পাহাড়ী অঞ্চলে ঘরের আশে পাশে বাঁশ বাগানে খেলাধুলা করে বেড়ে উঠা যুবক আবদুল মালেক (৩০)। ছোট বেলায় শখের বশে বাঁশ কেটে বানাতেন পাখির বাসা, বন্দুক ও নানা খেলনা। খেলতেন এসব নিয়ে। ১৫ বছর বয়স থেকে তিনি বাঁশের তৈরি জিনিস বানানো শুরু করেছেন। এখন বাঁশ দিয়ে তৈরি নিত্য আসবাব আর সৌখিন জিনিসপত্র বানিয়ে স্বচ্ছলতা ফিরেছে তাঁর পরিবারে। সৌখিন জিনিস ও খেলনা সামগ্রীর পাশাপাশি তিনি মগ, কাপ, জগ, টেবিল বাতি, চা ট্রেসহ ১৬৫ রকমের বাঁশের তৈরি সৌখিন জিনিস ও নিত্য ব্যবহৃত আসবাব বানাতে পারেন। ভবিষ্যতে বাণিজ্যিকভাবে বাঁশের শিল্পকর্ম তৈরি করে পরিধি বাড়াতে চান তিনি। আবদুল মালেকের বাড়ি চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পদুয়া ইউনিয়নের নাপিত পুকুরিয়া গ্রামে।
তাঁর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ঘরের পাশে উঠানে বাঁশের তৈরি আসবাব বানাচ্ছেন তিনি। কাজ করতে করতে কথা হয় তাঁর সাথে। তিনি বলেন, ১৩ বছর ধরে তিনি বাঁশের তৈরি শিল্পকর্ম বানিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় দিচ্ছেন। ঢাকার হস্তশিল্প ব্যবসায়ীরা বিদেশে বিক্রির জন্য তাঁর আসবাব ও সৌখিন জিনিসপত্র কিনেন। ঘরের ভিতর থরে থরে রাখা বাঁশের তৈরি সৌখিন জিনিস ও আসবাবপত্র। প্যাকেট করা কিছু সামগ্রী দেখিয়ে তিনি বলেন, ঢাকার হস্তশিল্প এক ব্যবসায়ী ইউরোপে পাঠানোর জন্য ৭০ হাজার টাকার পণ্য অর্ডার দিয়েছেন। কুরিয়ারে এসব পণ্য তিনি ঢাকা পাঠাবেন। তাঁর গ্রামে শখে তৈরি করা এক ব্যক্তির বাঁশের শিল্পকর্ম দেখে তিনি দেখে দেখে শিখেছেন। কিশোর বয়সে মারা যান বাবা। পরিবারের আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে কোনোদিন স্কুলেও যাননি। পরিবারের আর্থিক অসুবিধার জন্য তাঁকে অল্প বয়সে সংসারের হাল ধরতে হয়েছিল। চট্টগ্রাম নগরে কিছুদিন চায়ের দোকানে চাকরি করেছেন। তবে বেশিদিন করেননি এই চাকরি। খাগড়াছড়ি জেলায় কয়েক বছর হস্তশিল্প তৈরির একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরিও করেছেন তিনি। কিন্তু সেখান থেকেও চলে আসতে হলো। ১৩ বছর আগে চলে আসেন নিজের পল্লীতে। ঘরের উঠানে শুরু তাঁর কর্মজীবনের সাফল্য গাঁথা। ছোট বেলায় শখে তৈরি করা বাঁশের বানানো খেলনা থেকে এই শিল্প তাঁকে এতদূর নিয়ে আসবে ভাবতে পারেননি তিনি। প্রথম কয়েক মাসে বাঁশের নিত্য ব্যবহৃত জিনিসপত্রের সাড়া না মিললেও প্রতি মাসে অর্ডার বাড়তে থাকে। মাসে লাখ টাকার উপরে তাঁর অর্ডার আসে। করোনার কারণে গত বছর থেকে অর্ডার কমে আসে। তবে এক বছর ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুক পেজ খুলে তিনি পণ্যের অর্ডার নিচ্ছেন।
এক ছেলে ও এক মেয়ের জনক আবদুল মালেকের স্ত্রী বাঁশের শিল্পকর্ম তৈরিতে সহযোগিতা করছেন। এছাড়া তাঁর দুইজন সহযোগী রয়েছেন। তাঁর কাছে ৫০ থেকে ১০০০ টাকার বাঁশের তৈরি পণ্য পাওয়া যায়। সরকারি সহযোগিতা পেলে বাণিজ্যিকভাবে তিনি এই শিল্পের প্রসার বাড়াতে চান।
উপজেলার সহকারী যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা খাইরুল আলম বলেন, মালেকের বাঁশের তৈরি শিল্প এখন সবার নজড় কাড়ছে। তরুণদের জন্য তার এমন শিল্পকর্ম অনুকরণীয়। আমরা তাকে দিয়ে একটি প্রশিক্ষণ কর্মশালা করার পরিকল্পনা করছি। যাতে তার মতো অন্যরাও এভাবে সৃষ্টিশীল কাজে এগিয়ে আসতে পারে।