ইংল্যান্ডের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কোভিড-১৯ সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশি পরিবারকে দায়ী করার পর একজন প্রধান শিক্ষক ক্ষমা চাইতে বাধ্য হয়েছেন বলে জানিয়েছে ডেইলি মেইল। সান্ডারল্যান্ডের রিচার্ড অ্যাভিনিউ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কারেন টড চলতি সপ্তাহে শিক্ষার্থীদের পিতামাতাদের প্রতি লেখা এক চিঠিতে বাংলাদেশিদের নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন।
কোভিড-১৯ পরীক্ষার ফল আসার অপেক্ষায় থাকলেও প্রাপ্তবয়স্করা ট্যাক্সি চালানো বা রেস্তোরাঁগুলিতে কাজ করছেন তার ধারণা। সেই সঙ্গে আইন না মেনে অনেকে বাড়িতে বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন এবং মেহেন্দি রাতের আয়োজন করছেন বলে তিনি চিঠিতে অভিযোগ করেন। খবর বিডিনিউজের।
ডেইলি মেইল বলছে, চিঠিতে আলাদা করে বাংলাদেশিদের দিকে আঙ্গুল তুলে এবং গতানুগতিক ছকে আইন লঙ্ঘনকারী হিসেবে উল্লেখ করায় পিতামাতা ও সম্প্রদায়ের নেতারা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া প্রকাশের পর প্রধান শিক্ষক পরে সময়ে ক্ষমা চান। খবর বিডিনিউজের।
৩ নভেম্বর পাঠানো চিঠিতে টড দাবি করেন, কোনো কোনো প্রাপ্তবয়স্ক সম্পূর্ণ দায়িত্বজ্ঞানহীন সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন যার ফলে তার স্কুলের ছাত্র, কর্মী ও তাদের পরিবারে কোভিড-১৯ সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
এই স্কুলে দশ বছরেরও বেশি সময় ধরে কর্মরত এই শিক্ষক ওই চিঠিতে তার হিসেবে আইন ভাঙা এসব প্রাপ্ত বয়স্করা বাড়ির ভেতরে বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া ও মুখোশ না পরে গাড়ি চালানোসহ কি কি কাজ করছেন তার তালিকাও তুলে ধরেছেন। সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরকারী টড চিঠিতে বলেন, আমি কোভিড পুলিশ হওয়ার চেষ্টা করছি না। কিন্তু আপনার কাজের ফলে আমার স্কুল, সম্প্রদায় ও সম্ভাব্য মানুষের জীবন প্রভাবিত করলে আমাকেতো এগিয়ে আসতে হবে।
তার এই চিঠি বাবা-মা ও সম্প্রদায়ের নেতাদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে সান্ডারল্যান্ডে, যেখানে প্রায় সাত হাজার বাংলাদেশির বাস। মাতৃভাষা ইংরেজি নয় এমন ২৫৮ শিশুকে ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে পড়িয়েছে রিচার্ড অ্যাভিনিউ প্রাথমিক বিদ্যালয়। ওই বর্ষের মোট শিক্ষার্থী ৪২১ জন। সে হিসেবে প্রায় ৬২ শতাংশ অন্য ভাষার।
জুনে প্রকাশিত ইংল্যান্ডের এক জনস্বাস্থ্য প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে ডেইলি মেইল বলছে, ব্রিটেনে সাদাদের চেয়ে বাংলাদেশি জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে করোনাভাইরাসে মৃত্যুঝুঁকি প্রায় দ্বিগুণ। ওই বিদ্যালয়ের এক শিশু শিক্ষার্থীর পিতা-মাতা বলেন, এই চিঠি মেনে নেওয়া খুব কঠিন ছিল। শুধু একমাত্র সম্প্রদায়ই আইন লঙ্ঘন করছে এটা বলা খুবই ভুল। সমস্যা তুলে ধরার আরও অনেক ধরণ আছে, কিন্তু এটা মোটেই ঠিক না।
আবু শর্মা বলেন, দায়িত্বশীল কোনো কর্তৃপক্ষের কোনও ব্যক্তির কাছ এমন বক্তব্য বিরক্তিজনক, এটা নেওয়া খুব কঠিন। এরকম বিবৃতি ঘৃণ্য সাম্প্রদায়িক অপরাধ উসকে দিতে পারে। শর্মা বলেন, পুরো সম্প্রদায়কে দোষারোপ করার আগে আলাদা করে পিতা-মাতাদের কাছের ওই বিদ্যালয়ের উদ্বেগ জাগানো উচিত ছিল।
অভিভাবক সৈয়দা রহমান বলেন, মনে হচ্ছে সব সান্ডারল্যান্ডের সব বাংলাদেশি ট্যাঙি ড্রাইভার এবং তারা সবাই কোভিড-১৯ সংক্রমণ বৃদ্ধির জন্য দায়ী।
এদিকে সান্ডারল্যান্ডের বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চেয়ারম্যান সৈয়দ খালিদ মিয়া বলেন, এই চিঠির কারণে পুরো সম্প্রদায় হতবাক ও বিপর্যস্ত। কোনও প্রধান শিক্ষকের কাছ থেকে এরকম কিছু শুনতে হবে এটা অনাকাঙ্ক্ষিত। সান্ডারল্যান্ড এবং উত্তর-পূর্বের পুরো অঞ্চলের বাংলাদেশ সম্প্রদায় হতবাক হয়েছে।
পিতামাতাদের কাছে দ্বিতীয় চিঠিতে প্রধান শিক্ষক ক্ষমা প্রার্থনা করে বলেন, আমি গতকাল পিতামাতাদরে যে চিঠি দিয়েছি, তার জন্য আমি পুরো সম্প্রদায়, বিশেষত বাঙালি সম্প্রদায়ের কাছে ক্ষমা চাই। চিঠিটি পাঠানার জন্য আমি দুঃখিত এবং আমি এই অপরাধের জন্য দায় স্বীকার করছি।