শীত মৌসুম। হিমেল ও শান্ত পরিবেশে জেলেরা নানা প্রজাতির মাছ আহরণ করছে সাগর থেকে। আর সে সব মাছকে নানাভাবে শুকিয়ে মজুদ কিংবা চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তুলে দিচ্ছেন ব্যবসায়ীদের হাতে। বর্তমানে বাঁশখালীর উপকূলীয় এলাকা সরলের কাহারঘোনা, পশ্চিম মিনজীরিতলা, শীলকুপের মনকিচর, শেখেরখীল ফাঁড়িরমুখ এলাকা, গন্ডামারা উপকূল, বাহারছড়া উপকূল, ছনুয়া এলাকাতে মাছ শুকাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন জেলেরা। জালিয়াখালী বাজারের পশ্চিমাংশ জলকদর খালের কাহারঘোনা এলাকায় সারি সারি মাছ শুকানোর দৃশ্য দেখে যে কারও মনে হতে পারে এ যেন এক ‘শুটকি মৎস্য নগরী’। কয়েকশ শ্রমিক এখানে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছে। তাদের একজন নুরুল ইসলাম। দীর্ঘ ১০ বছরের অধিক সময় ধরে যুক্ত এ কাজে। বর্তমানে দৈনিক ৭শ টাকা হিসেবে মজুরি পান। তিনি বলেন, যত বেশি রোদ থাকে তত বেশি মাছ তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায়। এতে তাদের কষ্টও কম হয়। কুয়াশা থাকলে অথবা বৃষ্টি হলে তাদের বেশি কষ্ট ও বেগ পেতে হয়। তবে যথানিয়মে রোদ পেলে ফাইস্যা মাছ দেড় থেকে দুই দিনে, ছুরি মাছ পাঁচ দিনে, লইট্যা মাছ পাঁচ দিনে, পোকা মাছ তিন দিনে শুকিয়ে যায়। এছাড়া অন্যান্য বড় মাছ শুকাতে একটু সময় বেশি লাগে। বেশ কয়েকজন জেলে জানান, সাগর থেকে জেলেদের আহরণ করা মাছ আধুনিক পদ্ধতিতে শুকানোর কোনো ব্যবস্থা না থাকায় প্রতিবছর সাগর উপকূলে লক্ষ লক্ষ টাকার মাছ নষ্ট হয়।
দক্ষিণ চট্টগ্রামের বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে অবস্থিত বাঁশখালীর কয়েক সহস্রাধিক জেলের একমাত্র জীবিকার কর্মস্থল বঙ্গোপসাগরে মৎস্য আহরণ। কিছু জেলে বহাদ্দার হয়ে মাছ ধরে, আর কিছু ব্যবসায়ী কাঁচা মাছ ক্রয় করে তা শুকিয়ে বিক্রি করে। বর্তমানে একদিকে মাছ আহরণ, অপরদিকে শুকাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন জেলেরা। অভিযোগ রয়েছে, অধিকাংশ ব্যবসায়ী কাঁচা মাছের সাথে ইউরিয়া সার, লবণ ও বিষাক্ত পাউডার মিশিয়ে কাঁচা মাছ শুকিয়ে শুঁটকি বানিয়ে থাকে।
তবে বাঁশখালীর সমুদ্র উপকূলের জেলেরা কোনো কিছুর মিশ্রণ ছাড়াই রোদের তাপে শুকিয়ে শুঁটকি তৈরি করেন বলে জানান। একাধিক ব্যবসায়ী বলেন, এখানকার জেলে ও ব্যবসায়ীরা মাছে কোনো ধরনের ইউরিয়া সার, লবণ ও বিষাক্ত পাউডার মিশায় না। তাই বাঁশখালীর শুঁটকি খুবই সুস্বাদু ও জনপ্রিয়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বাঁশখালীর জেলে পল্লীগুলোতে চট্টগ্রাম শহরের চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ ও চকবাজারের গুদাম মালিকরা আসেন হাজার হাজার মণ শুঁটকি ক্রয় করতে। বাঁশখালীর শুঁটকির মধ্যে লইট্যা, ছুরি, রূপচান্দা, ফাইস্যা, মাইট্যা, কোরাল, রইস্যা, পোহা ও চিংড়ি শুঁটকি অন্যতম। এসব শুঁটকি এখন রপ্তানি হচ্ছে দুবাই, কাতার, সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, ওমান, কুয়েত ও পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশে। এর ফলে দেশের অর্থনীতিতে যোগ হচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্বও।
বাঁশখালী উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান বলেন, বাঁশখালীর সাগর উপকূলে জেলেদের শুকানো শুটকিগুলো বেশ সুস্বাদু। কারণ তারা কোনো ধরনের ক্যামিক্যাল মেশায় না। সাগর থেকে আহরণ করা মাছ যেন নষ্ট না হয় সেজন্য আধুনিক পদ্ধতিতে শুকানোর কোনো ব্যবস্থা করা যায় কিনা সে ব্যাপারে চিন্তা–ভাবনা করার সময় এসেছে বলেও তিনি মত প্রকাশ করেন।