দক্ষিণ এশীয় নারী ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই সাফ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল আজ। নেপালের রাজধানী কাঠমন্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে আজকের ফাইনালে মুখোমুখি হবে টুর্নামেন্টের গত আসরের চ্যাম্পিয়ন এবং গত আসরের রানার আপ স্বাগতিক নেপাল। ২০১০ সাল থেকে শুরু হওয়া এই টুর্নামেন্টের গত ছয় আসরে পাঁচ বারই চ্যাম্পিয়ণ ভারত। শুধু গত আসরের চ্যাম্পিয়ণ বাংলাদেশ। তাই এবারে আবার শিরোপা জিততে পারলে ভারতের পর টানা দ্বিতীয় শিরোপা জয়ের স্বাদও পাবে বাংলাদেশের নারীরা। গত আসরের মত এবারের আসরেও বাংলার নারীদের প্রতিপক্ষ স্বাগতিক নেপাল। আর নেপালও চাইবে গত আসরে হারের প্রতিশোধ নিতে। তাছাড়া এই টুর্নামেন্টের সবচাইতে তিনবারের আয়োজক এই নেপাল। এবারের টুর্নামেন্টের সেমিফাইনাল আর ফাইনালের চিত্র নাট্য যেন একই। গত আসরের প্রথম সেমিফাইনালে বাংলাদেশ দল ৮–০ গোলে ভুটানকে উড়িয়ে দিয়ে ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জণ করেছিল। আর এবারেও প্রথম সেমিফাইনালে ভুটানকে ৭–১ গোলে উড়িয়ে দিয়ে ফাইনালে জায়গা করে নেয়।
বাংলাদেশ এ নিয়ে তৃতীয়বারের মত ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জণ করেছে। অপরদিকে গত আসরের মত এবারের আসরেও আরেক সেমিফাইনালে টুর্নামেন্টের সবচাইতে সফলতম দল ভারতকে পরাজিত করে ফাইনালে জায়গা করে নেয় নেপাল। রেকর্ড ষষ্টবারের মত ফাইনালে খেলছে নেপাল। কিন্তু একবারও শিরোপা জিততে পারেনি তারা। তবে ভারতের বিপক্ষে এবারের সেমিফাইনালে বেশ বেগ পেতে হয়েছে নেপালকে জিততে। নির্ধারিত সময়ের খেলা ১–১ গোলে ড্র হলে টাইব্রেকারে ৪–২ গোলে ভারতকে বিদায় করে নেপাল পৌছে যায় ফাইনালে। একই মাঠে গত আসরের ফাইনালে স্বাগতিক নেপালকে ৩–১ গোলে হারিয়ে প্রথমবারের মত শিরোপা জয়েল উৎসবে মেতেছিল সাবিনা–মনিকারা। এবারে আরো একবার এসেছে সে সুযোগ। যদিও এবারের আসরটি বাংলার নারীরা শুরু করেছিল একেবারেই বিবর্নভাবে। প্রথম ম্যাচে দুর্বল পাকিস্তানের কাছ থেকে কোনমতে এক পয়েন্ট নিয়ে টুর্নামেন্ট শুরু করেছিল বাংলাদেশ। তবে এরপর আর পেছনে ফিরে তাকায়নি। পরের ম্যাচে শক্তিশালী ভারতকে ৩–১ গোলে হারিয়ে গ্রুপ সেরা হয়ে জায়গা করে নেয় সেমিফাইনালে। আর সেমিফাইনালেতো আরো দুর্দান্ত তহুরা–সাবিনা–মনিকারা। এবারের আসরে বাংলাদেশের সবচাইতে বড় সেনসেশনের নাম তহুরা খাতুন। ফাইনালেও তার উপর ভরসা রাখছে বাংলাদেশ। সেমিফাইনালের পর তিনদিন বিশ্রামের সুযোগ পেয়েছে বাংলাদেশ দল। আর এই ফাঁকে নিজেদের প্রস্তুত করে নিয়েছে বাংলার নারীরা। দলের কোচ পিটার জেমস বাটলার চেষ্টা করেছেণ মেয়েদের আত্নবিশ্বাস বাড়ানোর। তাইতো বিশ্রামের প্রথম দিনটা একেবারে ফুরফুরে মেজাজে কাটিয়েছেন তিনি খেলোয়াড়দের নিয়ে। গবে গতকাল অনুশীলন করেছে ম্যাচ ভেন্যুতে। ফাইনালের চাপ সামলানোর মন্ত্র দিচ্ছেন কোচ তার খেলোয়াড়দের। যদিও দলটির বেশিরভাগ খেলোয়াড়ই গত আসরের ফাইনালে খেলেছে। তাই তাদের প্রতিপক্ষ, ভেন্যু, আবহাওয়া সবকিছু সম্পর্কে বেশ ভালই জানা। এখণ কেবল মাঠে নিজেদের সেরাটা দিয়ে শিরোপা অক্ষুন্ন রাখাটাই আসল লক্ষ্য। বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়, কোচ সবাই শিরোপা ধরে রাখার ব্যাপারে দারুণ আত্নবিশ্বাসী। গতকাল দলের অন্যতম ভরসা মনিকা চাকমা বলেন আমাদের লক্ষ্য শেষটা ভালো করা। সে লক্ষ্য নিয়েই মাঠে নামব। পাকিস্তানের বিপক্ষে ড্রয়ের পর আমরা মাঝমাঠে উন্নতি করেছি। ভারতকে হারিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। ভুটানকে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছি। আমার মনে হয়, ফাইনালেও কোচের নির্দেশনা অনুযায়ী মাঝমাঠের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে পারব আমরা। আমাদের মনোযোগ হারালে চলবে না। যদিও দু দলের মুখোমুখি পরিসংখ্যানে ঢের এগিয়ে নেপাল। দু দলের ১১ মোকাবেলায় নেপালের জয় যেখানে ৫টি সেখানে বাংলাদেশের জয় মাত্র একটি। সেটিও গত সাফ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে। ৫টি ম্যাচ ড্র করেছে দু’দল। তবে এবারে এগিয়ে যাওয়ার পালা বাংলাদেশের। আর সেটা অবশ্যই সাফের ফাইনালে। দলের অধিনায়ক, কোচ থেকে শুরু করে সকল খেলোয়াড় চাইছে আরো একবার ২০২২ সালের মত বাংলাদেশের ফুটবল দর্শকদের আনন্দে ভাসাতে।