বাংলাদেশের বিস্ময়কর উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতা ও কিছু কথা

নেছার আহমদ | শুক্রবার , ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ at ৭:৪৩ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরামের একটি লিখিত অভিযোগের কপি সম্প্রতি আমার হস্তগত হয়েছে। বলা দরকার, ‘চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরাম’ চট্টগ্রামের উন্নয়নের আন্দোলনে প্রথম সারির সংগঠন। চট্টগ্রামের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে সংগঠনটি নিয়মিত কাজ করছে। সে কারণে অভিযোগের বিষয়গুলো আমি মনোযোগ সহকারে পড়েছি। অভিযোগগুলো যদি সত্যি হয় তা দেশের জন্য দেশের উন্নতির জন্য এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করছে যা দেশের উন্নয়ন বিরোধী ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে গণ্য হবে।
চট্টগ্রামের গ্যাস সেক্টর নিয়ন্ত্রণকারী এবং গ্রাহক সেবায় নিয়োজিত কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী লিমিটেড। এ কোম্পানীটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে চট্টগ্রামের শিল্প উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী এবং চট্টগ্রাম চেম্বারের ধারাবাহিক আন্দোলনে। কোম্পানী গঠনের পর স্বাভাবিক নিয়মে কোম্পানীর কাজ কর্ম চলমান থাকলেও ছন্দপতনের ন্যায় মাঝে মধ্যে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের খামখেয়ালির কারণে চরিত্র বদল হয়েছে বার বার। চট্টগ্রামের জননন্দিত নেতা চট্টল গৌরব এবি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর হস্তক্ষেপে কর্ণফুলী গ্যাস কিছুটা গ্রাহক বান্ধব হয়ে ওঠে। ইতিপূর্বে যিনি কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তার সময়ে বড় ধরনের কোন অভিযোগ দৃষ্টিগোচর হয়নি। কিন্তু সম্প্রতি কয়েকমাসে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী লিমিটেডের চরিত্রই যেন বদলে গেছে। চট্টগ্রামের নাগরিক ফোরামের অভিযোগ অনুযায়ী যিনি কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন তিনি একজন অদক্ষ, অযোগ্য এবং মেরুদন্ডহীন কর্মকর্তা। মার্কেটিং কোম্পানীতে তিনি কখনো চাকরি করেননি। তিনি কোন গ্রাহকের সাথে সাক্ষাৎ দেন না। অভিযোগকারী মহাসচিব জানালেন একদিন ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সাথে সাক্ষাৎ করতে গিয়ে অনেক্ষণ অপেক্ষা করে বিফল হয়ে ফেরত এসেছেন। অথচ তিনি একা তার রুমেই ছিলেন। ব্যস্ততার অজুহাতে তিনি সাক্ষাৎ দেননি। এ ধরনের অভিযোগ বিভিন্ন গ্রাহকের পক্ষ হতেও জানানো হয়েছে।
এখানে জনবান্ধব প্রশাসন নেই বললেই চলে। যারা ব্যর্থতার দায় ও ভুল স্বীকার করে তা সংশোধনের চেষ্টা করে সেটিই হলো জনবান্ধব প্রশাসন। কৃর্তত্ববাদী প্রশাসন চিন্তা ও জ্ঞানের দিকে অপেক্ষাকৃত দুর্বল প্রশাসন। তাদের চিন্তা, জ্ঞান, দক্ষতা ও সততার ঘাটতি আড়াল করার জন্য কর্তৃত্ববাদী রূপ ধারণ করে থাকে। জনকল্যাণমূলক কাজ থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিজের ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য প্রশাসন কর্তৃত্ববাদী হয়ে ওঠে। এরা কখনও সুপরামর্শ গ্রহণ করে না। তারা নিজেদের মতামতকেই সর্বোচ্চ সঠিক সিদ্ধান্ত বলে মনে করে। তারা অন্যের ভালো কাজের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নয়। জনগণের সেবার মনোভাব তাদের থাকেনা। ব্যক্তির ইচ্ছেয় বা অনিচ্ছায় এ ধরনের লোকেরা প্রশাসন পরিচালিত করে। তারা নিজেদের সিদ্ধান্ত অধীনস্থদের উপর চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। এ ধরনের প্রসাশনিক কার্যক্রম এখন গ্যাস সেক্টরে চলছে। ফলে সরকার প্রধানের পরিকল্পনা এবং উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রুদ্ধ করে উন্নয়নের পথকে বাঁধাগ্রস্থ করছে। ফলে সরকার এবং জনগণের মাঝে দূরত্ব সৃষ্টি হচ্ছে এবং সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে। বিষয়টির দিকে নজর দেয়া খুবই জরুরি।
এবিষয়ে চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মাহবুব আলম বলেন যে, কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী লিঃ চট্টগ্রামের জনগণের এবং শিল্প মালিকদের বিশেষ করে চট্টগ্রাম চেম্বারের আন্দোলনের ফলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহার। এ কোম্পানীটি গ্রাহকবান্ধব হবে এবং গ্রাহকদেরকে সেবা নিশ্চিত করে কোন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করে গ্যাস সংযোগ দিবে এটি আমাদের প্রত্যাশা। সরকারের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামের শিল্প উদ্যোক্তাদের জন্য এলএনজি আমদানি করেছেন। মানীয় প্রধানমন্ত্রীর এ আন্তরিকতাকে সম্মান দিয়ে চট্টগ্রামে নিরবচ্ছিন্ন এবং সহজ শর্তে হয়রানি না করে সেবা প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি। আমাদের প্রাণপ্রিয় এ প্রতিষ্ঠানটি যাতে কোন অবস্থাতেই প্রশ্নবিদ্ধ না হয় সেদিকে নজর দেয়া প্রয়োজন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে ঘোষণা দিয়েছিলেন, চট্টগ্রামের উন্নয়নের দায়িত্ব তিনি নিজ কাঁধে নিয়েছেন। ‘চট্টগ্রামের উন্নয়ন মানে দেশের উন্নয়ন, চট্টগ্রাম বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে’। চট্টগ্রামের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখার জন্যই অনেক প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও এলএনজি আমদানি করা হয়েছে। অথচ সে চট্টগ্রামেই শিল্প বিনিয়োগের ক্ষেত্রে হরেক রকমের অজুহাতের জন্ম দিয়ে প্রতিবন্ধকতা করা হচ্ছে।
প্রকৃত অবস্থা বিবেচনায় দেখা গেছে বর্তমান সময়ে চট্টগ্রামের গ্যাস সেক্টরে এক প্রকার স্থবিরতা বিরাজ করছে। ২/৩ মাসের অধিক সময় ধরে কোন শিল্প সংযোগের কাজ হয়নি। কিছু কিছু কর্মকর্তা এমনভাবে কাজ করছেন যেন গ্যাস সংযোগ না দিতে পারলেই তারা বাঁচে। অনুমোদন হওয়া শিল্প কারখানা সমূহে বিভিন্ন অজুহাতে প্রক্রিয়াগত জটিলতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। দুর্মুখেরা বলছেন, ‘চট্টগ্রামের শিল্প বিনিয়োগ এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন ধ্বংস করার জন্য একটি এক প্রকার ষড়যন্ত্র’। যা সরকার বিরোধী ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছেন অনেকে। কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানীর কাজই হচ্ছে গ্যাস বিক্রির ব্যবস্থা করা এবং গ্রাহকদের সাথে সু-সম্পর্ক বজায় রাখা। কিন্তু বিগত ৩/৪ মাস চট্টগ্রামে একটি শিল্প সংযোগেরও কাজ হয়নি এবং সংযোগ না দেওয়ার জন্য যত প্রকার ফন্দিফিকির তা করছেন। সামান্য সামান্য কিছু অসংগতি যা কোম্পানীর অভ্যন্তরে সমাধা করা যায় তা না করে বোর্ড মিটিং এর দোহাই দিয়ে বন্ধ করে রাখা হচ্ছে। ফলে কাঙ্ক্ষিত সেবা কোম্পানী হতে গ্রাহকরা পাচ্ছেন না। যা অতীতে কেজিডিসিএল প্রতিষ্ঠা অবধি কোন সময় হয়নি বলে অনেকে অভিযোগ করছেন। সরকার বিরোধী একটি মহলের ইশারায় এসব কর্মাদি ঘটছে বলে অভিযোগ রয়েছে। আধুনিক শিল্প স্থাপন এবং নিরবচ্ছিন্ন উৎপাদনের জন্য কোয়ালিটি বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা অন্যতম অনুষঙ্গ কিন্তু আধুনিক শিল্পে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য শিল্প মালিকদের নিজস্ব অর্থায়নে জেনারেটর আমদানী করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের নিজস্ব স্থাপনা তৈরী করছেন সেখানেও ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ সংযোগের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরী করা হচ্ছে। ফলে শিল্প ব্যবস্থাপনা হুমকির মধ্যে পড়েছে। অনেকে অনুমোদন পেয়ে জামানতের টাকা প্রদান করেও সংযোগ পাচ্ছেন না। অনেকে আবেদন করে জেনারেটর আমদানির ব্যবস্থা করেছে অথচ অনুমোদন পাচ্ছেন না।
চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরামের যে অভিযোগ সে দিকে পুনরায় দৃষ্টি দিয়ে বলতে চাই চট্টগ্রামের জন্য চট্টগ্রামের শিল্প উন্নয়নের জন্য চট্টগ্রামের জনগণের জন্য ভালোবাসার নিদর্শন হিসেবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এলএনজি আমদানির ন্যায় বিশাল এক চ্যালেঞ্জ হাতে নিয়েছেন। গুটি কয়েক গোষ্ঠীর ষড়যন্ত্র ও নেতিবাচক মনোভাবের কারণে সরকারের বিস্ময়কর উন্নয়নের ধারাবাহিকতা যেন ব্যাহত না হয় এবং বাধাগ্রস্ত না হয় সে দিকে কঠোর নজরদারি প্রয়োজন। চট্টগ্রামের স্বার্থে চট্টগ্রামবাসীর স্বার্থে চট্টগ্রামের ধারাবাহিক উন্নয়নকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়ে সকলকে সম্মিলিতভাবে কাজ করা উচিত। কোন অবস্থাতেই সরকারের উন্নয়ন প্রক্রিয়া যাতে বাধাগ্রস্ত না হয় সে দিকে নজর দিতে হবে। কর্মকর্তারা শাসক নয় তারা জনগণের সেবক। সকলকে সেবকের মনোভাব নিয়ে কাজ করতে হবে। কাউকে হয়রানি না করে সহযোগিতা করার মানসিকতা তৈরি করতে হবে। আমাদের সম্মিলিত উদ্যোগ ও সহযোগিতায় বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত করে শিল্প বিপ্লব ঘটানো সম্ভব।
লেখক : প্রাবন্ধিক; সম্পাদক, শিল্পশৈলী

পূর্ববর্তী নিবন্ধজুম্’আর খুতবা
পরবর্তী নিবন্ধমোশাররফের ছবি নেপালে