বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বিশ্ব মানব মুক্তির নিরন্তর পাঠশালা

ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী | শুক্রবার , ১৬ ডিসেম্বর, ২০২২ at ৬:০৪ পূর্বাহ্ণ


এটি সর্বজনবিদিত যে, ভাষা-সংস্কৃতি-কৃষ্টি-ঐতিহ্যকেন্দ্রিক বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তি রচিত হয়েছিল দীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রামের পটভূমিতে। মহাকালের মহানায়ক সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর নেতৃত্বে অধিকার আদায়ের সকল আন্দোলন সংগ্রামের মৌলিক নির্যাস ছিল অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার অঙ্গিকার। অপকৌশল বা আপোষকামীতার গুন্ডিত চক্রান্ত-ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর নির্ভীক, দৃঢ়চেতা, সৎ ও সত্যবাদি সুদূরপ্রসারী বিচক্ষণ জাত্যভিমান বাঙালিকে ঐক্যবদ্ধ হতে শক্তি ও সাহসে নিসৃষ্ট করেছিল।

বহিঃ ও আন্তঃ ঔপনিবেশিক শাসন-শোষণ-নীপিড়ন-নিষ্পেষণ কালক্রমে বাঙালি জাতিকে করেছে নির্বিশঙ্ক। নির্বৃত নেতৃত্বে প্রবুদ্ধ জাতি উদ্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনে ইন্দ্রজালিক বিজিগীষায় হয়েছিল বিস্ফোরিত। অতীত অন্ধকারকে নিধন করে বিস্ময়ান্বিত আলোকে অত্যুজ্জ্বল হওয়ার ব্রতকে ধারণ করেছে নিবিড় আস্থা ও বিশ্বাসের সাথে। ত্যাগের ভয়কে করেছে জয় এবং মরণাঘাতকে অপরাজিত করে এগিয়ে নিয়ে গেছে স্বাধীনতার শিখা অর্নিবাণ। বঙ্গবন্ধু জ্ঞানেন্দ্রিয় বুদ্ধিমত্তার অপরিসীম বোধালয়ে ধারণ করতে পেরেছিলেন স্বাধীন মাতৃভূমি ছাড়া বাঙালির আর্থ-সামাজিক মুক্তি কোনভাবেই সম্ভব নয়।

১৯৪৭ সালে দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে তৎকালীন ভারতবর্ষ বিভক্ত হয়ে পূর্ব বাংলাকে নিয়ে পাকিস্তান নামের একটি অসম রাষ্ট্রের সৃষ্টিলগ্ন থেকেই পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠী বাঙালি জাতিকে নির্যাতনের স্টিম রোলার চালাতে থাকে। বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে জাতিকে মুক্তির আকাঙ্খায় উজ্জীবিত করে স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মহান মুক্তিযুদ্ধের পথে এগিয়ে নিয়ে যান। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বায়ান্নর রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন, চুয়ান্নর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে জয়লাভ, ছাপ্পান্ন সালে সংবিধান প্রণয়নের আন্দোলন, আটান্নর মার্শাল ল বিরোধী আন্দোলন, বাষট্টির শিক্ষা কমিশন বিরোধী আন্দোলন, ছিষট্টির বাঙালির মুক্তির সনদ ৬-দফা, উনসত্তরের রক্তঝরা গণঅভ্যুত্থান এবং ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন ইত্যাদি জাতিকে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের দিকে অধিকমাত্রায় ধাবিত করেছিল। ১৯৬৯, ৫ ডিসেম্বর হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় সর্বপ্রথম বঙ্গবন্ধু পূর্ব পাকিস্তানের পরিবর্তে এই অঞ্চলের নামকরণ করেন ‘বাংলাদেশ’।

৫ জানুয়ারি, ১৯৬৯ গঠিত কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ উত্থাপিত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামালা প্রত্যাহার ও বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিকে কেন্দ্র করে দ্রঢ়িষ্ঠ বিক্ষোভ গণআন্দোলনে প্রচীয়মান হয়। ফলস্বরূপ বঙ্গবন্ধুর মুক্তি এবং ২৩ ফেব্রুয়ারি রেসকোর্স ময়দানে প্রায় দশ লক্ষ ছাত্র-জনতা তাঁদের প্রাণপ্রিয় বাংলার অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবকে সংবর্ধিত এবং ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করেন। ৩ জানুয়ারি, ১৯৭১ রেসকোর্সের জনসভায় সকল নির্বাচিত সদস্যদের ছয় দফার ভিত্তিতে শাসনতন্ত্র রচনা এবং জনগণের প্রতি আনুগত্য থাকার বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে শপথ অনুষ্ঠান পরিচালিত হয়। বাংলাদেশের দীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রামের পথপরিক্রমায় ১৯৭১ সালের মার্চ মাস ছিল উত্তাল ঘটনাপঞ্জিতে পরিপূর্ণ।

১৯৭০ সালের ৭ ও ১৭ ডিসেম্বর যথাক্রমে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ ও পাঁচটি প্রদেশে প্রাদেশিক পরিষদের উভয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ একক ও নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। ফলশ্রুতিতে পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক-বেসামরিক এবং ভূট্টোর দলের কূট অপকৌশলের নগ্ন ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ পাকিস্তানের সামরিক প্রেসিডেন্ট জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহবান করে। কিন্তু ১ মার্চ পাকিস্তানের তৎকালীন সামরিক স্বৈরশাসকের জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষণা এবং গভীর রাতে সামরিক আইন পরিচালক প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পাকিস্তানের সংহতি বা সার্বভৌমত্বের পরিপন্থী খবর-মতামত-চিত্র প্রকাশের ব্যাপারে সংবাদপত্রসমূহের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে ১১০ নং সামরিক আইন জারি বাংলায় অবিস্মরণীয় এক দ্রোহী রূপ পরিগ্রহ করে।

অধিবেশন বন্ধের আকস্মিক ঘোষণায় বাংলার আপামর জনতা প্রচন্ড বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। বিক্ষুব্ধ বাঙালি এর প্রতিবাদে বঙ্গবন্ধুর আহবানে ১ মার্চ থেকে সারা দেশে চলমান ব্যাপক অসহযোগ আন্দোলনে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ও উত্তাল মিছিল-স্লোগানে রাজপথ প্রকম্পিত করে তুলে। বাঙালি জাতির পুঁঞ্জিভূত ক্ষোভ ধারণ করে সংবাদ সম্মেলনে জনগণের মুক্তির ডাক দিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘এটি পাকিস্তানি শাসকদের স্বৈরচারী মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ মাত্র। আমরা বাঙালিরা ঘৃণাভরে এই ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করলাম এবং ২ মার্চ ঢাকা ও ৩ মার্চ সারাদেশব্যাপী বাংলার সাধারণ মানুষ হরতাল পালন করবে।

পরবর্তী দিক নির্দেশনার জন্য আপনারা ৭ মার্চ পর্যন্ত অপেক্ষা করুন।’ ২রা মার্চ হরতাল, মিছিল ও কারফিউর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের ছাত্র সমাবেশে স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। একই দিন বঙ্গবন্ধু সন্ধ্যায় প্রেস কনফারেন্সে বারবার ‘বাংলাদেশ’ উচ্চারণ করেন। হরতাল চলাকালীন সামরিক জান্তার হিংস্র বাহিনীর গুলিতে তেজগাঁও পলিটেকনিক স্কুলের ছাত্র আজিজ মোর্শেদ ও মামুনসহ পঞ্চাশ জনের মতো গুলিবিদ্ধ হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। সামরিক আইন প্রশাসক ঐদিন এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সন্ধ্যা ৭ টা থেকে সকল ৭ টা পর্যন্ত কারফিউ জারি করে। সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু নিরস্ত্রদের উপর গুলি বর্ষণের তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন এবং পরদিন ৩-৬ মার্চ পর্যন্ত সারাদেশে অর্ধদিবস হরতালের ডাক দেন।

৩ মার্চ পল্টনে ছাত্রলীগ ও শ্রমিক লীগের সভায় প্রধান অতিথির ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আমি থাকি আর না থাকি, বাংলার স্বাধীকার আন্দোলন যেন থেমে না থাকে। বাঙালির রক্ত যেন বৃথা না যায়। আমি না থাকলে- আমার সহকর্মীরা নেতৃত্ব দিবেন। যে কোন মূল্যে আন্দোলন চালাইয়া যেতে হবে- অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’ ঐ দিন রাত্রে বঙ্গবন্ধু তাঁর ঘোষণায় বলেন, ‘২৩ বছর ধরে রক্ত দিয়ে আসছি। প্রয়োজনে আবার বুকের রক্ত দেব। মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়ে বীর শহীদদের রক্তের সঙ্গে বেঈমানি করব না।’ ৪ মার্চ ১৯৭১ গণ বিক্ষোভে এক দফার দাবী অর্থাৎ স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষায় সামরিক জান্তার সান্ধ্য আইন ভঙ্গ করে হাজার হাজার মানুষ রাজপথে নেমে আসে। ঐদিন খুলনায় বাঙালি অবাঙালিদের মধ্যে সংঘর্ষ হয় এবং লাগাতার হরতালে কার্যত ঢাকাসহ সারাদেশ অচল হয়ে পড়ে। বাঙালি জাতির ইতিহাসে প্রথমবারের জন্য স্বাধীনতার স্লোগান উচ্চারিত হলো, ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধর, বাংলাদেশ স্বাধীন করো।’ শুরু হলো অসহযোগ আন্দোলন এবং গঠিত হলো স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ।

৭ মার্চ ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে প্রায় ১০ লক্ষাধিক বাঙালির সম্মুখে ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ ঘোষণার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু প্রকৃত অর্থেই বাঙালি জাতি-সত্ত্বার উন্মেষ ঘটিয়ে দীর্ঘ অহিংস স্বাধীনতা সংগ্রামের চূড়ান্ত পর্যায়ে অর্জিত স্বাধীনতাকেই অর্থবহ আনুষ্ঠানিকতা প্রদান করেন। এটি কালপরিক্রমায় খ্যাতিমান রাজনীতিক, গবেষক, বুদ্ধিজীবীসহ সকল মহলে কালজয়ী, যুগান্তকারী ও বিশ্বশ্রেষ্ঠ ভাষণ হিসেবে সমাদৃত এবং সর্বোপরি বিশ্বসভায় ঐতিহাসিক নান্দনিক ঐতিহ্যিক দলিল হিসেবে গৃহীত। ১৯৭১ সালের ৯ মার্চ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় ‘স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের’ স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ঘোষণা অনুমোদন করা হয়। ১০ মার্চ বঙ্গবন্ধু কর্নেল ওসমানীকে মুক্তিবাহিনী সংগঠনের নির্দেশ দেন। ১৪ মার্চ ১৯৭১; ধর্ম-বর্ণ-দলমত নির্বিশেষে সমগ্র বাঙালি জাতির প্রাণের দাবির প্রেক্ষিতে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের শাসনভার গ্রহণ করেন এবং দেশবাসীর উদ্দেশ্যে বলেন, ‘এই শাসনভার স্বহস্তে গ্রহণ করার অর্থ বাংলাদেশের স্বাধীনতা। জনগণ যেন তা রক্ষার জন্য প্রস্তুত থাকে।’ বঙ্গবন্ধু মুক্ত-স্বাধীন নাগরিক হিসেবে আত্মসম্মান ও আত্মমর্যাদার সাথে অনাগত প্রজন্মের ভবিষ্যত নিশ্চিতকল্পে মরণপণ ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর হয়েযে কোন অপশক্তির মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকতে আবেদন জানান।

পাকিস্তানি সামরিক শাসকগোষ্ঠী রাষ্ট্র ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে ২৫ মার্চ কালো রাত্রে বিশ্ব ইতিহাসের বর্বরতম গণহত্যা শুরু করে লক্ষ লক্ষ বাঙালির প্রাণসংহারে মেতে ওঠে। সে রাতেই পাকিস্তানি জান্তার হাতে গ্রেফতারের পূর্বে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা-বার্তায় পুরোবিশ্বকে অবহিত করলেন, `This may be my last message. From today Bangladesh is independent. I call upon the people of Bangladesh wherever you might be and with whatever you have, to resist the army of occupation to the last. Your fight must go on until the last soldier of the Pakistan occupation army is expelled from the soil of Bangladesh and final victory is achieved.’ (Pranab Mukherjee: 2015) ১০ এপ্রিল ১৯৭১ বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে তাঁকে রাষ্ট্রপতি করে প্রাবাসী সরকার ঘোষিত হয় এবং এই সরকার কুষ্টিয়ার মেহেরপুর, বৈদ্যনাথতলায় ১৭ এপ্রিল শপথ গ্রহণ করেন। শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সহ-রাষ্ট্রপতি এবং শহীদ তাজউদ্দিন আহম্মদ প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তাঁদের নেতৃত্বে সশস্ত্র মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ১৬ ডিসেম্বর প্রায় একানব্বই হাজার পাকিস্তান সেনা বাহিনীর দানব সদস্যদের আত্মসমর্পণের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা লাভ করে। নিঃসন্দেহে দৃঢ়তার সাথে বলা যায়, বঙ্গবন্ধু যে গণতান্ত্রিক-অসাম্প্রদায়িক-শোষণমুক্ত-মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে পুরো জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে মহান মুক্তিযুদ্ধের জন্য বাঙালিকে প্রস্তুত করেছিলেন। এই দিনেই তা পরিপূর্ণতা পেয়েছিল।

মুক্তির মহানায়ক জাতির জনকের নেতৃত্বে বাঙালির স্বাধীকার ও স্বাধীনতার দীর্ঘ সংগ্রাম বঙ্গবন্ধুর ভাষায় -‘অবর্ণনীয় দুঃখ-দুর্দশা, অত্যাচার, নীপিড়ন-নির্যাতন, গণমানুষের রক্তক্ষরণ ও মুমূর্ষ নরনারীর আর্তনাদের করুণ ইতিহাস।’ অহর্নিশ ত্যাগঋদ্ধ বঙ্গবন্ধুর জীবনগাঁথা। ১৯৭২ সালের ১০ অক্টোবর বিশ্বশান্তি পরিষদ বঙ্গবন্ধুকে বিশ্বনেতার স্বীকৃতিস্বরূপ ‘জুলিও কুরি শান্তি পদক’ অর্পণ করেন। চিলির রাজধানী সান্তিয়াগোতে প্রাপ্ত এই বিরল সম্মান বঙ্গবন্ধুর আগে অর্জন করেছিলেন কিউবার ফিদেল ক্যাস্ট্রো, চিলির সার্ভে আলেন্দে, ফিলিস্তিনের ইয়াসির আরাফাত, ভিয়েতনামের হো চি মিন, দক্ষিণ আফ্রিকার নেলসেন ম্যান্ডেলা, ভারতের মুলকরাজ আনন্দ ও শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী।

১৯৭৩ সালের ২৩ মে ঢাকায় আয়োজিত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে উদ্বোধনী ভাষণে বিশ্বশান্তি পরিষদের সম্মানিত মহাসচিব শ্রী রমেশচন্দ্র বঙ্গবন্ধুকে বিশ্বশান্তি, স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নির্ভিক কান্ডারী এবং বিশ্বের সকল নির্যাতিত, নিপিড়ীত ও শোষণবঞ্চনার শিকারে বিপন্ন জনগণের অধিকার আদায়ে তৎকালীন সময়ের জীবন্ত কিংবদন্তী বঙ্গবন্ধুকে ‘বিশ্ববন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করেন। স্বল্পপরিসরে এতটুকুই বলা যায়; বঙ্গবন্ধুর জীবনচরিত-সামাজিক ও রাজনৈতিক দর্শন এবং মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অবিনাশী উদ্যোগ বিশ্বইতিহাসে বিস্ময়কর অধ্যায়। বিশ্বের সকল মুক্তিকামী মানুষের জন্য বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রতিটি ক্ষণ-শিক্ষা-অভিজ্ঞতা নিরন্তর পাঠশালার পাঠ্যক্রম হিসেবে সমুজ্জ্বল থাকবেই।

লেখক: শিক্ষাবিদ, সাবেক উপাচার্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসশস্ত্র নারী মুক্তিযোদ্ধা ও আমাদের বিজয়
পরবর্তী নিবন্ধস্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি আবারও দেশ-বিদেশে ষড়যন্ত্র করছে : তথ্যমন্ত্রী