অনেক প্রত্যাশার এশিয়া কাপে হতাশা দিয়েই শুরু করেছে বাংলাদেশ। পাল্লেকেলেতে ‘বি’ গ্রুপের ম্যাচে সাকিব আল হাসানের দলকে ৫ উইকেট আর ১১ ওভার হাতে রেখে হারিয়েছে স্বাগতিক শ্রীলংকা। সাকিবরা লংকানদের লক্ষ্য দিয়েছিল মাত্র ১৬৫ রানের। তারা ৫ উইকেট হারিয়ে তা তুলে ফেলে। ইনিংসের তৃতীয় ওভারের প্রথম বলে দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে দিমুথ করুনারত্নেকে (১) বোল্ড করেছিলেন তাসকিন। পরের ওভারে শরিফুল পাথুম নিশাঙ্কাকে (১৪) বানান উইকেট রক্ষক মুশফিকুর রহিমের ক্যাচ। ১৫ রানে ২ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়েছিল স্বাগতিকরা। কুশল মেন্ডিস টেস্ট মেজাজে ব্যাটিং করছিলেন। তার প্রতিরোধ ভাঙেন সাকিব আল হাসান। টাইগার অধিনায়কের দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরেন মেন্ডিস (২১ বলে ৫)। ৪৩ রানে তৃতীয় উইকেট হারায় লংকানরা।
তখন পর্যন্ত আশা বেঁচে ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু এরপর সাদিরা সামারাবিক্রমা আর চারিথ আসালাঙ্কা চতুর্থ উইকেটে ১১৯ বল খেলে ৭৮ রানের জুটি গড়লে ম্যাচ থেকে কার্যত ছিটকে পড়ে বাংলাদেশ। শেষদিকে এসে মরণকামড় দেওয়ার চেষ্টা ছিল টাইগারদের। ফিফটির পর শেখ মেহেদিকে এগিয়ে খেলতে গিয়ে স্টাম্পিং হন সামারাবিক্রমা। তিনি ৭৭ বলে ৬ বাউন্ডারিতে ৫৪ রান করেন। পরের ওভারে ধনঞ্জয়া ডি সিলভাকে (২) বোল্ড করে দেন সাকিব। কিন্তু আসালাঙ্কা ফিফটি করে দলকে জিতিয়েই মাঠ ছাড়েন। ৯২ বলে ৫ বাউন্ডারিতে ৬২ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। তার সঙ্গে ১৪ রান নিয়ে বিজয়ীর বেশে মাঠ ছাড়েন অধিনায়ক দাসুন শানাকা। সাকিব ২৯ রানে নেন ২টি উইকেট। একটি করে উইকেট শেখ মেহেদি, তাসকিন আহমেদ আর শরিফুল ইসলামের।
এর আগে বাংলাদেশ ইনিংসে একাই লড়লেন নাজমুল হোসেন শান্ত। কিন্তু সতীর্থরা কেউই তাকে ন্যূনতম সঙ্গ দিতে পারলেন না। শেষ পর্যন্ত শান্তও সাজঘরে ফেরেন সেঞ্চুরি করতে না পারার আক্ষেপ নিয়ে। ৪২.৪ ওভারেই বাংলাদেশ অলআউট হয় ১৬৪ রানে। এবারের এশিয়া কাপে এটিই বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচ। পাল্লেকেলেতে স্বাগতিকদের বিপক্ষে টসভাগ্য সহায় ছিল টাইগারদের। অধিনায়ক সাকিব আল হাসান প্রথমে নেন ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত। কিন্তু ব্যাটিংয়ের শুরুটা একদমই ভালো হয়নি। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই ধাক্কা খায় টাইগাররা। ওপেনিং নিয়ে সমস্যায় থাকা বাংলাদেশের পক্ষে নিজের অভিষেক ম্যাচ খেলতে নেমে রাঙাতে পারলেন না তরুণ তানজিদ হাসান তামিম। দ্বিতীয় ওভারে লঙ্কান বিস্ময় স্পিনার মাহিশ থিকসানার বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন তানজিদ (২ বলে ০)। এরপর নাইম শেখকে তুলে নেন ধনঞ্জয়া ডি সিলভা। ধনঞ্জয়াকে এগিয়ে মারতে গিয়েছিলেন নাইম, কিন্তু স্লোয়ার ডেলিভারিতে বল আকাশে তুলে দেন।
পয়েন্টে সহজ ক্যাচ নেন নিশাঙ্কা। ২৩ বলে ৩ বাউন্ডারিতে ১৬ রানেই থামে নাইমের ইনিংস। ২৫ রানে ২ উইকেট হারায় টাইগাররা। সাকিব শুরু করেছিলেন আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে। কিন্তু লঙ্কান জুনিয়র মালিঙ্গা মাথিসা পাথিরানার গতিময় এক ডেলিভারি বুঝতে না পেরে ব্যাট চালিয়ে দেন সাকিব। উইকেট রক্ষক ঝাঁপিয়ে পড়ে নেন ক্যাচ। ১১ বলে ৫ রান আসে সাকিবের ব্যাট থেকে। ৩৬ রানে নেই বাংলাদেশের ৩ উইকেট। একের পর এক উইকেট হারিয়ে কোণঠাসা হয়ে পড়েছিল বাংলাদেশ। সেখান থেকে নাজমুল হোসেন শান্ত আর তাওহিদ হৃদয় দলকে এগিয়ে নেন অনেকটা সময়। শান্ত তুলে নেন তার ক্যারিয়ারের চতুর্থ ফিফটি। কিন্তু এরপরই আসে আঘাত। শান্ত–হৃদয়ের জুটিটি ৫৯ রানেই থামিয়ে দেন দাসুন শানাকা। তাওহিদ হৃদয়ের এলবিডব্লিউয়ের আবেদনে সাড়া দেননি আম্পায়ার। কিন্তু রিভিউ নিয়ে ঠিকই জিতে যায় শ্রীলংকা। হৃদয় ৪১ বলে করেন ২০ রান, তার ইনিংসে ছিল না কোনো বাউন্ডারির মার। মুশফিকুর রহিমের শুরুটা ভালোই ছিল। কিন্তু মুশফিক ভুলটা করে বসলেন ব্যক্তিগত ১৩ রানে (২২ বলে)। উচ্চাভিলাষী এক শট খেলে উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসলেন। লংকান বিস্ময় পেসার পাথিরানার বাউন্সারে আপার কাট খেলতে গিয়েছিলেন মুশফিক। বল সরাসরি চলে যায় থার্ডম্যানে করুনারত্নের হাতে। ১২৭ রানে ৫ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
এরপর মেহেদি হাসান মিরাজ (৫) রানআউট হন শান্তর সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে। শান্তকে কল দিলে এক রান নিতে তিনি চলে গিয়েছিলেন স্ট্রাইকিং প্রান্তে। কিন্তু মিরাজ কিছুটা এগিয়ে এসে আবার উল্টো পথ ধরেন। রিপ্লেতে দেখা যায়, শান্তই তার আগে পৌঁছে যান স্ট্রাইকিং এন্ডে। ফলে রান আউট হন মিরাজ। সুবিধা করতে পারেননি শেখ মেহেদিও। ৬ রান করে ওয়াল্লালেগার বলে এলবিডব্লিউ হন এই লোয়ার অর্ডার ব্যাটার। একটা প্রান্ত ধরে শান্ত খেলছিলেন। কিন্তু সেঞ্চুরির কাছে এসে হতাশ হয়ে ফিরতে হয়েছে তাকেও। ব্যক্তিগত ৮৯ রানে মাহিশ থিকসানার ঘূর্ণি বল মিস করে বোল্ড হন শান্ত। তার ১২২ বলের ইনিংসটিতে ছিল ৭টি বাউন্ডারির মার। অস্টম ব্যাটার হিসেবে শান্ত ফেরার পর আর সময় লাগেনি লংকানদের। ২ রান যোগ করেই অলআউট হয়েছে বাংলাদেশ। লংকান বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে সফল মাথিসা পাথিরানা। ৩২ রানে তিনি নিয়েছেন ৪ উইকেট। ২ উইকেট শিকার মাহিশ থিকসানার। ম্যান অব দি ম্যাচ হয়েছেন শ্রীলংকার মাথিসা পাথিরানা।