প্রাকৃতিক ও পরিবেশবান্ধব বাঁশ–বেতের পণ্য একসময় গ্রামীণ জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল। তবে প্লাস্টিক ও মেলামাইনের আধিপত্যের কারণে এই ঐতিহ্যবাহী শিল্প হারিয়ে যাওয়ার পথে। কিন্তু মীরসরাই উপজেলার কয়েকশ নারী এই শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে নিজেদের স্বাবলম্বী করে তুলেছেন। সরকারি সহায়তা পেলে এই কুটির শিল্প আবার নতুন করে ঘুরে দাঁড়াতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হিঙ্গুলী ইউনিয়নের মধ্যম জামালপুর গ্রামের অর্ধশত নারী বাঁশ দিয়ে তৈরি করছেন চট, মোড়া, হরেক রকমের ঝুড়ি, টুকরি, খাঁচা, চালুন, মাছ–তরকারি ধোয়ার ঝাঁকা, মাছ ধরার চাঁই, আনতা, বেতের তৈরি পাটি। এমনকি শিশুবয়সে মায়ের কাছে বাঁশ–বেতের পণ্য তৈরির কাজ শিখে মহাজনহাট ফজলুল রহমান স্কুল অ্যান্ড কলেজের ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী লামিয়া সুমাইয়া লেখাপড়ার পাশাপাশি বাঁশের পণ্য তৈরিতে মাকে সহযোগিতা করছে।
শিক্ষার্থী লামিয়া সুমাইয়া বলেন, ছোটবেলায় মাকে বাঁশ ও বেতের বিভিন্ন পণ্য তৈরি করতে দেখে আমারও এ কাজ শেখার আগ্রহ জন্মে। কিন্তু প্রথমে মা চাননি আমি ওই কাজ করি। অবশ্য পরে তিনিই শিখিয়ে দেন। এখন বাঁশ ও বেতের হাতের কারু কাজের অপূর্ব এ শিল্পের সাথে আরও নিবিড় সম্পর্ক গড়ে উঠেছে আমার। শুধু লামিয়া নয় মীরসরাই উপজেলার মধ্যম জামালপুর গ্রামের সুরজাহান বেগম, কোহিনুর আক্তার, লায়লা বেগম, সাহারা বানু ও আসমা বেগমের মতো শতাধিক নারী বাঁশ ও বেত শিল্পের কাজ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন।
এ সময় কোহিনুর আক্তার বলেন, স্থানীয় বাজার থেকে বাঁশ ও বেত সংগ্রহ করে ঘরের কাজের পাশাপাশি বিভিন্ন পণ্য তৈরি করে বিক্রি করি। প্রতিটি বাঁশের তৈরি খাঁচা ৬০–৭০ টাকা, বড় টুকরি ২৫০–৩০০ টাকা, মুরগির খাঁচা ১০০, মোড়া ৩০০, পাটি ২০০–৪০০, চালুন ৩০ থেকে ১০০ টাকা দামে বিক্রি করি। সুরজাহান বেগম জানান, বাঁশ বেতের পণ্য বিক্রি করে প্রতিমাসে তার ৮–১০ হাজার টাকা আয় হয়। এতেই চলে সংসার।
হাইতকান্দি ইউনিয়নের দমদমা এলাকার কুটির শিল্পী ননাই বড়ুয়া বলেন, আর্থিক সচ্ছলতা না থাকায় বেশি কাঁচামাল ক্রয় করা সম্ভব হয় না। যদি স্বল্প সুদে সরকারিভাবে ঋণ পাওয়া যেত তাহলে এই কুটির শিল্পটিকে আরও সমপ্রসারণ করা যেত। স্থানীয় পাইকার মো. সাঈদ ও তপন পাল জানান, তারা উপজেলার মধ্যম জামালপুর, সোনাপাহাড়, ওয়াহেদপুর, দমদমা, মায়ানীসহ বিভিন্ন স্থানের নারীদের থেকে বাঁশ ও বেতের তৈরি পণ্য সামগ্রী সংগ্রহ করে বিভিন্ন স্থানে বিক্রয় করেন।
মীরসরাই উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. শাহ আলম বলেন, মীরসরাইয়ের শতাধিক নারী দীর্ঘদিন ধরে বাঁশ–বেতের পণ্য তৈরি করে পরিবারে আর্থিক সচ্ছলতা এনেছেন। অন্যান্য স্থানেও এই কাজ করে নারীরা যাতে স্বাবলম্বী হতে পারেন সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। এ বিষয়ে প্রশিক্ষণসহ সরকারিভাবে ঋণ সুবিধা দেয়ার ব্যবস্থা করবো।