বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ মানসম্মত শিক্ষা

| বুধবার , ৫ অক্টোবর, ২০২২ at ৮:২৭ পূর্বাহ্ণ

আজ বিশ্ব শিক্ষক দিবস। ইউনেস্কো ১৯৯৪ সাল থেকে ৫ই অক্টোবর বিশ্ব শিক্ষক দিবস পালন করার ঘোষণা দেয়। এটি মূলত ১৯৬৬ সালের ৫ই অক্টোবর থেকেই শুরু হয়েছিল। শিক্ষকদের সম্মান ও স্বীকৃতি জানানোর জন্য বিশ্বব্যাপী দিবসটি পালন করা হয়। বাংলাদেশসহ প্রায় পৃথিবীর ১৯১টি দেশ এই দিবসটি পালন করে। এই দিবস পালনের ব্যাপক সার্থকতা রয়েছে। এটি জনসচেতনতা বৃদ্ধির সাথে সাথে শিক্ষকতা পেশার অবদানকেও স্মরণ করিয়ে দেয়। শিক্ষা যখন জাতির মেরুদন্ড হিসেবে বিবেচিত হয়, তবে শিক্ষকরা সে মেরুদন্ডের স্রষ্টা। গোটা মনুষ্য সমাজের মধ্যে নৈতিক বিচারে শিক্ষকদের চেয়ে সম্মানিত এবং শিক্ষকতার চেয়ে মর্যাদাপূর্ণ পেশা আর একটাও নেই। শিক্ষকরা এ সমাজের প্রাণ। পৃথিবীতে যে যত মহৎ হোক না কেন, সে কোনো না কোনো শিক্ষকের অধীনে জ্ঞান অর্জন করেছে। তাই পৃথিবীতে যতগুলো সম্মানজনক পেশা আছে তার মধ্যে শিক্ষকতা সর্বোচ্চ সম্মানিত পেশা। মানুষের মধ্যে যারা কৃতজ্ঞ শ্রেণির তারা সার্বিকভাবে না হলেও ব্যক্তিগতভাবে কোনো না কোনো শিক্ষকের কাছে ঋণী এবং বিভিন্ন সভা সেমিনারে তাদের সে অভিব্যক্তিও ফুটে ওঠে। সারা বিশ্বের মত বাংলাদেশেও শিক্ষকতা একটি মহান পেশা হিসেবে স্বীকৃত। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ মানসম্মত শিক্ষা। বিভিন্ন পরীক্ষার ফলাফলে পাশের আধিক্য বাড়লেও গুণগত মান নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। তাই শিক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে, মানসম্মত শিক্ষাদানের জন্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও দক্ষতা সম্পন্ন শিক্ষক দ্বারা সকল শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদান নিশ্চিত করতে হবে। এডুকেশন ইন্টারন্যাশনাল মানসম্মত শিক্ষার মূল উপাদান হিসেবে মান সম্মত শিক্ষক, মানসম্মত শিক্ষা উপকরণ ও মানসম্মত পরিবেশ নির্ধারণ করেছে। এ বিষয়ে অগ্রগতির লক্ষ্যে কাজ করতে হবে। এ কথা অনস্বীকার্য যে, শিক্ষকরা সমাজ, রাষ্ট্রের আলোকবর্তিকার মত কাজ করবে। তাই শিক্ষকদের পেশাগত স্বীকৃতি, সম্মানজনক বেতন, পেনশন, সামাজিক প্রাপ্তি ও চমৎকার কর্ম পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। অভীষ্ট সফলতার জন্য সকল স্তরে শিক্ষক সংকট দূর করতে হবে, শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত গ্রহণযোগ্য পর্যায় আনতে হবে। তবে আধুনিক ও যুগোপযোগী শিক্ষাক্রম, পর্যাপ্ত সংখ্যক যোগ্য শিক্ষক, প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষাদান সামগ্রী ও ভৌত অবকাঠামো যথার্থ শিক্ষণ-শিখন পদ্ধতি, কার্যকর ব্যবস্থাপনা ও তত্ত্বাবধান এবং গবেষণা ও উন্নয়নের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ ও উপযুক্ত মূল্যায়ন ব্যতীত এ লক্ষ্য অর্জন পুরোপুরি সম্ভব নয়।
অধ্যাপক কানাই দাশ তাঁর এক লেখায় বলেছেন, শিক্ষা ও শিক্ষকের বিদ্যমান অবস্থা পরিবর্তনে অব্যাহত লড়াই সংগ্রামের বিকল্প নেই। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা রাষ্ট্রীয় আর্থ-রাজনৈতিক দর্শন পাল্টানোর দাবি না তুলে তার বৈশ্বিক প্রেক্ষিত বিবেচনা না করে শুধু কিছু দাবি দাওয়া তুলে ধরলে বিশ্ব শিক্ষক দিবসের মূল প্রতিপাদ্য ও এর পেছনের তাৎপর্যকে বোঝা সম্ভব হবে না। তাই সর্বজনীন বিজ্ঞানমনস্ক শিক্ষা ও শিক্ষকের বাঁচার দাবি আজ রাষ্ট্রের সার্বিক কাঠামো ও দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের তথা অর্থনীতি ও রাজনীতি দুর্বৃত্তায়নের বিরুদ্ধে সংগ্রামের সাথে সম্পৃৃক্ত হয়ে পড়েছে। তা থেকে সরে আসার কোনো উপায় নেই। শুধু শিক্ষা ব্যবস্থাপনা ও অর্থায়নে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ নয়, প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের উদ্দীপ্ত করার কথা সীমিত পরিবেশ ও সুযোগের মধ্যেও শিক্ষক ও শিক্ষাব্রতীদের ভাবতে হবে। আনন্দ, স্বতঃস্ফূর্ততা, বিজ্ঞানমনস্ক যুক্তিবাদী জিজ্ঞাসা, মুক্তচিন্তায় শিক্ষার্থীদের গড়ে তুলতে হবে মানবিক ও সহিষ্ণু ভবিষ্যত নাগরিক হিসেবে। শিক্ষকদেরও নিজেদের নিয়ত পরিশীলিত করতে হবে বুদ্ধি ও যুক্তির আলোকে।
সর্বজনীন মানসম্মত শিক্ষার জন্য শিক্ষক, ছাত্র অভিভাবক, বিভিন্ন পেশার মানুষ ও সরকারের মধ্যে ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। তার মধ্য দিয়ে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। মানসম্মত শিক্ষা শিশুসহ সকলের মৌলিক ও মানবিক অধিকার। তাছাড়া মানসম্মত শিক্ষার মাধ্যমে মানসম্মত শিক্ষক প্রাপ্তি সম্ভব। তাই শিক্ষাক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বিনিয়োগ, পর্যাপ্ত অবকাঠামো সম্বলিত নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং মানসম্মত শিক্ষক অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে