চট্টগ্রাম শহর জাপান থেকে এফডিআই (সরাসরি বা প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ) আকর্ষণ করে চলেছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত দেশটির অ্যাম্বেসেডর ইতো নাওকি। যা বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিতে আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলেও মনে করেন তিনি। এসময় তিনি চলমান মাতারবাড়ী বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প এবং চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্পসহ অন্যান্য প্রকল্পের কাজ শেষ হলে চট্টগ্রাম ভবিষ্যতে ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল হাব’ এ পরিণত হবে বলেও মন্তব্য করেন।
গতকাল শনিবার বিকেলে নগরীর রেডিসন ব্লু হোটেলে জাপান-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। চট্টগ্রাম এওটিএস অ্যালামনাই সোসাইটি (সিএএস) এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সিএএএস এর প্রেডিডেন্ট প্রকৌশলী এ ইউ এম জোবাইরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএসআরএম গ্রুপের চেয়ারম্যান আলী হুসাইন আকবর আলী, জাইকার বাংলাদেশ অফিসের চিফ রিপ্রেজেন্টেটিভ ইছি গুছি তমোহিদে, জাপান এক্সটার্নাল ট্রেড অর্গানাইজেশনের (জেট্রো) কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ ইউজি এন্ডো (আনন্দ), এওটিএস এডভাইজর ড. এ কে এম মোয়াজ্জেম হোসাইন। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে বক্তব্য রাখেন এওটিএস প্রেডিডেন্ট শিনইয়া কুওয়ামা। উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম, দৈনিক পূর্বকোণের পরিচালনা সম্পাদক জসিম উদ্দিন চৌধুরী, বিএসআরএম-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর আমের আলী হুসাইন। চলতি বছরকে মাইলফলক উল্লেখ করে ইতো নাওকি আরও বলেন, দুই দেশের অংশীদারত্বকে নতুন উচ্চতায় উন্নীত করতে চাই।
ডিসেম্বর মাসে ঢাকায় ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) লাইন-৬ এর বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু হবে। বছর শেষ হওয়ার আগেই আড়াইহাজারে বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলও আন্তর্জাতিক বিনিয়োগের জন্য প্রস্তুত হবে। যা বে অফ বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ বেল্ট (বিআইজি-বি) গঠন করবে এবং ঢাকা-চট্টগ্রামে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণে সহায়তা করবে।
বাংলাদেশ ও জাপানের সর্ম্পকের গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, জাপান গত ৫০ বছর বাংলাদেশের পাশে ছিল, এখনো আছে, ভবিষ্যতেও বাংলাদেশের উন্নয়নের অংশীদার হিসেবে পাশে থাকবে। আগামী নভেম্বরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান সফরে দুই দেশের সম্পর্ক অন্য মাত্রায় পৌঁছাবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি। বলেন, আমি আশা করি বাংলাদেশ-জাপানের সম্পর্ক আরো উন্নত হবে। ভিশন-২০৪১ পূরণে ধারাবাহিক সহযোগিতা করে যাবে জাপান। চট্টগ্রামে জাপানের বিনিয়োগ তুলে ধরে ইতো নাওকি বলেন, চট্টগ্রাম ইপিজেড এবং কর্ণফুলী ইপিজেডে ১০টি কোম্পানি ব্যবসা পরিচালনা করছে।
মীরসরাইয়ে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরীও প্রস্তুত হচ্ছে। সিএএএস প্রেডিডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার এ ইউ এম জোবাইর বলেন, জাপান আমাদের অন্যতম প্রধান উন্নয়ন সহযোগী বন্ধু দেশ। দুই দেশের কূটনৈতিক বন্ধুত্বের ৫০ বছরকে স্মরণীয় করে রাখতে আমাদের এই আয়োজন। অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য শুধু অবকাঠামো নয়, মানবসম্পদ উন্নয়নও প্রয়োজন। এওটিএস দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নে কাজ করছে। জেট্রো এর কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ ইউজি এন্ডো (আনন্দ) বলেন, চট্টগ্রামকে আমার দ্বিতীয় হোম শহর মনে হয়।
তিন পর্বের আয়োজনের দ্বিতীয় পর্বে জাপানে উচ্চশিক্ষার বিভিন্ন দিক নিয়ে সিএএএস ও নিপ্পন একাডেমির যৌথ উদ্যোগে সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এতে মূল বক্তা হিসেবে জাপানে স্টাডি বিষয়ে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রামে জাপানের সাবেক কনসুলার জেনারেল মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম। এরপর জাপান-বাংলাদেশ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ধারায় শিরোনামে অপর সেমিনারে মূল বক্তা ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সেলিম উদ্দিন। জাপান এক্সটার্নাল ট্রেড অর্গানাইজেশনের (জেট্রো) বাংলাদেশ প্রতিনিধি ইউজি এন্ডো (আনন্দ) নিবন্ধ উপস্থাপন করেন।
উভয় সেমিনারে মডারেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং সিএএএস’র সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সালেহ জহুর। এছাড়া প্রথম পর্বে বয়স ভিত্তিক দুটি গ্রুপের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকারীকে গোল্ড মেডেল, ২য় ও তৃতীয় স্থান অধিকারীকে ক্রেস্ট এবং সকল অংশগ্রহণকারীকে সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়েছে। সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে স্থানীয় শিল্পী ছাড়াও জাপানের দুইজন শিল্পী জাপানি, বাংলা ও চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গান পরিবেশন করেন।