বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বন্ধন চিরন্তন মন্তব্য করে ঢাকায় ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা বলেছেন, পারস্পরিক সুবিধা ও আন্তঃনির্ভরতা এ সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নেবে। তিনি বলেছেন, আমরা সর্বদা বাংলাদেশের সঙ্গে একটি স্থিতিশীল, ইতিবাচক, গঠনমূলক, দূরদর্শী ও পারস্পরিকভাবে উপকারী সম্পর্ক চাই। এই সম্পর্ক হবে সমতা, পারস্পরিক সংবেদনশীলতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও বোঝাপড়ার উপর ভিত্তি করে।
গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় গুলশানে ওল্ড ইন্ডিয়া হাউসে ভারত–বাংলাদেশ মৈত্রী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। বাংলাদেশ ও ভারতের ইতিহাস, ভূগোল, ভাষা, সংস্কৃতি, পারস্পরিক সহানুভূতি ও ত্যাগের মাধ্যমে সংযুক্ত মন্তব্য করে তিনি বলেন, এটি মনে করিয়ে দেয় যে, আমাদের মধ্যে এই সংযোগের গভীরতা সীমান্তের উভয় পাশে থাকা আমাদের জনগণের দৈনন্দিন জীবনের একটি অংশ। সেই কারণে মৈত্রী দিবস এই দৃঢ়তা দেয় যে, বাংলাদেশের সঙ্গে আমরা যে বন্ধন ভাগ করে নিই তা ক্ষণস্থায়ী নয়, প্রকৃতপক্ষে চিরন্তন। খবর বিডিনিউজের।
তিনি বলেন, ভারত ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিল এবং একটি গণতান্ত্রিক, স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ, প্রগতিশীল এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক জাতির স্বপ্ন বাস্তবায়নে তাদের সমর্থন অব্যাহত রাখবে। আমি আত্মবিশ্বাসী যে, আমরা আমাদের জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য কাজ করব এবং আমাদের পারস্পরিক ত্যাগে অনুপ্রাণিত এবং ভবিষ্যতের জন্য নতুন আকাঙ্ক্ষায় পরিচালিত হয়ে জনগণের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক গড়ে তুলব।
প্রণয় ভার্মা বলেন, দুই দেশের সমাজ এবং অর্থনীতি ঘনিষ্ঠভাবে সংযুক্ত। এ সংযোগ এতটাই ঘনিষ্ঠ যে, আমরা একে অপরের উপর নির্ভরশীল। আমরা উভয়ই একে অপরের উপর নির্ভর করি। আমরা একা বেড়ে উঠতে এবং উন্নতি করতে পারি না। আমরা এই আন্তঃনির্ভরতাগুলোকে আরও শক্তিশালী করতে চাই। আমরা আরও বিশ্বাস করি যে, আমাদের উভয় দেশের জনগণই এই সম্পর্কের প্রধান অংশীদার। তাই আমরা এমন একটি অংশীদারত্ব তৈরি করছি, যা অবশ্যই প্রথমে আমাদের দুই দেশের জনগণের জন্য উপকারী হবে, তা সীমান্ত পারাপার, পরিবহন বা বিদ্যুৎ বা জ্বালানি সংযোগ বা বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সংযোগ যাই হোক না কেন। এগুলো আমাদের জনগণের পারস্পরিক সমৃদ্ধি ও কল্যাণের জন্য তৈরি।
মুক্তিযুদ্ধ শেষ হওয়ার ১০ দিন আগে ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর ভারত বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছিল। দিনটি ‘ভারত–বাংলাদেশ মৈত্রী দিবস’ হিসেবে উদযাপন করা হচ্ছে ২০২১ সাল থেকে। গতকাল এ দিবস উপলক্ষে ভারতীয় হাইকমিশনের ইন্দিরা গান্ধী কালচারাল সেন্টার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
ভারত–বাংলাদেশ মৈত্রী দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে প্রণয় ভার্মা বলেন, এই তারিখটি আমাদের দুই দেশের ইতিহাসে এমন একটি মাইলফলক, যা কখনো মুছে ফেলা যাবে না। এই তারিখটি সহানুভূতি ও বিশ্বাসের ভিত্তিতে একটি সম্পর্কের সূচনা করে, যা পরিবর্তন এবং মাঝে মাঝে চ্যালেঞ্জ ও উত্থান–পতন সত্ত্বেও টিকে আছে। এই দিনটি সেই গর্বকে তুলে ধরে, যার সঙ্গে ভারতের জনগণ স্বাধীনতার জন্য বাংলাদেশের সাহসী ভাইবোনদের পাশে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়িয়েছিল। তাই আজকের দিনটি স্মরণ ও কৃতজ্ঞতার দিন।
তিনি বলেন, আমরা আজ দুটি দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি। আমাদের ক্রমাগত অগ্রগতি এবং একটি উন্নত ভবিষ্যতের জন্য ক্রমবর্ধমান আকাঙ্ক্ষা আমাদের সহযোগিতার জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করছে। আজ আমাদের সম্পর্ক বহুমুখী এবং একে অপরের জাতীয় উন্নয়নের পরিপূরক। আমাদের সহযোগিতা এই পারস্পরিক বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে যে, আমাদের অগ্রগতি এবং সমৃদ্ধি একে অপরের সঙ্গে জড়িত। প্রতিবেশী হিসেবে আমরা আমাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করি।











