শেষটা রাঙানো হলোনা বাংলাদেশের। বাংলাদেশ দল যখন মাঠে নামছিল তখন একটা সুযোগও এসেছিল সামনে। তা হচ্ছে পাকিস্তানের বিপক্ষে জিততে পারলেই সেমিফাইনাল। কিন্তু সে জেতাটা আর হলোনা। ব্যাটসম্যানদের কাণ্ড জ্ঞানহীন ব্যাটিং, ফিল্ডারদের অমার্জনীয় ভুল আর রেফারির একটি বিতর্কিত সিদ্ধান্ত বিদায় নিতে হলো বাংলাদেশকে। আরো একবার সুযোগটি হাতছাড়া হয়ে গেল টাইগারদের। হাতছাড়া হয়ে গেছে বললে বোধহয় ভুল বলা হবে। বলতে হবে বাংলাদেশ যেন ম্যাচটা ফেলে দিয়ে আসল। পাকিস্তানের বিপক্ষে ৫ উইকেটে হারের লজ্জাকে সঙ্গী করে দেশে ফিরছে টাইগাররা।
তিনটি পরিবর্তন নিয়ে গতকাল পাকিস্তানের বিপক্ষে নেমেছিল বাংলাদেশ। কিন্ত কোন কিছুই কাজে আসলনা। সমালোচনার তীরে বিদ্ধ হতে হতে ক্ষত বিক্ষত নাজমুল হোসেন শান্তর হাফ সেঞ্চুরিটাই যা একটু প্রাপ্তি। বাকিটা পুরোটাই হতাশা আর হতাশা। একজন শাহীনশাহ আফ্রিদি কিংবা তরুণ মোহাম্মদ হারিস কিংবা শান মাসুদরা যা পেরেছে তা করতে পারেনি সাকিব, লিটন, সৌম্য, সোহানরা। সোহানতো ব্যর্থতার ষোলকলা পূরণই করল। যে ক্যাচ তিনি ছেড়েছেন তা পাড়া গাঁয়ের ক্রিকেটাররা ধরতে পারে। দুই ব্যাটসম্যান পিচের মাঝখানে থাকলেও রান আউট করতে পারেনি। লিটনদের দুই পায়ের ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে গেছে বল। সে সাথে ম্যাচটাও। সব মিলিয়ে দারুণ হতাশার মধ্য দিয়ে বিশ্বকাপ মিশন শেষ করল বাংলাদেশ। একটি বাজে ম্যাচের প্রদর্শনীই যেন করল বাংলাদেশ। কারো কোন দায়িত্ব নেই। কোনমতে ম্যাচটা শেষ করতে পারলেই হলো। সেটাই করে এসেছে বাংলাদেশ। ফলে পাহাড়সম চাপে থাকা পাকিস্তান শেষ পর্যন্ত জায়গা করে নিল সেমিফাইনালে। অথচ ম্যাচে সব সমীকরণই মিলে গিয়েছিল বাংলাদেশের। দরকার ছিল কেবল একটি জয়। ব্যাটিংয়ের শুরুটাও তেমন মন্দ হয়নি। কিন্তু সাকিব আল হাসানের আউট নিয়ে হলো বিতর্ক। এরপর তাসের ঘরের মত ভেঙে পড়ল ব্যাটিং অর্ডার। ফল আরো একটি হার। আবারো সেমিফাইনালের আগে বিদায়।
টসে জিতে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশ শুরুটা মন্দ করেনি। প্রথম ওভার থেকে আসে ৬ রান। কিন্তু শান্ত এবং লিটন ২১ রানের বেশি যোগ করতে পারেনি। শাহিন শাহ আফ্রিদিকে কাট করতে গিয়ে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে শান মাসুদের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন ৮ বলে ১০ রান করা লিটন। এরপর শান্তর সঙ্গে ৫২ রানের জুটি গড়েন সৌম্য সরকার। তাদের জুটি ভাঙেন শাদাব খান। রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে সৌম্য ক্যাচ তুলে দেন সেই শান মাসুদের হাতে। ১৭ বলে ২০ রান করেন একাদশে ফেরা সৌম্য। তবে সবচাইতে বড় ধাক্কাটি খায় বাংলাদেশ পরের বলে। প্রথম বলেই সাকিবের বিরুদ্ধে এলবিডব্লিউয়ের আবেদন করেন শাদাব খান।
আম্পায়ারও সাড়া দেন। সঙ্গে সঙ্গে রিভিউ নেন সাকিব। রিপ্লেতে দেখা যায় ব্যাটে লেগেছে বল। আম্পায়াররা অবশ্য মনে করেছেন, ব্যাট মাটিতে লেগেছে। তবে ভিডিও দেখে বোঝা গেছে, ব্যাটে বল লাগার সময় মাটিতে ছিল না। মাঠে স্তব্ধ হয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকেন সাকিব। কিন্তু শেষ অবধি শূন্য রানেই ফিরতে হয় টাইগার অধিনায়ককে। বাংলাদেশের ব্যাটিং যেন সেখানেই শেষ। তিন ওভার পর ফিরেন দারুন খেলতে থাকা শান্ত। ৭টি চারের সাহায্যে ৪৮ বলে ৫৪ রান করে ইফতেখার আহমেদের বলে বোল্ড হন শান্ত। এটি টুর্নামেন্টে তার দ্বিতীয় হাফ সেঞ্চুরি। এরপর আফ্রিদি এক ওভারেই ফেরান মোসাদ্দেক একং সোহানকে। তবে আফিফ চেষ্টা করলেও পারেননি দলকে বড় সংগ্রহ এনে দিতে। তিনি অফরাজিত থাকেন ২০ বলে ২৪ রান করে। আর বাংলাদেশের সংগ্রহ গিয়ে দাড়ায় ১২৭ রানে। পাকিস্তানের পক্ষে ৪ ওভারে ২২ রান দিয়ে ৪ উইকেট নেন শাহীনশাহ আফ্রিদি। দুইটি উইকেট নিয়েছেন শাদাব খান।
১২৮ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ইনিংসের তৃতীয় বলেই ক্যাচ দিয়েছিলেন রিজওয়ান। কিন্তু সেটি ফেলে দেন উইকেটকরক্ষক নুরুল হাসান সোহান। পরের বলেই তাসকিনকে বিশাল ছক্কা মারেন রিজওয়ান। সেই রিজওয়ানকে অবশ্য ফিরিয়েছেন এবাদত হোসেন। কিন্তু ততক্ষনে ৩২ বলে ৩২ রান করে ফেলেছেন তিনি। মেরেছেন ২টি চার ও ১টি ছক্কা। অবশ্য দলকে প্রথম সাফল্য এনে দেন এবারের বিশ্বকাপে প্রথম খেলতে নামা নাসুম আহমেদ। তার শিকার ৩৩ বলে ২৫ রান করা বাবর আজম। বাবর-রিজওয়ান ফেরার পর বাংলাদেশের বোলাররা বেশ ভালই চেপে ধরেছিল পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানদের। বলতে গেলে রান নিতেই পারছিলেননা। এরই মধ্যে লিঠনের দুর্দান্ত থ্রোতে ১১ বলে ৪ রান করে মোহাম্মদ নেওয়াজ রান আউট হয়ে ফিরলে আরো চাপে পড়ে পাকিস্তান। যদিও হারিস এবং শান মাসুদ এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু সবকিছু শেষ হয়ে যায় তাসকিন আহমেদের করা ১৬তম ওভারে। নো বল ফ্রি হিট সহ সে ওভারে ১৬ রান দেন তাসকিন। আর তাতেই ম্যাচটা বের হয়ে যায় বাংলাদেশের হাত থেকে। ১১ বল বাকি থাকতে ৫ উইকেটে জয় নিয়ে নিজেদের সেমিফাইনালে নিয়ে যায় পাকিস্তান। মোহাম্মদ হারিস করেন ১৮ বলে ৩১ রান। এছাড়া ১৪ বলে ২৪ বলে রান করেন শান মাসুদ। ম্যাচ সেরার পুরষ্কার উঠে শাহীনশাহ আফ্রিদির হাতে।