নৌবাহিনীর নৌযানে কড়া নিরাপত্তায় প্রত্যাবাসিত মিয়ানমার সেনাদের বাংলাদেশ মিয়ানমারের জলসীমায় নিয়ে যায়। সেখান থেকে মিয়ানমারের নৌবাহিনীর নৌযানে করে তাদেরকে রাখাইন রাজ্যের রাজধানী সিট্রুয়েতে নিয়ে যাওয়ার কথা।

এ ব্যাপারে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী গণমাধ্যমকে বলেন, সকল স্টেকহোল্ডাররা সফলভাবে মিয়ানমার বিজিপি কর্মীদের প্রত্যাবাসনে কাজ করেছেন। তিনি বলেন, রাখাইন রাজ্য থেকে আর কোনো সেনাকে সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে দেওয়া হবে না।

একই সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশে নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত অং কিয়াও মো আহত সৈন্যদের আশ্রয় প্রদান এবং চিকিৎসা প্রদানের জন্য বাংলাদেশী কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান। তিনি দুই সীমান্ত বাহিনীর মধ্যে বিশেষ সম্পর্কের প্রশংসা করেন।

এদিকে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মিয়ানমার বিষয়ক পরিচালক মো. রকিবুল ইসলাম, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের উপসচিব মো. রাশেদ হোসেন চৌধুরী, বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী ও বিজিবির অতিরিক্ত মহাপরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম। পক্ষান্তরে মিয়ানমারের পক্ষে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত অং কিয়াও মোয়ে ও অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপটিয়ায় স্বাস্থ্য কর্মকর্তাসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে পৌর মেয়রের মামলা
পরবর্তী নিবন্ধশিশু কর্নারে শিশু পার্কের প্রাধান্য হিন্দিগানে অতিষ্ঠ সবাই