সন্তানের সঙ্গ পাবার আশায় বাংলাদেশে ছুটে এসে মামলার জালে জড়িয়ে পড়া মার্কিন নাগরিক গ্যারিসন রবার্ট লুট্রেল তার বাংলাদেশি স্ত্রী ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে যে মামলা করেছিলেন, সেটি নতুন করে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম ওয়াহিদুজ্জামান গত সোমবার লুট্রেলের নারাজি আবেদন মঞ্জুর করে উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশকে অভিযোগটি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। খবর বাসসের।
মামলার বিবরণে জানা যায়, গ্যারিসন রবার্ট লুট্রেলের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে পরিচয় হয় বাংলাদেশের মেয়ে ফারহানা করিমের। পরিচয় থেকে প্রেম, এক পর্যায়ে ২০১৮ সালের ৩ আগস্ট তারা বিয়ে করেন। ২০২০ সালের ১৬ অক্টোবর তাদের বড় সন্তানের জন্ম হয় বাংলাদেশে। এরপর তাদের আরও দুটি সন্তান হয়। কিন্তু ধীরে ধীরে দুজনের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়।
টানাপোড়েনের এক পর্যায়ে আলাদা থাকতে শুরু করেন তারা। ২০২৩ সালের জুনে ফারহানা সন্তানদের নিয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন। অগাস্টে তিনি তালাকের নোটিস পাঠান যুক্তরাষ্ট্রে। তবে সেই প্রক্রিয়া আইনগতভাবে শেষ হয়নি বলে লুট্রেলের দাবি। ওই বছর অক্টোবরে লুট্রেলও বাংলাদেশে চলে আসেন। সন্তানদের জিম্মা চেয়ে পারিবারিক আদালতে মামলা করেন। তার আর্জি শুনে দুই শিশু সন্তানসহ ফারহানা করিমকে আদালতে হাজির করতে নির্দেশ দেয় হাই কোর্ট। সে অনুযায়ী ২০২৩ সালের ২৮ নভেম্বর আদালতে হাজির হন ফারহানা।
বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের বেঞ্চ লুট্রেল ও ফারহানার বক্তব্য শোনে। পরে আদেশে বলা হয়, ঢাকার উত্তরা ক্লাবে প্রতি শনি ও মঙ্গলবার তিন বছরের বড় ছেলের সঙ্গে বেলা ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সময় কাটাতে পারবেন লুট্রেল। তার আইনজীবী শহিদুল ইসলাম বলছেন, আদালতের আদেশের পরও ফারহানা করিম সন্তানের সঙ্গে বাবার দেখা করার সুযোগ দিচ্ছেন না।
‘লুট্রেলের অভিযোগ, ফারহানা করিম এক কানাডিয়ান নাগরিকের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়ালে তাদের সংসারে টানাপোড়েন তৈরি হয়। এখন তাকে পিতার অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে তারা। স্বামী–স্ত্রী দুইজনই পারিবারিক আদালতে মামলা করেছিলেন। মামলা দুটি এখন একত্রে চলছে। তিনি (লুট্রেল) যেন সন্তানদের পাওয়ার চেষ্টা করতে না পারেন, কোর্টের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয়, সেজন্য তারা (ফারহানার পরিবার) অনেকগুলো মামলা দিয়েছে তার বিরুদ্ধে। তাকে হয়রানি করতে এসব মামলা দিয়েছে। সবগুলো মামলায় আমরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি। উভয়পক্ষ এ পর্যন্ত ১৩টা মামলা করেছে।’
এর মধ্যে একটি মামলা হয়েছে ফারহানা করিমের বাসায় যাওয়ার পর লুট্রেলকে মারধরের অভিযোগে, যে মামলা নিয়ে সোমবার আদেশ দিয়েছে আদালত।
আইনজীবী শহিদুল ইসলাম বলেন, হাই কোর্টের আদেশে তারা আমার মক্কেলকে সন্তানের সঙ্গে দেখা করতে দেয়নি। আমার মক্কেল গত বছর (২০২৪ সাল) ২৪ অক্টোবর সন্ধ্যায় উত্তরায় তার (ফারহানা) বাসার দিকে যেতে গেলে তারা মব সৃষ্টি করে তাকে মারধর করে। সেখানকার লোকজন তাকে (লুট্রেলকে) উদ্ধার করে।
সেই অভিযোগে গত বছরের ৩০ এপ্রিল আদালতে মামলা করেন লুট্রেল। মামলায় ফারহানা করিমের বোন ফারজানা করিম, তার স্বামী মাহমুদুর রহমান, দেবর আনিসুর রহমান, ননদ মাহমুদা আক্তার লিপি এবং ফারহানা করিমের কথিত প্রেমিক কানাডিয়ান নাগরিক রেইডাস কুইটিসকে আসামি করা হয়।